spot_img

শীতে বদলে যাওয়া ববি ক্যাম্পাস

এসম্পর্কিত আরো পড়ুন

তৌফিক হাসান তপু: ‘শীতের হাওয়ার লাগল নাচন আমলকীর এই ডালে ডালে। পাতাগুলি শিরশিরিয়ে ঝরিয়ে দিল তালে তালে।’ শুধু আমলকীর ডালে ডালেই নয় শীতের হিমেল হাওয়ার পরশ আমাদের শরীরকেও ছুঁয়ে যায়। হৃদয়ে লাগে দোলা দেহে জাগে শিহরণ। হ্যা, প্রকৃতিতে এখন সত্যিই শীতের মাতম চলছে।

তবে কবির কল্পনার মতো এত সহজেই শীত আসেনি। সময়ের পরিক্রমায় পাঁচটি ঋতু অর্থাৎ দশ মাস পর, হেমন্তকে অতিক্রম করে সমস্ত প্রকৃতিতে শীত যখন সাময়িকভাবে নিজের অধিকার বিস্তার করে। তখন মানুষ তাকে বরণ করে নেয়।

- বিজ্ঞাপন -

প্রবাদ আছে ‘ঊন বর্ষায় দুনো শীত’ অর্থাৎ, যে বছর বর্ষা কম হয়, সে বছর শীতের প্রকোপ বেশি হয়। কিন্ত এবার ঠিক তার বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে, এবছর বর্ষা মৌসুমে যেমন প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে, তেমনি শীতের  তীব্রতা বাড়ছে দিনদিন। ৫৩ একর জমির ওপর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে লাল ইটে ঘেরা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) ক্যাম্পাস যেন কীর্তনখোলা নদীর সিক্ত বাতাসে রুক্ষ প্রকৃতির মাঝে নিজের সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিতে ব্যস্ত।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃতি ও পরিবেশের প্রতি এখানকার অধিবাসী ও শিক্ষার্থীদের অকৃত্রিম ভালোবাসা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আধুনিক গ্রামে পরিণত করেছে। সবুজের নৈসর্গিক সমারোহে ঘেরা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শীত আসে চিরচেনা রূপের বাইরে আরও কিছু মুগ্ধতা নিয়ে। সকালে ঘন কুয়াশা ভেদ করে মিষ্টি আলোর ছোঁয়া লাগে শিশির ভেজা ক্যাম্পাসের ঘাস-পাতায়। একাডেমিক বিল্ডিং এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর সামনে শোভা পায় চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা, জিনিয়া,ডালিয়া,গোলাপসহ নানান প্রজাতির ফুল।

শীতের সকালে লেপের তলায় গুটিসুটি মেরে আরেকটু ঘুমানোর জন্য যখন মন তালবাহানা করে, তখন সকল উষ্ণতা ছেড়ে কুয়াশার আস্তরণ ভেদ করে ছুটতে হয় ক্লাসে। অনেক শিক্ষার্থীকে আবার সকালের শিশির ভেজা ঘাসের উপর খালি পায়ে হাটতে ছবি তুলতে দেখা যায়।

আবার অনেককেই দেখা যায় সকালের মিষ্টি রোদে বসে ভাব বিনিময় করতে। দুপুর হতে না হতেই খেলার মাঠ ভরে যায় শিক্ষার্থীদের আনন্দ উচ্ছ্বাসে সাথে সর্টপীচ ক্রিকেট, ফুটবল খেলা চলতে থাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। হল গুলোর সামনে তৈরী করা হয়েছে ব্যাডমিন্টন খেলার কোর্ট। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলতে থাকে খেলা।

ববিতে শীত মানেই সাংস্কৃতিক উৎসবের ধুম। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন শীতকালে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে মুক্তমঞ্চে।এসব অনুষ্ঠানে শোভা পায় শিক্ষার্থীদের বাহারি নামের সখের দোকান। দোকানগুলোতে শোভাপায় রংবেরঙের পিঠা।বিকাল থেকেই ক্যাম্পাসের সামনে দেখা মেলে নানা রকমের পিঠাপুলির দোকান। এসব দোকানে পাওয়া যায় ভাপা পিঠা,চিতই পিঠা, রস পিঠা, পাটিসাপটা ইত্যাদি।

সন্ধ্যা হলেই ক্যাম্পাসের সামনের এবং ভোলা রোডের রাস্তার টং দোকান গুলোতে জমে ওঠে চায়ের আড্ডা। অনেক শিক্ষার্থী আবার বন্ধুদের সাথে ঘুরতে চলে যায় একেবারে নেটওয়ার্কের বাইরে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী তাসনিম বলেন,আমার কাছে শীত রুক্ষতা কম উর্বরতা বেশি এনে দিয়েছে। ব্যস্ত শহুরে জীবনে বেড়ে ওঠা গন্ডির বাহিরে এই ক্যাম্পাসই আমাকে প্রথম শীতকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে।শীতের পাখির মিষ্টি গান আর কুয়াশার চাদর আলিঙ্গন করতে সুযোগ করে দিয়েছে।

লেখক: তৌফিক হাসান তপু, শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

/ইএইচ

spot_img
spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ প্রকাশিত

spot_img