এডুকেশন টাইমস
২৪ আগস্ট ২০২৪, ১০:৫৮ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

শিক্ষার্থীদের রেজাল্টে গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ হাবিপ্রবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে

হাবিপ্রবি প্রতিনিধিঃ দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের খাতা মূল্যায়নে বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে।

অভিযুক্ত শিক্ষক ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান সজীব কুমার রায়। তিনি নিজের ব্যক্তিগত সর্ম্পকের ওপর নির্ভর করে শিক্ষার্থীদের নম্বর বাড়িয়ে এবং কমিয়ে দিতেন এমন গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

নিজের অনুগত শিক্ষার্থীদের নাম্বার বাড়িয়ে দেয়া এবং ক্লাসে ভালোভাবে না পড়ানোর প্রতিবাদ করা শিক্ষার্থীদের নাম্বার কমিয়ে দেয়ার অভিযোগ জমা পরেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান সজীব কুমার রায়ের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, বিভাগের ৬ষ্ঠ সেমিস্টার (লেভেল ৩ সেমিস্টার ২) পর্যন্ত সর্বোচ্চ সিজিপিএ নিয়ে বিভাগে প্রথম হওয়া শিক্ষার্থীকে উক্ত শিক্ষকের ৪টি কোর্সের দুইটিতে ২.৫০ এবং বাকি দুইটিতে যথাক্রমে ২.৭৫ এবং ৩.০০ দিয়েছেন। যদিও একই সেমেস্টারের বাঁকি কোর্সগুলোতে উক্ত শিক্ষার্থী আশানুরূপ জিপিএ পেয়েছে বলে জানিয়েছে। একই ব্যাপার ঘটেছে বিভাগের মেধাতালিকার প্রথমদিকে থাকা আরো বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে। এছাড়াও বিভাগের চেয়ারম্যানের ক্ষমতা ব্যবহার করে সজীব কুমার রায় সপ্তম সেমিস্টার (লেভেল ৪ সেমেস্টার ১) এ দুইটি থিওরি কোর্স এবং ২টি ল্যাব কোর্স মিলিয়ে একাই মোট ৪টি কোর্স নিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে সরেজমিনে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায় বিস্তর অভিযোগ। পড়ানোর মান নিয়ে আওয়াজ তোলা, ক্লাসে ভালোভাবে না পড়িয়ে শিক্ষার্থীদের দিয়ে প্রেজেন্টেশন নিয়ে কোর্স শেষ করা, টেকনিক্যাল কোর্সে শিক্ষার্থীদের চাহিদার বিপরীতে ফ্যাকাল্টির এক্সপার্ট শিক্ষককে বাদ দিয়ে পদের প্রভাব খাটিয়ে নিজে কোর্স নেওয়াসহ বেশ বিছু অভিযোগ করেছে ঐ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

তারই পরিপ্রেক্ষিতে একই শিক্ষকের অধীনে অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষায় না বসার দাবি জানিয়ে ২২ আগস্ট অনুষদের ডীন বরাবরও অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। পরে যথাযথ তদন্ত এবং অন্য শিক্ষকের দ্বারা বিভাগের সব খাতা পুনঃমূল্যায়নের আশ্বাস দেন অনুষদের ডীন।

একই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ইচ্চাকৃত নাম্বার কমিয়ে দেয়ার অভিযোগ এনে ২৪ জুন বিভাগটির ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান জেসি রেজিস্ট্রার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন। পরে শিক্ষকদের কর্মবিরতি এবং এর পরপরই শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় তদন্তের কাজ আর আগায়নি। এদিকে এই অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য ছয় সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।

নুসরাত জাহান জেসি অভিযোগ করে সাংবাদিকদের বলেন, রেজাল্ট যেহেতু একটি সেনসেটিভ বিষয় তাই এতদিন কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। তবে বর্তমানে দেশে পরিবেশ ভালো হওয়ায় সবাই কথা বলার সাহস পাচ্ছে। আমরা লেভেল-২ থেকে দেখে আসছি যে তিনি তার সাথে শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত সম্পর্কের নির্ভর করে শিক্ষার্থীদের কম-বেশি নাম্বার দেন৷ কিন্তু বিষয়টি লেবেল ৪-১ এ সীমা অতিক্রম করায় এর প্রেক্ষিতে ইতিপূর্বে রেজিস্ট্রার বরাবর এবং গতকাল (বৃহস্পতিবার) ডীনের মাধ্যমে প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমাদের দাবি ছিলো, আমাদের সাথে হওয়া অন্যায়ের প্রতিকার না হওয়া পর্যন্ত আমরা পরীক্ষায় বসবো না।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সোশ্যাল সাইন্স এ্যান্ড হিউমিনিটিস অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. রোজিনা ইয়াসমিন লাকি বলেন, এর আগেও একবার অভিযোগ পেয়েছিলাম৷ সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখার জন্য ছয় সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। যথাযথ তদন্ত করা হবে।

শিক্ষার্থীরা আসন্ন পরীক্ষায় ওই শিক্ষকের কোর্সের পরীক্ষা খাতা মূল্যায়ন নিয়ে আশঙ্কা করছে, এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের মূল্যায়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলে এক্সাম কন্ট্রোলার বরাবর এপ্লিকেশন দিলে এর সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত ওই শিক্ষক আসন্ন পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করার সুযোগ পাবেন না।

অভিযোগ জানিয়ে বিভাগের একই ব্যাচের উম্মে ইলমা ফেরদৌস সাংবাদিকদের বলেন, স্যার পরীক্ষার খাতা দেখার সময় বৈষম্য করে থাকেন৷ পছন্দের শিক্ষার্থীকে নাম্বার বাড়িয়ে এবং যাদেরকে তিনি পছন্দ করেন না তাদের নম্বর কমিয়ে দেন তিনি। ডীন ম্যাম অভিযোগ খতিয়ে দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে এই শিক্ষকের অধীনেই আবার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা দিতে হবে এবং তিনি আমাদের খাতা মূল্যায়ন করবেন, এ বিষয়টি নিয়ে আমরা শঙ্কায় আছি।

এছাড়াও শিক্ষার্থীরা সাংবাদিকদের বলেন, সজীব স্যার ঠিকমতো পড়ান না। তিনি ক্লাসে এসে আজগুবি গল্প বলেন। কোনো বিষয়ে কোশ্চেন করলে স্যার সেই বিষয়টাই ঐ শিক্ষার্থীকে হোম ওয়ার্কে দিয়ে দেন৷ এসব নিয়ে আমরা যাতে সমালোচনা না করি সেজন্য স্যার তার অনুগতদের দিয়ে আমাদের সিজি কমিয়ে দেবার হুমকিও দেন। যার প্রমাণ আমাদের বিগত সেমিস্টারগুলোর সাথে বর্তমান পরীক্ষার রেজাল্ট।

অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে সজীব কুমার রায়ের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরবর্তীতে মন্তব্য করবেন বলে জানান।

এসএস/

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হাসিনা ও তার দোসরদের পুনর্বাসনের প্রশ্নই আসে না: সারজিস

ইবি মফিজ লেকের নাম হবে ‘মীর মুগ্ধ সরোবর’ – উপাচার্য

নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করবে মিত্র যুক্তরাজ্য

জবির মার্কেটিং অ্যালামনাইয়ের সভাপতি সৈকত , সম্পাদক রাজ্জাক

১৮ বছর পর প্রকাশ্যে নবীনদের বরণ করল হাবিপ্রবি শাখা ছাত্রশিবির

ওয়ান ব্যাংকে নিয়োগ, প্রবেশনে বেতন ৫৫,০০০ টাকা

ছাত্রশিবির শতভাগ মাদকমুক্ত: শিবির সেক্রেটারি

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ-আহতদের বিষয়ে মাউশির নতুন নির্দেশনা

মেডিকেল ভর্তি বিজ্ঞপ্তি সম্পর্কে যা জানা গেল

ববিতে মানবধিকার সংগঠন ‘সোচ্চার স্টুডেন্টস’ নেটওয়ার্কের যাত্রা শুরু

১০

আবারো মহাসমাবেশের ডাক চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশীদের

১১

পিকনিকে গিয়ে প্রাণ হারালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী

১২

জাবিতে জুলাই হামলার তদন্ত কমিটির প্রধানকে প্রাণনাশের হুমকি

১৩

প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ১০টি বাসে করে শিক্ষা সফরে নিয়ে গেল রাবি ছাত্রশিবির

১৪

সিভিল এভিয়েশন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বড় নিয়োগ, দেবে আবাসন ও নগর ভাতা

১৫

ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি

১৬

মেডিকেল ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হবে যেদিন

১৭

জামায়াতে ইসলামীর ভারত-বিরোধিতা ধারণা ভিত্তিহীন: ডা. শফিকুর রহমান 

১৮

আগোরায় চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিনসহ দেবে নানান সুবিধা

১৯

ববির ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের নাইট শর্টপিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন একাদশ ব্যাচ

২০