আমরা সবাই জানি যে, বই পড়ার অভ্যাস একটি শিশুর সঠিক বেড়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে বর্তমানে ডিজিটাল মিডিয়া এবং গেমসের মাঝে বাচ্চাদের মনোযোগ ধরে রাখা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। বাচ্চাদের বই পড়ানোর অভ্যাস তৈরি করতে গেলে কিছু সহজ ও সৃজনশীল উপায় রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেগুলো।
১. প্রথমে বইকে আকর্ষণীয় করে তোলা:
বাচ্চাদের বইয়ের প্রতি আগ্রহ তৈরি করতে হলে, প্রথমে বইকে আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। বইয়ের আকার, রঙিন ছবি, সহজ ভাষা এবং গল্পের টানটান আকর্ষণ তাদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে। ছোটদের জন্য ছবি বই খুবই উপযোগী, কারণ সেগুলো তাদের কল্পনাশক্তি জাগিয়ে তোলে। কখনও কখনও, বইয়ের চেয়ে আরও মজার কিছু সাজানো— যেমন বিভিন্ন রঙের কভার, সুন্দর স্টিকার, এবং এমন গল্প যা তাদের বর্তমান অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পর্কিত। ছোট শিশুদের জন্য ছবির বই খুবই ভালো। শুধু অক্ষর দেখলে শিশুরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। বই পড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি করতে প্রথমে তাদের নানা রঙের ছবি আছে, এরকম বই কিনে দিন। এগুলো ওরা সহজে পড়তেও পারবে।
২. বই পড়ার সময়কে বিশেষ করে তুলুন:
একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করুন। বিকেলে চা খাওয়ার পর, অথবা রাতে ঘুমানোর আগে, গল্পের সময় তৈরি করুন। কারণ যখন একটি নির্দিষ্ট সময় বই পড়ার জন্য নির্ধারণ করা হয়, তখন শিশুরা সেই সময়টার অপেক্ষা করে থাকে। এতে বই পড়া হয়ে ওঠে একটি রুটিন, যা পরবর্তীতে তাদের ভালো অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায়।
৩. গল্পের চরিত্রদের সাথে পরিচয় করানো:
একটি ভালো গল্প শুধু কল্পনা নয়, একটি জীবনও হতে পারে। বাচ্চাদের জন্য চেষ্টা করুন তাদের গল্পের চরিত্রদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে, যেন তারা সেই চরিত্রের অনুভূতি বুঝতে পারে। যখন তারা চরিত্রগুলোর সাথে সম্পর্ক তৈরি করে, তখন তাদের গল্পের প্রতি আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। গল্পের মাঝে ছোট ছোট প্রশ্ন করে তাদের অংশগ্রহণও উৎসাহিত করতে পারেন।
৪. পড়ার পরে আলোচনা:
পড়াশোনার পর বাচ্চাদের সঙ্গে গল্প নিয়ে আলোচনা করুন। এটা তাদের মনোযোগ আরও বাড়ায়, এবং তারা বইয়ের প্রতি আরও আকৃষ্ট হয়। বইটির শেষ পর্যন্ত কী হয়েছে, চরিত্রগুলো কেমন ছিল—এসব নিয়ে প্রশ্ন করে তাদের চিন্তা-ভাবনার জায়গাটিকে আরও প্রশস্ত করুন। এতে বই পড়া তাদের কাছে একটি অভিজ্ঞতার মতো মনে হয়, যা শুধুমাত্র মস্তিষ্কের গণ্ডি পেরিয়ে হৃদয়েও প্রবাহিত হয়।
৫. বইয়ের সাথে যুক্ত একটি কার্যকলাপ:
গল্পের সাথে সম্পর্কিত কিছু কার্যকলাপ যুক্ত করা খুবই কার্যকরী। যেমন, একটি চরিত্রের পোশাক বানানো, কোনো দৃশ্য আঁকানো ইত্যাদি। এতে করে সেই নিজের পড়ার সাথে একটা যোগাযোগ তৈরি করবে। যা তাকে বই পড়ার প্রতি আরো আগ্রহী করে তুলবে।
৬. নিজে বই পড়ুন:
শিশুরা অনুকরণ প্রিয় হয়। বিশেষ করে বাবা-মাকে তারা যা করতে দেখে সেটাই তারা বেশি করে। তাই আগে আপনি নিজে বই পড়া শুরু করুন। তাহলে আপনার সন্তানও উৎসাহিত হবে।
এছাড়াও আরো কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে পারেন। যেমন- যেকোনো দিবসে শিশুকে বই উপহার করুন। শিশুদের বইয়ের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে তাকে বই পড়ে শোনাতে পারেন। তার সঙ্গে বসে একসঙ্গে কোনও বই পড়ুন। কোনও বই নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনা করুন। তাকে একটা বই পড়তে দিন। পড়া হয়ে গেলে গল্পের ছলে তাকে সেই বই নিয়ে প্রশ্ন করুন। এভাবে ধীরে ধীরে তার মধ্যে বই পড়ার উৎসাহ বাড়বে।
আপনার সন্তান যে বই পড়তে পারবে সেই বই-ই ওকে পড়তে দিন। তার ক্ষমতার বাইরে কোনও কঠিন বই দিলে সে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে।
ঘরে যেন বই পড়ার উপযুক্ত পরিবেশ থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
প্রতিমাসে অন্তত একদিন সন্তানসহ বইয়ের দোকানে যান এবং তাকে পছন্দমতো বই কেনার সুযোগ দিন।
উল্লেখিত পদ্ধতিসমূহ আপনি আপনারা সন্তানের বই পড়ার অভ্যাস তৈরিতে প্রয়োগ করে দেখতে পারেন।