ববি প্রতিনিধি: বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী দেবশ্রী রায় গতকাল রবিবার (১৭ মার্চ) বিকাল ৪টার দিকে স্বামীর বাসায় তিনি আত্মহত্যা করেছেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহের জেরে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। দেবশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ছিলেন।
দেবশ্রীর গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার তালা উপজেলায়। তার স্বামীর বাড়ি খুলনা, কিন্তু মারা গেছেন স্বামীর কর্মস্থল বরগুনা সদর থানায়। প্রেমের সম্পর্কের পর ৩ মাস আগে ডিসেম্বর মাসে কঙ্কন রয়ের বিয়ে হয়। এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বরগুনা সদর থানার সাব-ইন্সপেক্টর আবুল কালাম আজাদ।
আত্মহত্যা করার আগে দেবশ্রী তার মাকে ফোন দিয়ে তার সাংসারিক জীবনের কষ্টের কথা জানান, তার স্বামী ভালো মানুষ নয় এবং তাকে প্রায়ই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতো বলে জানান। তিনি এই জীবন রাখবেন না বলেও জানান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দেবশ্রীর স্বামী পঙ্কজ সাড়ে চারটার দিকে তাদের ডেকে আনলে এসে জানালা দিয়ে দেখতে পান গলায় ফাঁস ঝুলে আছে। দরজা ভেঙে বের করে হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেবশ্রীর মা-বাবা জানান, তাকে তার স্বামী প্রায়ই নির্যাতন করতো। সে তাদেরকে বললেও তারা ওইভাবে বিষয়টি বুঝতে পারেননি এবং বুঝিয়েছেন। এর আগেও তাকে বহুবার মেরেছে। ১৭ তারিখে দেবশ্রীর নিবন্ধন পরীক্ষা ছিল। কিন্তু ওর স্বামী ওরে পরীক্ষা দিতে দেয়নি।এটা নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। তারপর গতকাল আবার টাকা-পয়সা নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। আমাদের মেয়ে তাকে ফোন করে এ বিষয়ে কান্নাকাটি করে জানিয়েছে এ জীবন আমি আর রাখবো না। আমরা ওকে বুঝিয়েছি কিন্তু ও এমন কাজ করবে ভাবতেও পারিনি।
এ বিষয়ে দেবশ্রীর স্বামী কঙ্কন রয় বলেন, দেবশ্রী এর আগেও একবার হারপিক খেয়েছিল। সে প্রায়ই ছোটখাটো বিষয় এমন পাগলামি করত। ও প্রায় অনেক দামিয় জিনিস-পত্র ও টাকা-পয়সা চাইতো। গতকাল আমাদের মাঝে বালা কিনে দেওয়া নিয়ে একটু মনোমালিন্য হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে এটা মিটমাট হয়ে যায় এবং স্বাভাবিকভাবেই কথা বলছিল। তারপর বিকাল ৩:৩০ এ আমি ব্যাচ পড়ানোর জন্য দোতলায় যাই। একই ভবনের নিচ তলায় আমরা থাকি। সেখান থেকে পড়িয়ে এসে সাড়ে চারটার দিকে দেখি দরজা বন্ধ। আমি ভেবেছি হয়তো ঘুমিয়েছে। তারপর ফোন দেই কিন্তু ফোন ধরে না। পরে জানালা দিয়ে দেখি দেবশ্রীর ঝুলে আছে। তখন আমি আমার সহকর্মী কামাল হোসেনসহ মানুষ ডাকি এবং দরজা ভেঙে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু ততক্ষণে দেবশ্রী আর নেই।
এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানার দায়িত্ব দিন সাব-ইন্সপেক্টর আবুল কালাম আজাদ জানান, পারিবারিক কলহ ও সাংসারিক অশান্তির কারণে সে আত্মহত্যা করেছে বলে তারা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছেন। এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। পোস্টমর্টাম রিপোর্ট বের হওয়ার এবং ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে।
দেবশ্রীর সহপাঠীরা জানান, ও খুবই ঠাণ্ডা ও লাজুক প্রকৃতির মেয়ে। দীর্ঘ ৮ বছর যাবৎ সদা হাস্যজ্বল ও মিশুক দেবশ্রীকে আমরা চিনি। এমন ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে না দেবশ্রী। এর পিছনে নিশ্চই বড় কোনো কারণ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক শাহাদাত হুসাইন দেবশ্রীর জানান, তার বাবার সাথে কথা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর তার স্বামীর গ্রামের বাড়ি খুলনা নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে তার ক্লাস প্রতিনিধি আমাকে জানিয়েছেন, পারিবারিক কলহের কারণেই সে আত্মহত্যা করেছে।
এসআই/
মন্তব্য করুন