রাবি প্রতিনিধি:
পার্থেনিয়াম, সাদা ফুল ও চন্দ্রমল্লিকার ন্যায় পাতাবিশিষ্ট একটি আগাছা। দেখতে সাধারণ আগাছার মতো মনে হলেও এর আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত পুরোটাই ক্ষতিকর। বিষাক্ত মৃত্যুদূত এই নীরবঘাতক আগাছাটি তার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ক্যাম্পাসজুড়ে। যা আতঙ্কের বিষয় বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের সামনে, বিনোদপুর গেটের পাশে, জিমনেসিয়ামের আশেপাশে, নবনির্মিত শেখ হাসিনা হলের সামনে, ডরমিটরির পাশে, মতিহার হল, বঙ্গবন্ধু হল, লতিফ হলসহ প্রায় প্রতিটি হলের আশেপাশে এই আগাছাটিতে ভরে গেছে। একাডেমিক ভবন এলাকাতেও এর উপস্থিতি রয়েছে। এমনকি শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলসমূহের রুমের পাশেও শিকড় গেড়েছে এই বিষাক্ত আগাছাটি।
জানা যায়, বিষাক্ত এই আগাছাটির ফুলের রেণুতে রয়েছে ‘পার্থেনিন,’ নামক ‘সেস্কুটার্পিন ল্যাকটোন’ জাতীয় বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ। ফলে নিশ্বাসের সঙ্গে নাকে প্রবেশ করলে জ্বর, হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি হয় এবং ক্ষতস্থানে রক্তের সাথে মিশে চর্মরোগের সৃষ্টি করে। এছাড়া যাদের অ্যালার্জি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এর রস তাদের চামড়ায় লাগলে সেখানে ক্যান্সার হতে পারে। এটি মাটিতে নাইট্রোজেন আবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়াকেও ব্যাহত করে।
একটি পার্থেনিয়ামের আগাছা থেকে জন্ম নিতে পারে প্রায় ৪-৫ হাজার আগাছা। তাছাড়া এর বীজ হালকা ও প্যারাসুটের ন্যায় হওয়ার কারণে দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ফলে এর বংশবিস্তারও দ্রুত হয়। আগাছাটির ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে অবগত থাকলেও সেগুলো কাটার ব্যাপারে বরাবরের মতোই উদাসীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এদিকে আগাছাটির ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে অবগত নন অধিকাংশ শিক্ষার্থী। দেখা যায়, ক্রিকেট ও ফুটবল মাঠে খেলার সময় ঝোপের ভেতর দিয়ে অনায়াসেই চলাচল করছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে নিজের অজান্তেই বাড়ছে চর্মরোগ, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ক্যান্সারের মতো জটিল রোগসমূহে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত বলেন, এর আগে আগাছাটি সম্পর্কে অবগত ছিলাম না। অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও তেমন অবগত নয়। যার কারণে হয়তো নির্দ্বিধায় আমরা সেগুলোর সংস্পর্শে চলে যাচ্ছি এবং বিভিন্ন ধরনের রোগের ঝুঁকিতে পড়ছি। এই বিষাক্ত আগাছাগুলো অতিদ্রুত পরিষ্কারের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আজিজুর রহমান বলেন, শুধু ক্যাম্পাস নয় বিষাক্ত ও ভয়ানক আগাছা পার্থেনিয়াম দিয়ে ভরে গেছে সারা দেশ। মানব স্বাস্থ্য, পশু স্বাস্থ্য, কৃষি ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে। নীরবে বিষ ছড়িয়ে যাচ্ছে এ আগাছাটি। ইতোমধ্যে পার্থেনিয়ামের ফুল ফুটতে শুরু করেছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরবর্তী বছরের মধ্যে এর বীজের মাধ্যমে আরও ব্যাপকভাবে বিস্তার ঘটবে।
তিনি আরো বলেন, পার্থেনিয়াম নিয়ে জনসচেতনতা তৈরি ও এর বিস্তার রোধে করণীয় নির্ধারণে রাবিতে খুব শীঘ্রই একটি সেমিনার আয়োজনের চিন্তা করছি। আমাদের ক্যাম্পাসের অধিকাংশ শিক্ষক শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে কিছু জানেন না। বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের সম্মতিক্রমে প্রশাসন থেকে যাতে এগুলোকে দূর করা যায় সে পদক্ষেপ নেওয়া হবে খুবই দ্রুত।
বিশ্ববিদ্যালয় উপ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, বিষাক্ত এই আগাছা সম্পর্কে আমরা অবগত আছি। যারা পরিবেশ নিয়ে কাজ করে তাদের সাথে সমন্বয় করে আমরা খুব দ্রুত প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। ক্যাম্পাস থেকে যাতে এটিকে সমূলে উৎপাটন করা যায় সে ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া সচেতনতা তৈরিতে আমরা ক্যাম্পাসে প্রচার প্রচারণা চালাব।
আরএন/তানভীর খান তরুন
মন্তব্য করুন