মো. বিল্লাল হোসেন: জ্বালানি ছাড়া যেমন গাড়ি চলে না তেমনিভাবে খাদ্য ছাড়া মানবজীবন অচল। খাদ্য মানব জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে অন্যতম। মানুষ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার তাগিদে খাদ্য গ্রহণ করে থাকে। মূলত খাদ্যই মানুষকে পৃথিবীতে টিকে থাকতে সাহায্য করে। যখনই পৃথিবীতে খাদ্যের অভাব দেখা দেয় তখন দুর্ভিক্ষের আগমন ঘটে ফলে মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ প্রাণ হারায়। সুতরাং খাদ্য ছাড়া মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর পক্ষে বেঁচে থাকা অসম্ভব।
বিশেষত আমরা খাদ্য গ্রহণ করার পর শক্তি পাই এবং সেই শক্তির মাধ্যমে পৃথিবীতে টিকে থাকার চেষ্টায় মগ্ন থাকি। আমরা সবাই প্রতিদিন নিয়ম করে বিভিন্ন ধরনের খাবার খেয়ে থাকি। সাধারণত একজন মানুষ তিন বেলা খাবার খেয়ে থাকে এবং এর সাথে বিভিন্ন ধরনের নাস্তা ও পানীয় গ্রহণ করে থাকে। আমরা প্রতিদিন খাবার খেলেও আসলে কিভাবে খাবার থেকে আমরা শক্তি পাই এবং সেই শক্তির মাধ্যমে পৃথিবীতে টিকে থাকি সেটা বেশিরভাগ মানুষই জানে না। মূলত এই ব্যাপারটি জানাতেই এই লেখার অবতারণা।
মানব শরীর একটি রাসায়নিক বিক্রিয়ার আঁধার। মানব শরীরের মধ্যে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের জটিল বায়োকেমিক্যাল বিক্রিয়া ঘটছে অবিরত। মানবদেহের বায়োকেমিক্যাল বিক্রিয়া গুলোর বেশিরভাগই আমরা যে খাবার খাই সেটিকে প্রক্রিয়াজাতকরণের অংশ হিসেবে বিদ্যমান। অনেকগুলো ধারাবাহিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্য থেকে আমরা শক্তি পেয়ে থাকি ধারাবাহিক এই বিক্রিয়াগুলোকে একত্রে মেটাবলিজম বা বিপাকীয় ক্রিয়া বলা হয়। খাবারের মেটাবলিজম এর ফলেই আমাদের শরীরে শক্তি উৎপন্ন হয়। প্রকৃত অর্থে খাবারের মেটাবলিজম বলতে খাবারে উপস্থিত যে সকল নিউট্রিয়েন্টস বা পুষ্টি উপাদান রয়েছে সেগুলোর ধারাবাহিক রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে ATP হিসেবে যে শক্তি উৎপন্ন হয় সেই প্রক্রিয়াকে নির্দেশ করে।
খাবারের উপাদানগুলো কী কী?
খাদ্য রসায়ন বা ফুড কেমিস্ট্রির ভাষায় খাদ্যের মোট উপাদান ছয়টি। এই ছয়টি উপাদানকে সাধারণত নিউট্রিয়েন্টস বা পুষ্টিকণা বা পরিপোষক নামে অভিহিত করা হয়। এগুলো হলো কার্বোহাইড্রেট(শর্করা), প্রোটিন(আমিষ), ফ্যাট (স্নেহ), ভিটামিন (খাদ্যপ্রাণ), মিনারেল (খনিজ) ও পানি। আমরা আমাদের প্রতিদিনকার খাদ্য তালিকায় যেসব খাবার খেয়ে থাকি সেসব খাবার থেকেই মূলত এসব পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। এর মধ্যে তিনটি পুষ্টি উপাদান যথা কার্বোহাইড্রেট (শর্করা), প্রোটিন (আমিষ) ও ফ্যাট (স্নেহ)-কে ম্যাক্রো বা মূখ্য পুষ্টি উপাদান বলা হয়।
খাবার গ্রহণের পর কীভাবে শক্তি উৎপন্ন হয়?
খাবার থেকে শক্তি উৎপাদনের জন্য বেশ কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। সেগুলো নিম্নে ধারাবাহিকভিাবে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
প্রথম ধাপ (মেকানিকাল ম্যাস্টিকেশন ও ডাইজেশন):
খাবার খাওয়ার পর সেটি থেকে শক্তি উৎপন্ন হওয়ার যে প্রক্রিয়া তা অত্যন্ত জটিল ও ধারাবাহিক বিক্রিয়ার সমন্বয়। প্রথমে আমরা যখন কোন খাবার গ্রহণ করি তারা দাঁতের মাধ্যমে ম্যাস্টিকেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ছোট ছোট টুকরাতে পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়াকে অনেক সময় মেকানিক্যাল প্রক্রিয়াও বলা হয়। খাবারগুলো ছোট ছোট টুকরোতে পরিণত হওয়ার ফলে এটি পরবর্তী প্রক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। খাবার চর্বণের সময় আমাদের মুখের লালা গ্রন্থি থেকে লালা রস নিঃসৃত হয় যা খাবারের সাথে মিশে বিপাকক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। লালারসের মধ্যে মিশ্রিত অ্যামাইলেজ নামক উৎসেচক বা এনজাইম শর্করা জাতীয় খাবার যেমন আলু, ভাত, গম, চিনি ও মিষ্টিজাতীয় ফলমূল ডাইজেস্ট করা শুরু করে। অন্যদিকে জিহ্বায় অবস্থিত গ্রন্থি থেকে লিঙ্গুয়াল লাইপেজ নামক এনজাইম নিঃসৃত হয় যা স্নেহ জাতীয় পদার্থকে ভেঙে গ্লিসারল এবং ফ্যাটি এসিতে পরিণত করে। অর্থাৎ মুখ গহ্বরের মধ্যেই ডাইজেশন বা বিপাকীয় প্রক্রিয়া শুরু হয়। মুখের লালা গ্রন্থি (স্যালিভারি গ্লান্ড) থেকে নিঃসৃত লালা রসের মধ্যে সাধারণত ৯৯.৫% পানি থাকে এবং ০.৫% বিভিন্ন ধরনের দ্রব উপস্থিত থাকে যেমন ক্লোরাইড আয়ন, সোডিয়ামে আয়ন, পটাশিয়াম আয়ন, বাই কার্বনেট আয়ন ও ফসফেট আয়ন।
এছাড়া এতে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের জৈব যৌগ যেমন ইউরিয়া, ইউরিক অ্যাসিড, মিউকাস, ইমিউনোগ্লোবিউলিন এ, ব্যাকটেরিওলাইটিক এনজাইম (যে সকল এনজাইম ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে বা ধ্বংস করে ফেলে তাকে ব্যাকটেরিওলাইটিক এনজাইম বলা হয়) যেমন লাইসোজাইম এবং স্যালিভারি অ্যামাইলেজ পাওয়া যায়। লালারসে উপস্থিত ক্লোরাইড আয়ন স্যালিভারি অ্যামাইলেজ নামক এনজাইমকে সক্রিয় করতে সহায়তা করে। ফলে শর্করা জাতীয় খাবারে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে উপস্থিত যৌগ অর্থাৎ স্টার্চ এই এনজাইমের মাধ্যমে ভেঙে অ্যামাইলেজ ও অ্যামাইলোপেকটিন নামে দুটি অংশে পরিণত হয়। ফসফেট এবং বাইকার্বনেট আয়ন অম্লীয় খাবার গুলোকে বাফারে পরিণত করে ফলে খাবারগুলোর অম্লতা কমে ৬.৩৫-৬.৮৫য়ে এসে দাঁড়ায়।
এছাড়া আমরা খাবার গ্রহণ করার পর দেখা যায় খাবারের সাথে প্যাথোজেনিক মাইক্রোঅর্গানিজম বা ক্ষতিকর অণুজীব আমাদের মুখে প্রবেশ করেছে তাই সেসব ক্ষতিকর অণুজীব থেকে রক্ষার জন্য লালারসে উপস্থিত লাইসোজাইম নামক এনজাইম অনুজীব গুলোকে মেরে ফেলে আমাদের দেহকে রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। অর্থাৎ আমাদের মুখ থেকে নিঃসৃত লালা রস খাবারকে যেমন বিপাকে সহায়তা করে তেমনি এটিকে অনুজীব মুক্ত করে পরবর্তী ধাপের জন্য প্রস্তুত করতে সহায়তা করে। এরপর জিহ্বার সাহায্যে গলাধঃকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্য পাকস্থলীতে পৌঁছায়। মুখগহ্বরে খাবারের প্রক্রিয়াজতকরণ শেষ হলে মিউকাস নামক এক ধরনের লুব্রিকেটিং এজেন্ট বা পিচ্ছিলকারক পদার্থের সাহায্যে বোলাস (খাবার ও লালারস মিশ্রিত একটি গোলাকার পিণ্ড) ইসোফ্যাগাস (Esophagus) নামক লম্বা নলের মত অংশের ভেতর দিয়ে পাকস্থলীতে প্রবেশ করে। ইসোফ্যাগাসের মধ্য দিয়ে খাবার একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে নিচের দিকে অর্থাৎ পাকস্থলীর দিকে নামতে থাকে এই বিশেষ প্রক্রিয়াকে বলা হয় পেরিস্টালসিস। পেরিস্টালসিস মূলত পেশির চলনের মাধ্যমে সংঘটিত হয়ে থাকে যা অনেকটা সাপের চলাচলের মত প্রক্রিয়া।
খাবার পাকস্থলীতে প্রবেশ করার পর এখানে প্রতি ১৫ থেকে ২৫ সেকেন্ড অন্তর অন্তর পেরিস্টালটিক মুভমেন্ট সংগঠিত হয় যাকে এক কথায় মিক্সিং ওয়েভ বলা হয়। এই মিক্সিং ওয়েভ এর ফলে খাবারের কণাগুলোর সাথে গ্যাস্ট্রিক জুস মিশ্রিত হয়ে একটি পিণ্ড তৈরি করে যাকে কাইম (Chyme) নামে অভিহিত করা হয়।
পাকস্থলীতে প্রোটিন জাতীয় খাবার পেপসিন নামক এনজাইমের মাধ্যমে ভেঙে প্রোটিওন, ডাইপেপটাইড, পলিপপটাইড ও অ্যামাইনো এসিড অনু তৈরি হয়। যদিও পেপসিন নামক এনজাইমটি মূলত অসক্রিয় বা ইনঅ্যাকটিভ অবস্থায় থাকে তাই এটিকে সক্রিয় অবস্থায় আনার জন্য পাকস্থলীর প্যারাইটাল কোষ থেকে হাইড্রোক্লোরিক এসিড নিঃসৃত হয় এবং পেপসিনোজেনকে পেপসিন নামক এনজাইমে রূপান্তর করে। মূলত এই সক্রিয় পেপসিন এনজাইম প্রোটিনকে ভেঙে প্রোটিওন, ডাই পেপটাইড, পলিপপটাইড ও অ্যামাইনো এসিড অনু তৈরি করে।
ফ্যাট জাতীয় খাবার গুলো গ্যাস্ট্রিক লাইপেজ নামক এনজাইমের মাধ্যমে ভেঙে ফ্যাটি এসিড এবং গ্লিসারল তৈরি হয়। এছাড়া কিছু পরিমাণে অ্যামাইলেজ এনজাইম কার্বোহাইড্রেটকে ভেঙ্গে গ্লুকোজ অনুতে পরিণত করে।
এরপর প্রত্যেকটি মৌলিক অণু (গ্লুকোজ, অ্যামাইনো এসিড, ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারল) একটিভ ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম, প্যাসিভ ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম, সিম্পল ডিফিউশন ও ক্যারিয়ার প্রোটিনের সাহায্যে রক্তের মধ্যে প্রবেশ করে।

মেটাবলিজম বা বিপাকীয় ক্রিয়া:
যখন পৌষ্টিকতন্ত্র থেকে পুষ্টি উপাদানগুলো রক্ত প্রবেশ করে তখন নতুন একটি প্রক্রিয়া শুরু হয় যেটি মেটাবলিজম বা বিপাকীয় ক্রিয়া নামে পরিচিত। মেটাবলিজম মূলত অনেকগুলো বিক্রিয়ার ধারাবাহিক সম্মেলন যেখানে বিভিন্ন ধরনের এনজাইম ও হরমোন অংশগ্রহণ করে বিক্রিয়ার গতিকে ত্বরান্বিত করে ও বিভিন্ন ধরনের মৌলিক অণুকে ভেঙে শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে।
এই প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ হল গ্লাইকোলাইসিস যেখানে কার্বোহাইড্রেট থেকে পাওয়া গ্লুকোজ অণু অনেকগুলো ধাপ অতিক্রম করে এনজাইমের সাহায্যে ভেঙে পাইরুভেট তৈরি করে। এই প্রক্রিয়া সংগঠনের সময় অনেকগুলো এটিপি (ATP), এডিপি (ADP), এনএডিএইচ (NADH) ও এফএডিএইচটু (FADH2) তৈরি হয়। গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়ায় দুই অণু এটিপি ও দুই অনু এনএডিএইচ তৈরি হয়।
পরবর্তী ধাপে পাইরুভেট ডিহাইড্রোজিনেজ এনজাইম এর মাধ্যমে ভেঙে এসিটাইল কো-এ তৈরি করে। এই Acetyl CoA টিসিএ সাইকেল বা ট্রাই কার্বক্সিলিক চক্র বা ক্রেবস চক্রে প্রবেশ করে বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে। অনেকগুলো জটিল বিক্রিয়া সংঘটিত হয় যেখানে উপজাত হিসেবে এটিপি (ATP), এডিপি (ADP), জিটিপি (GTP), এনএডিএইচ (NADH) ও এফএডিএইচটু (FADH2) ইত্যাদি উৎপন্ন হয়।
অন্যদিকে লিপিড থেকে পাওয়া ফ্যাটি এসিড বিটা অক্সিডেশনের মাধ্যমে ভেঙে সাইট্রেট তৈরি করে এবং সেটি ক্রেবস চক্রের মধ্যে প্রবেশ করে। কারণ সাইট্রেট ট্রাইকার্বক্সিলিক এসিড চক্রের একটি ইন্টারমিডিয়েট যৌগ। যখন সাইট্রেট ইন্টারমিডিয়েট যৌগ হিসেবে সাইট্রিক এসিড সাইকেল (Citric acid cycle) এর মধ্যে প্রবেশ করে তখন এটি চক্রাকারে এটিপি ও অন্যান্য ইলেকট্রন ট্রান্সফারিং মলিকিউল (Electron transferring molecule) তৈরি করতে থাকে।
আবার প্রোটিন থেকে পাওয়া অ্যামিনো এসিড (নন এসেনশিয়াল) ট্রান্সএমিনেশন এর মাধ্যমে ভেঙে অক্সালোএসিটেট তৈরি করে যা সরাসরি ক্রেবস চক্র বা টিসিএ সাইকেলের মধ্যে প্রবেশ করে।
সুতরাং আমরা খাবারের মাধ্যমে যে তিনটি মুখ্য পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করি সেগুলো মেটাবলিজম এর মাধ্যমে ভেঙে টিসিএ সাইকেল বা ক্রেবস চক্রের মধ্যে প্রবেশ করে। অর্থাৎ সকল আলাদা আলাদা পুষ্টি উপাদানের বিপাকক্রিয়া শেষে উৎপাদিত যৌগগুলো সরাসরি ভাবে অথবা অন্য কোনভাবে ট্রাই কার্বক্সিলিক এসিড চক্রের মধ্যে প্রবেশ করে শক্তি উৎপাদনের জন্য যে উপজাতগুলো তৈরি করা দরকার সেগুলো তৈরি করে। এজন্য এই চক্রকে সেন্ট্রাল মেটাবলিক পাথওয়ে বলা হয়। এটিকে আমাদের দেহের সকল পুষ্টি উপাদানের বিপাক ক্রিয়ার কেন্দ্রীয় সংযোগ সড়ক ও বলা যেতে পারে।
অক্সিডেটিভ ফসফোরাইলেশন (ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট চেইন):
এই ধাপে গ্লাইকোলাইসিস, পাইরুভেট অক্সিডেশন ও ট্রাই কার্বক্সিলিক এসিড সাইকেলে উৎপাদিত NADH (Nicotinamide Adenine Dinucleotide Hydride) এবং FADH (Flavin Adenine Dinucleotide Hydride) ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট চেইন এর মধ্যে প্রবেশ করে। এই চেইন এর মধ্যে যে বিক্রিয়া গুলো সম্পন্ন হয় সেগুলোকে একত্রে অক্সিডেটিভ ফসফরাইলেশন বলা হয়। সেখানে একটি জটিল সিস্টেম যাকে ১-৪ কমপ্লেক্স (Complex I-IV) সিস্টেম নামে অভিহিত করা হয় সেটির মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় ধাপে ধাপে শক্তি নিঃসরণ করে। পরবর্তী ধাপে প্রোটনের এক ধরনের প্রবাহ তৈরি করা হয় যা মূলত ইলেকট্রন ট্রান্সফারের ফলে যে এনার্জি রিলিজড হয় সেটির মাধ্যমে প্রোটন বা হাইড্রোজেন আয়ন কে পাম্প করে মাইট্রোকন্ড্রিয়াল ম্যাট্রিক্স থেকে ইন্টার মেমব্রেন স্পেসে নিয়ে আসে। এর ফলশ্রুতিতে এক ধরনের ইলেকট্রোকেমিক্যাল গ্রেডিয়েন্ট তৈরি হয়। এরপর প্রোটন যখন পুনরায় মাইট্রোকন্ড্রিয়াল ম্যাট্রিক্সে এটিপি সিন্থেইজ নামক এনজাইম এর সাহায্যে ফিরে আসে তখন সেটি এডিপি (ADP) ও ইনঅর্গানিক (Pi) ফসফেট কে যুক্ত করে এটিপি সংশ্লেষ করে। এক্ষেত্রে অক্সিজেন ইলেকট্রন ট্রান্সপোর্ট চেইনের সর্বশেষ ইলেকট্রন গ্রহিতা হিসেবে কাজ করে এবং ইলেক্ট্রন ও প্রোটনের সাথে মিলিত হয়ে শ্বসন প্রক্রিয়ার উপজাত পদার্থ হিসেবে পানি তৈরি করে। কোষের Powerhouse নামে পরিচিত মাইট্রোকন্ডিয়াতে এই পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়ে কোষের শক্তির আধার বা বায়োলজিক্যাল কারেন্সি ATP (Adenosine Triphosphate) তৈরি হয়।
এভাবেই অনেকগুলো জটিল বায়োকেমিক্যাল বিক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের গ্রহণকৃত খাদ্য থেকে শক্তি উৎপন্ন হয় যার মাধ্যমে আমরা বেঁচে থাকি। সুতরাং বোঝা যাচ্ছে খাবার থেকে আমরা খুব সহজে শক্তি পাই এটি একটি ভুল ধারণা। বরং অনেকগুলো রাসায়নিক বিক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর আমরা খাবার থেকে শক্তি পাই।
তথ্যসূত্র:
- Satyanarayana, U. (2013). Biochemistry (4th ed.). Elsevier Health Sciences. p165-182, p244-330
- Nelson, D. L., & Cox, M. M. (2008). Lehninger Principles of Biochemistry. W H Freeman & Company.
- Hall, J. E. (2016). Guyton and Hall Textbook of Medical Physiology, Jordanian Edition E-Book. Elsevier Health Sciences.
- Deshpande OA, Mohiuddin SS. Biochemistry, Oxidative Phosphorylation. [Updated 2023 Jul 31]. In: StatPearls [Internet]. Treasure Island (FL): StatPearls Publishing; 2024 Jan-. Available from: https://www.ncbi.nlm.nih.gov/books/NBK553192/
লেখক: মো. বিল্লাল হোসেন
গবেষক ও শিক্ষক, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ