এডুকেশন টাইমস ডেস্ক: গত ১৪ আগস্ট, বুধবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এমপক্সের সংক্রমণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। কারণ আফ্রিকার বিভিন্ন অংশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এ রোগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এটি বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এপির সূত্রে জানা যাচ্ছে, অত্যন্ত সংক্রামক এ রোগে চলতি বছর আফ্রিকায় ১৪ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ৫২৪ জন। এর প্রায় ৯৬ শতাংশ ঘটেছে শুধু একটি দেশেই। গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে এটির প্রাথমিক প্রাদুর্ভাবে অন্তত ৪৫০ জন মারা গেছেন।
এ রোগ আগে মাঙ্কিপক্স নামে পরিচিত ছিল। সে সময় এটি মধ্য ও পূর্ব আফ্রিকার বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে এটির নতুন ধরনটি যেভাবে দ্রুত ছড়াচ্ছে, সে বিষয়ে এবং এর উচ্চ মৃত্যুহার নিয়ে বিজ্ঞানীরা উদ্বিগ্ন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরস আধানম গেব্রেয়াসুস এ প্রসঙ্গে বলেন, আফ্রিকা ও এর বাইরের দেশগুলোতে এমপক্স আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ‘খুব উদ্বেগজনক’। তিনি বলেন, ‘এ রোগের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ও মানুষের জীবন বাঁচাতে একটি সমন্বিত আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য।’
চলুন, জেনে নেওয়া যাক এমপক্স কী, এটি কীভাবে ছড়ায় এবং এ রোগ প্রতিরোধে কী করণীয়।
এমপক্সের দুটি প্রধান ধরন—ক্লেড ১ ও ক্লেড ২। ২০২২ সালে এমপক্স নিয়ে ‘জরুরি স্বাস্থ্য অবস্থা’ ঘোষণা করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ক্লেড ২ ধরনের তুলনামূলক মৃদু সংক্রমণে জারি করা হয়েছিল এ জরুরি অবস্থা। তবে এখন আরও বেশি প্রাণঘাতী ক্লেড ১–এর সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। ইতিপূর্বে এ ধরনে সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে মৃত্যুর হার ছিল ১০ শতাংশ পর্যন্ত। এখন তা বাড়ছে।
২০২২ সালের সেপ্টেম্বরের দিকে এমপক্সের ভাইরাসের রূপবদল হয়। এই রূপান্তরে তৈরি হওয়া নতুন ধরনটির নাম ক্লেড ১বি। তখন থেকে এটি দ্রুত ছড়াচ্ছে। এটিকে একজন বিজ্ঞানী ‘এ পর্যন্ত সবচেয়ে বিপজ্জনক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
আগেই বলেছি, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোতে অন্তত ৪৫০ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৩ হাজার ৭০০–এর বেশি। পরে এ রোগ বুরুন্ডি, মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র, কেনিয়া, রুয়ান্ডাসহ আফ্রিকার আরও কয়েকটি দেশে শনাক্ত হয়েছে।
আক্রান্ত ব্যক্তির নিবিড় সংস্পর্শ, যেমন শারীরিক সম্পর্ক, ত্বকের স্পর্শ, এমনকি খুব কাছে থেকে কথোপকথন বা শ্বাস–প্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে এমপক্স।
এ রোগের উপসর্গ ফ্লুর মতো। এতে ত্বকে ক্ষত তৈরি হয় এবং তা প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। আক্রান্ত ১০০ জনের মধ্যে মারা যেতে পারেন চারজন।
মাঙ্কিপক্সের উল্লিখিত লক্ষণগুলো দেখা দিলে বা শরীরে ফুসকুড়ি–জাতীয় কিছু হলে তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে আইসোলেশনে রাখা উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি সম্প্রতি যাঁদের সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁদের জানাতে হবে। প্রাথমিকভাবে ঘরেই আইসোলেশনে বা জনসংস্পর্শ থেকে দূরে যেতে পারে। ‘মাঙ্কিপক্স’ যেহেতু মূলত গুটিবসন্ত বা চিকেনপক্স গোত্রের রোগ, তাই বেশির ভাগ রোগীই সুষম খাবারদাবার গ্রহণসহ পরিমিত বিশ্রাম নিলে চিকিৎসা ছাড়াই দু-এক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। যদিও এটি গুটিবসন্তের চেয়ে কম মারাত্মক, তবু এই রোগ করোনার মতো মহামারি আকারে ছড়ানোর আগেই আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। পাশাপাশি মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে, তবে রোগী যেন কারো সংস্পর্শে না আসেন, সেদিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।
এ রোগের সংক্রমণ কমিয়ে আনতে ভ্যাকসিন বা টিকার সরবরাহ ব্যাপকভাবে বাড়াতে উদ্যোগ নিচ্ছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ জন্য নিজেদের ইমার্জেন্সি ফান্ড তথা জরুরি কোষাগার থেকে ১.৪৫ মিলিয়ন বা ১৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার বরাদ্দ দিয়েছে। পাশাপাশি তারা জানিয়েছে, প্রাথমিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রায় ১৫ মিলিয়ন বা প্রায় দেড় কোটি ডলার প্রয়োজন।
পাশাপাশি মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে বর্তমান প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে সতর্ক করেন আফ্রিকা সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের প্রধান জ্যঁ কেসিয়া। তিনি বলেন, ‘এ হুমকি রোধে ও এটি নির্মূল করতে আমাদের অবশ্যই সক্রিয় ও আগ্রাসী হতে হবে।’
এসএস/
মন্তব্য করুন