এডুকেশন টাইমস
৯ জুলাই ২০২৪, ১১:২৩ অপরাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

মুক্তিযোদ্ধা কোটাকে কেন বংশগত অধিকার বানানো হচ্ছে: মুক্তিযোদ্ধার নাতির প্রশ্ন

রাবি প্রতিনিধি:

আপনারা যদি সুযোগ সুবিধা দিতেই চান তাহলে মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাসহ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা বাড়ান। যেসকল মুক্তিযোদ্ধাদের থাকার বাড়িঘর নাই তাদের বাড়িঘর নির্মাণে সাহায্য করুন। তাদের জীবন মান উন্নয়নে সাহায্য করুন। এটা ছাড়া কেন এই মুক্তিযোদ্ধা কোটাকে বংশগত অধিকার বানানো হচ্ছে? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এমনই উন্মুক্ত প্রশ্ন ছুঁড়েছেন এক মুক্তিযোদ্ধার নাতি। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী।

ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান। আমার নানা একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার নানার ছেলে মেয়ে মোট ৬ জন। পরবর্তীকালে তাদের বিবাহের পর এই ৬ জনের মোট ছেলেমেয়ের সংখ্যা ১২ জন (নাতি, নাতনি)। তাহলে মুক্তিযোদ্ধা ১ জন কিন্তু তার কোটা ব্যবহার করতে পারবে প্রায় ১৮-১৯ জন! আরও মজার বিষয় হচ্ছে এই যে ৬টি পরিবারের কথা বললাম, তার কোনোটাই বর্তমান সময়ে এসে আর্থিকভাবে বা অন্য কোনোভাবেই আমার নানার উপরে নির্ভরশীল নয়। আবার মুক্তিযুদ্ধের ৫৪-৫৫ বছর পরে এসে এটা বলারও কোনো সুযোগ নেই যে মুক্তিযুদ্ধের কোনো প্রভাব এই ৬টি পরিবারের উপরে এখনো রয়ে গেছে, যার ফলে তারা তাদের ছেলেমেয়েকে ঠিকমতো পড়াশোনা, সুযোগ সুবিধা দিতে পারে নাই, ফলে তারা অনগ্রসর। তাহলে তাদের ছেলেমেয়েদের কোটা ব্যবহারের যৌক্তিকতা আসলে কোথায়?

আমার নানী মারা গেছেন বিগত ৫-৭ বছর আগে। যেহেতু আমাদের সবগুলো পরিবারই প্রায় আলাদা, সুতরাং তখন আমার নানার মনে হয় বৃদ্ধ বয়সে চলাচলের সুবিধার জন্য তার আরও একটা বিয়ে করার প্রয়োজন এবং তিনি সেটা করেন। এতে আমাদের কোনো সমস্যা ছিল না। আগেই বলেছি আমাদের সবগুলো পরিবারই আলাদা। সুতরাং এখন আমার নানা এবং নানীর আলাদা একটা সংসারই বলা যায়। এইবার আসল কথায় আসা যাক, এই বৃদ্ধ বয়সে এসে অন্য কোনো আয়ের উৎস না থাকার পরেও আমার নানা কিন্তু তার পরিবারের কোনো ছেলে মেয়ের উপর আর্থিকভাবে নির্ভরশীল নয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তার বীরত্বের সামান্য প্রতিদান স্বরূপ যে সুযোগ সুবিধাগুলো সরকার তাঁকে দিয়েছে এবং পেনশনের কিছু টাকায় সে বেশ ভালোভাবেই জীবন যাপন করছে।

তিনি আরো লিখেছেন, আসলে মুক্তিযুদ্ধটা করেছিল তো আমার নানা, তাহলে আপনি যদি সুযোগ সুবিধা দিতেই চান, তাহলে সেটা তো আসলে তারই প্রাপ্য। আপনারা চাইলে তাদের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা আরো কিছু বাড়ান, যারা মুক্তিযোদ্ধা তাদের থাকার বাড়িঘর নাই তাদের বাড়ি ঘর নির্মাণে সাহায্য করুন। তাদের জীবন মান উন্নয়নে সাহায্য করুন। এটা ছাড়া কেন এই মুক্তিযোদ্ধা কোটাকে বংশগত অধিকার বানানো হচ্ছে?

আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান, আমার শরীরে একজন মুক্তিযোদ্ধার রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে, আমার নানা একজন দেশপ্রেমিক এতে আমার কোনো সন্দেহ নেই, এর মানে তো কখনোই এটা প্রকাশ করে না যে তার দুই প্রজন্ম পরে এসে আমার মধ্যেও সেই একই দেশপ্রেম বিদ্যমান, আর আমার যে বন্ধু আজ তার অধিকার আদায়ের জন্য কোটাবিরোধী আন্দোলন করছে সে দেশপ্রেমিক না, তার শরীরে হয়তো মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কোনো অপশক্তির রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে। কতই না মজার ব্যাপার!

যারা এখনো কোটার জন্য আন্দোলন করছেন, যারা মনে করছেন এটা আপনাদের বংশগত অধিকার, ভাই আপনাদের বিবেককে প্রশ্ন করুন তো একবার। আপনার বাবা/নানা/দাদা এই দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য নিজেদের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছিল। তারা কিন্তু কখনো এটা ভেবে যুদ্ধ করে নাই যে যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তারা কোনো বিশেষ সুবিধা পাবে। কারণ তারা তো জানতোই না যে যুদ্ধে তাদের আসলেই জয় হবে নাকি পরাজয়। তারা তাদের জীবন দিয়ে রক্ত দিয়ে এটা প্রমাণ করে গেছে যে তারা প্রকৃত যোদ্ধা। তাহলে সেই একই পরিবারের সন্তান হয়ে আপনাদের কেন কলেজে ভর্তি, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি, সরকারি চাকরি এসব ক্ষেত্রে কোটার বা সুবিধার প্রয়োজন? বর্তমান সময়ে এসে যদি দাবি করেন যে আপনারা অনগ্রসর, তাহলে ভাই বাংলাদেশে আরো লাখ লাখ পরিবার আছে যারা অর্থের অভাবে ছেলে মেয়েকে ভালো লেখাপড়া সুযোগ-সুবিধা দিতে পারে না তাদের সম্পর্কে কী বলবেন?

আমি কখনোই এটা বলতে চাচ্ছি না যে যারা কোটা ব্যবহার করে তারা মেধাবী না। আপনারাও যথেষ্ট মেধাবী, প্রয়োজন শুধু আরেকটু হার্ডওয়ার্ক, তাহলে আর কোটার কোনো প্রয়োজন হবে না আশা করি।

নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি লিখেছেন, কলেজে ভর্তি হওয়ার সময় কম্পিউটার দোকানীর কথা শুনে আমি আমি না বুঝেই কোটায় আবেদন করি। তখন অতটা বুঝতাম না। তারপর থেকে আর কোনো পরীক্ষাতেই আমি কোটা ব্যবহার করিনি। এখন আবার অনেক যুক্তিবাদী বের হবে, যারা এসেই বলবে প্রমাণ দাও। আপনাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রণ, আপনার বাড়ি বাংলাদেশের যে প্রান্তেই হোক আপনি আমার বিশ্ববিদ্যালয় এসে, সকল ডকুমেন্ট চেক করে যদি এটা প্রমাণ করতে পারেন যে আমি কোটায় ভর্তি হয়েছি, তাহলে আপনার যাওয়া আসা এবং রাজশাহীতে থাকা খাওয়া সকল ব্যয়ভার আমি বহন করব।

কোটা সংস্কারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটা নয়, পোষ্য কোটাসহ সকল ধরনের কোটার বর্তমান সময়ে এসে গ্রহণযোগ্যতা সাপেক্ষে যুক্তিসঙ্গত সংস্কার দাবি করছি। দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীদের সঠিক মূল্যায়ন না করতে পারলে, কখনোই তাদের আটকে রাখতে পারবেন না। মুক্তিযোদ্ধাদের যেরকম প্রাপ্ত অধিকার আছে, ঠিক তেমনি বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষেরই নাগরিক হিসাবে একটা অধিকার আছে। আমরা এখানে কখনোই দুইটা আলাদা গ্রুপে বিভক্ত হিসেবে দেখতে চাই না। সকল দিক বিবেচনা করে দেশের সকল নাগরিকের সমান অধিকার নিশ্চিত করা হোক। আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই।

এএকে /

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে বাধা নেই: হাইকোর্ট

শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ বন্ধ ঘোষণা

বর্ণাট্য আয়োজনে আয়োজনে ইবির ৪৬ তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন

মোল্লা কলেজের ৩ শিক্ষার্থী নিহত, দাবি কলেজ কর্তৃপক্ষের

জবিতে চূড়ান্ত ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, জানা গেলো খরচসমূহ

জবি এআইএস ডিবেট প্রিমিয়ার লীগ ২০২৪ এর ফাইনাল অনুষ্ঠিত

জাবিতে শিক্ষার্থী মৃত্যুর মামলায় অভিযুক্ত রিকশাচালকসহ ৩ জনকে পুলিশে সোপর্দ

শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘিরে হামলা-পাল্টা হামলা; নেপথ্যে কী ছাত্রদল?

বুটেক্সের হলে ছাত্রলীগ, প্রতিবাদ করায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা

সোমবার ঢাকা কলেজের সব ক্লাস বন্ধ

১০

মেঘনা গ্রুপে আকর্ষণীয় বেতনে চাকরির সুযোগ

১১

বুটেক্স শিক্ষার্থীদের উপর ঢাকা পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের হামলা, আহত অর্ধ শতাধিক

১২

পলিটেকনিক-বুটেক্স শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, আহত ২৮ জন ঢামেকে

১৩

বুটেক্স ও ঢাকা পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ

১৪

জাবিতে প্রাণরসায়ন ছাত্র সংসদের ভিপি বনি আমিন, জিএস ইমন

১৫

শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র পুরান ঢাকা

১৬

ববি শিক্ষার্থী রবিনের ‘ষোল আনা’

১৭

ওসির কথায় উজ্জীবিত হয়ে থানায় পিস্তল নিয়ে এলো চার শিশু

১৮

কুরআন দিয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ বেরোবি দাওয়াহ সোসাইটির 

১৯

যবিপ্রবিতে বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে রিসার্চ সেলের সেমিনার

২০