spot_img

বিষন্ন হাসিমুখে চ্যাপলিন: আজ তাঁর জন্মদিন 

এসম্পর্কিত আরো পড়ুন

শাকিল শাহরিয়ার: নির্বাক সংলাপ ও হাস্যকর অভিনয়ের জন্য বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় এক নাম চার্লি চ্যাপলিন। কমেডি ঘরনার সিনেমা পছন্দ করেন অথচ চার্লি চ্যাপলিনের নাম শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। পৃথিবীর মানুষকে হাসাতে হাসাতে লুটোপুটি খাইয়ে ইতিহাসের সেরা কৌতুক অভিনেতা এবং নির্মাতা হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠেন তিনি। সেই মানুষটির নাম চার্লি চ্যাপলিন। সে সময়কার দুঃখী মানুষগুলো যেনো আশ্রয় খোঁজা শুরু করলো চ্যাপলিনের কাছে। চ্যাপলিন নির্বাক ছবি করতেন। যার ছবিতে কিছু শোনা যায় না। থাকে শুধু কিছু তামাশা। সেই তামাশার অতল গভীরে লুকিয়ে থাকে মানুষের জীবনের হাহাকার, রূঢ় বাস্তবতার বিরুদ্ধে মানুষের অবিরাম যুদ্ধ।

নির্বাক চলচ্চিত্র যুগের অত্যন্ত প্রভাবশালী চ্যাপলিন নিজের ছবিতে নিজেই অভিনয়, সংলাপ রচনা, পরিচালনা ও প্রযোজনা এমনকি সঙ্গীত পরিচালনা পর্যন্ত করেছেন। নাকের নিচে ছোট গোঁফ, মাথায় টুপি, হাতে ছড়ি, ঢোলা প্যান্ট, বিশাল জুতা পড়া চরিত্রটি এখনো মানুষের সমানভাবে জনপ্রিয়।

- বিজ্ঞাপন -

চার্লি চ্যাপলিনের জন্ম ১৮৮৯ সালের ১৬ এপ্রিল ইংল্যান্ডের দক্ষিণ লন্ডনের ওয়েলওর্থের বার্লো স্ট্রিটে। তার কোনো বৈধ জন্ম প্রমাণপত্র না থাকায় জন্মস্থান নিয়ে বরাবরই সন্দেহ আছে। তার বাবার নাম চার্লস চ্যাপলিন আর মা হানা চ্যাপলিন। বাবা-মা দুজনই বিনোদন জগতে কাজ করতেন এজন্য স্বাভাবিকভাবেই চার্লির ভেতরেও শৈল্পিক দিকগুলো পরিপূর্ণ ছিল।

চার্লির বয়স তখন পাঁচ বছর। একদিন তার মা মঞ্চে গান গাইছিলেন। আর ছোট্ট চার্লি বসে বসে মায়ের অভিনীত গীতনাট্য দেখছিলেন। সে সময় লন্ডনে খেটে খাওয়া শ্রমিক, ভবঘুরে কিংবা নেশাগ্রস্ত লোকেরাই বিনোদনের জন্য থিয়েটারে ভিড় জমাত। মঞ্চে গায়িকা বা নর্তকীর কোনো হেরফের হলেই চিৎকার-চেঁচামেচি করে থিয়েটার মাথায় তুলতো। মঞ্চে গান গাইছিলেন চার্লির মা। চার্লির মায়ের গলায় আগে থেকেই সমস্যা ছিল। গান গাওয়ার এক পর্যায়ে চার্লির মায়ের গলার স্বর ভেঙে যায়। বাধ্য হয়ে তিনি মঞ্চ থেকে নেমে যান। কিন্তু হল ভর্তি দর্শককে শান্ত করার জন্য মায়ের জায়গায় চার্লিকে উঠানো হয় মঞ্চে। চার্লি তার মায়ের পরিবর্তে মঞ্চে গান গাইতে শুরু করেন- ‘জ্যাক জোনস ওয়েল অ্যান্ড নোওন টু এভরি বডি…’। চার্লির গানে দর্শকরা মুগ্ধ হয়ে কয়েন ছুড়তে থাকে। চার্লি হঠাৎ অঙ্গভঙ্গিসহ বলে ওঠেন, ‘আমি এখন গান গাইব না, আগে পয়সাগুলো কুড়িয়ে নেই, তারপর আবার গাইব।’ এটি ছিল দর্শকদের হাসির জন্য। চার্লির বিশ্বের কঠিনতম সময়ের মধ্যে তার বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা ও মানুষের কষ্টকে হাসির মাধ্যমে এমন ভাবে ফুটিয়ে তুলতেন যে তার অভিনয় দেখা পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ ক্ষণিকের জন্য তাদের দুঃখ কষ্ট ও উপবাসের কথা ভুলে না হেসে থাকতে পারেনি।

কৌতুকাভিনয়:
মায়ের হাত ধরেই চার্লির অভিনয়ে হাতেখড়ি। এক সময় চার্লির মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। চার্লি সে সময় বিভিন্ন বারের সামনে নেচে টাকা উপার্জন করতেন। এক সময় ক্ষুধা আর অপুষ্টির অভাবে চার্লির মা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। তারপর চার্লি মাকে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখানেই তার মৃত্যুবরণ করেন। অভিভাবকহীন চার্লি একটি এতিমখানায় আশ্রয় নেন। এতিমখানার নিয়ম না মানার কারণে সেখানে তাকে শারীরিক নির্যাতন করা হতো। এতিমখানার জীবনের সেই অভিজ্ঞতা চার্লির সিনেমা জগতে ভালো প্রভাব ফেলেছিল।

১৮৯৮ সালে নয় বছর বয়সে চার্লি একটি নাচের দলে যোগ দেন। দলের সঙ্গে ঘুরে বিভিন্ন জায়গায় নাচ গান করে বেড়াতেন। এরপর যুক্ত হয়ে পড়েন কমেডিয়ান দলের সঙ্গে। পাশাপাশি করতেন মূকাভিনয়। ১৯১৩ সালে চার্লি ইংল্যান্ড ছেড়ে পাড়ি জমান আমেরিকায়। ঐ বছরেই নিউইর্য়ক মোশন কোম্পানি সাপ্তাহিক ১৫০ ডলারের ভিত্তিতে চার্লির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। পরের বছরই বেশ কয়েকটি ছবি মুক্তি পায় চার্লির। রাতারাতি পরিচিত মুখ হয়ে ওঠেন তিনি। ধীরে ধীরে পেছনের দুঃখের সময়গুলো কাটতে থাকে। ১৯১৮ থেকে ১৯২৩ সালের মধ্যে নয়টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তিনি এবং সেগুলোর বেশিরভাগই দর্শকপ্রিয়তা পায়। ১৯২৫ সালে নিজের প্রযোজিত ছবির জন্য পান একাডেমি অ্যাওয়ার্ড। ১৯৩৬ সালে মুক্তি পায় অন্যতম সাড়া জাগানো ছবি ‘মর্ডান টাইমস’। ১৯৫২ সালে মুক্তি পায় ‘লাইম লাইট’ নামে আত্মজীবনীমূলক ছবি। ছবিটি দর্শক হৃদয়ে স্থান করে।

চার্লি চ্যাপলিনের ৭৫ বছরের দীর্ঘ অভিনয়জীবনে তিনটি বাদে বাকি সব চলচ্চিত্রই ছিল নির্বাক। চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম কথা বলেন ১৯৪০ সালে, দ্য গ্রেট ডিকটেটর চলচ্চিত্রে।

শেষ জীবন:

১৯৭৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর চার্লি চ্যাপলিন প্রায় নিঃসঙ্গ অবস্থায় মারা যান সুইজারল্যান্ডে। ১৯৭৮ সালের ৩ মার্চ সুইজারল্যান্ডের করসিয়ার-সার-ভেভে গোরস্তান থেকে চুরি হয়ে যায় চার্লি চ্যাপলিনের মৃতদেহ। অবশেষে ১৮ মার্চ পুলিশ মৃতদেহটি উদ্ধার করে এবং পুনরায় সমাহিত করা হয় চার্লি চ্যাপলিনকে।

বিশ্বের কঠিনতম সময়ের মধ্যে প্রবাহিত তার জীবন বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা ও মানুষের কষ্টকে হাসির মাধ্যমে এমন ভাবে ফুটিয়ে তুলতেন যে তার অভিনয় দেখা পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ ক্ষনিকের জন্য তাদের দুঃখ কষ্ট ও উপবাসের কথা ভুলে না হেসে থাকতে পারেনি। আজ পৃথিবীর মানুষের হাসি ফোটানো চার্লির জন্মদিন।

লেখা: শাকিল শাহরিয়ার
শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

spot_img
spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ প্রকাশিত

spot_img