এডুকেশন টাইমস
১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৯:২১ অপরাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

রাজনীতির মওলানা ভাসানী, মৃত্যুবার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা

মোহাম্মদ এনামুল হোসেন:

মজলুম জননেতা হিসেবে সুপরিচিত মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এই দেশ বরেণ্য নেতা মৃত্যুবরণ করেন। তাকে টাংগাইল জেলার সদর উপজেলার উত্তর-পশ্চিমে সন্তোষ নামক স্থানে পীর শাহজামান দীঘির পাশে সমাধিস্থ করা হয়।

দেশের মহান এই জাতীয় নেতার সম্পর্কে জানার জন্য শতবছরের ইতিহাস নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের প্রাথমিক সূচনা মূলত ঘটেছিল ব্রিটিশ ভারতে।

তিনি তাঁর রাজনৈতিক তৎপরতাকে এগিয়ে নিয়েছিলেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের দেশীয় সহযোগী জমিদার-মহারাজাদের বিরুদ্ধে এবং কৃষক-প্রজাদের পক্ষে আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। ১৯২৭-এর দশকে জমিদার-মহারাজা বিরোধী কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্ব, আসাম প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সভাপতি হিসেবে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব, বৃহত্তর সিলেট পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশের অংশ তৈরিতে চেষ্টা। এছাড়াও  ১৯৪৯ সালে পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী দল আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা। ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত দলটির সভাপতি হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন অর্জনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের কেন্দ্রে ও পূর্ব পাকিস্তানে সরকার গঠন করেন তিনি।

তবে, দলের ক্ষমতাসীন নেতারা প্রদেশের স্বার্থবিরোধী অবস্থানে চলে গেলে মওলানা ভাসানী পশ্চিম পাকিস্তানকে ‘আসসালামু আলাইকুম’ জানিয়ে স্বাধীনতার পক্ষে প্রচারণা শুরু করেন।

স্বাধীনতার কথা বলা ছিল যেখানে রাষ্ট্রদ্রোহিতাসম। অপরাধ, সেখানে দুর্দান্ত সাহসী নেতা মওলানা ভাসানী পরোয়া করেননি কোনো কিছুকেই। মাতৃভূমির।স্বার্থে নিজের হাতে গড়া আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- (ন্যাপ) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বাধীনতামুখী স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়েছেন।

১৯৬৯-এর যে গণঅভ্যুত্থানের অনেক আগে থেকে কারাগারে থাকায় শেখ মুজিবুর রহমানসহ বহু নেতার পক্ষে যখন কোনো ভূমিকা পালন ছিল অসম্ভব তখন সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানকে দাঁড় করিয়েছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। যে অবস্থান জনগণকে বানিয়ে তুলেছিল স্বাধীনতাকামী।

১৯৭০ সালের ১২ই নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ-এর) দক্ষিণাঞ্চলে আঘাত হানা অত্যন্ত তীব্র ভোলা ঘূর্ণিঝড়ে সর্বকালের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগে যখন প্রায় ৫ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। তখন পাকিস্তানের সামরিক সরকার এমন ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরও জরুরি ত্রাণকার্য পরিচালনায় গড়িমসি করতে থাকে। তখন  খাবার–পানির অভাবে ঘূর্ণিঝড়ের পরও যারা বেঁচে ছিল তারাও মারা যায় । ঠিক সেই সময় সব দল যখন পাকিস্তানী নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত, ব্যথিত ও ক্ষুব্ধ নেতা মওলানা ভাসানী পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অদক্ষতার অভিযোগ তোলেন এবং অবিলম্বে তার পদত্যাগ দাবি করে তখন সরাসরি স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার ডাক দিয়েছিলেন। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একটি প্রাকৃতিক ঘটনা একটি দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন।

১৯৭১ সালের মার্চে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করার প্রতিবাদে স্বাধীনতার আহবানমুখে সোচ্চার ভাসানী জনগণের প্রতি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার ডাক দিয়েছিলেন। ২৫ মার্চ গণহত্যার অভিযান শুরু করার পর পাকিস্তানের সেনাবাহিনী সন্তোষে মওলানা ভাসানীর বাড়ি জ্বালিয়ে দিলে তিনি আসাম দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন।

মুজিবনগর সরকার গঠিত সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতি হিসেবেও তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রস্তুতি পর্ব থেকে বিজয় অর্জন পর্যন্ত দীর্ঘ সংগ্রামের প্রতিটি ক্ষেত্রে মওলানা ভাসানী থেকেছেন অগ্রবর্তী অবস্থানে।

স্বাধীনতার পরও দেশপ্রেমিকের ভূমিকা অব্যাহত ছিল। প্রথম আওয়ামী লীগ সরকারের শোষণ, লুণ্ঠন ও ভারতমুখী নীতি ও কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সবার আগে প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন তিনিই । ভারতের সম্প্রসারণবাদী কর্মকান্ড ও পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও তিনি সোচ্চার থেকেছেন। এমনকি মৃত্যুর মাত্র ছয় মাস আগে (১৬ মে, ১৯৭৬), প্রায় ৯৬ বছর বয়সে ঐতিহাসিক ফারাক্কা মিছিলের নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন এই জাতীয় নেতা।

জাতির দুর্ভাগ্যে যে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ২০১৩ সালের শুরুতে স্কুলের পাঠ্য বই থেকে মওলানা ভাসানীর জীবনী বাতিল করেছে। যার ফলে শিশু-কিশোররা মহান এই নেতার সংগ্রাম ও অবদান সম্পর্কে অনেকটাই জানতে পেরে উঠেনি।

আশা করা যায়, ছাত্রজনতার গণ-অভুত্থানের পর যে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসীন হয়েছে এবং ভবিষ্যতে জনগনের নির্বাচিত যে সরকার ক্ষমতায় আসীন হবে তারা উপমহাদেশের এই অন্যতম রাজনৈতিক সূর্যকে তাঁর প্রাপ্য সম্মানের স্থান ফিরিয়ে দেবে।

 

লেখক: মোহাম্মদ এনামুল হোসেন, শিক্ষার্থী, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

 

/ইএইচ

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ববিতে মানবধিকার সংগঠন ‘সোচ্চার স্টুডেন্টস’ নেটওয়ার্কের যাত্রা শুরু

আবারো মহাসমাবেশের ডাক চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশীদের

পিকনিকে গিয়ে প্রাণ হারালেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী

জাবিতে জুলাই হামলার তদন্ত কমিটির প্রধানকে প্রাণনাশের হুমকি

প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ১০টি বাসে করে শিক্ষা সফরে নিয়ে গেল রাবি ছাত্রশিবির

সিভিল এভিয়েশন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বড় নিয়োগ, দেবে আবাসন ও নগর ভাতা

ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি

মেডিকেল ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হবে যেদিন

জামায়াতে ইসলামীর ভারত-বিরোধিতা ধারণা ভিত্তিহীন: ডা. শফিকুর রহমান 

আগোরায় চাকরি, সাপ্তাহিক ছুটি ২ দিনসহ দেবে নানান সুবিধা

১০

ববির ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের নাইট শর্টপিচ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন একাদশ ব্যাচ

১১

সকল টিভি চ্যানেলে ‘জুলাই অনির্বাণ’ ভিডিওচিত্র প্রচারের উদ্যোগ 

১২

নিটল মটরস লিমিটেডের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ

১৩

এইচএসসি পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করছে ইমদাদ-সিতারা খান ফাউন্ডেশন

১৪

পুতিনের তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হুঁশিয়ারি  

১৫

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তীব্র প্রতিরোধে শেখ হাসিনার বিদায় ত্বরান্বিত হয়: প্রেস সচিব

১৬

সিওয়াইবি জবি শাখার নেতৃত্বে ইস্রাফিল ও লাভলু

১৭

টাইমস হায়ার এডুকেশন র‍্যাংকিংয়ে বাংলাদেশে ২য় স্থানে চবি

১৮

কুবিতে সিওইউ সাইক্লিস্টের নতুন নেতৃত্বে মামুন- রাকিন

১৯

শিক্ষা ও গবেষণায় সৌদি ফাউন্ডেশনের বৃত্তি, দেবে ৬০ লক্ষাধিক টাকা

২০