গবেষণাপত্র লেখা ও প্রকাশের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ পরিভাষা ব্যবহৃত হয়, যা গবেষকদের অবশ্যই জানা উচিত। সঠিকভাবে একটি গবেষণাপত্র প্রস্তুত করা ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশের জন্য এসব পরিভাষার সঠিক বোঝাপড়া অপরিহার্য।
১. গবেষণাপত্রের প্রধান অংশসমূহ
𝐓𝐢𝐭𝐥𝐞: গবেষণার মূল বিষয়বস্তু সংক্ষেপে প্রকাশ করা হয় Title-এ। এটি হতে হবে সংক্ষিপ্ত, আকর্ষণীয়, তথ্যবহুল এবং গবেষণার সাথে সুসঙ্গত। শিরোনাম এমনভাবে নির্ধারণ করা উচিত, যাতে এটি গবেষণার মূল প্রতিপাদ্য সহজেই প্রকাশ করে এবং পাঠকের আগ্রহ সৃষ্টি করে।
𝐀𝐛𝐬𝐭𝐫𝐚𝐜𝐭: গবেষণার উদ্দেশ্য, পদ্ধতি, প্রধান ফলাফল এবং উপসংহার সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হয় Abstract-এ। এটি সাধারণত ১৫০-৩০০ শব্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে এবং গবেষণার সারমর্ম তুলে ধরে। অনেক পাঠক এবং গবেষক গবেষণাপত্রের মূল অংশ পড়ার আগে Abstract পড়ে থাকেন, তাই এটি হতে হবে সংক্ষিপ্ত কিন্তু তথ্যবহুল।
𝐊𝐞𝐲𝐰𝐨𝐫𝐝𝐬: গবেষণার প্রধান বিষয়বস্তু বোঝানোর জন্য নির্দিষ্ট কিছু শব্দ বা শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করা হয়, যা সার্চ ইঞ্জিন ও গবেষণা ডাটাবেসে গবেষণাপত্রের সন্ধান পেতে সহায়তা করে। সঠিক Keywords নির্বাচন গবেষণাপত্রের দৃশ্যমানতা বাড়ায়।
𝐈𝐧𝐭𝐫𝐨𝐝𝐮𝐜𝐭𝐢𝐨𝐧: গবেষণার প্রেক্ষাপট, পূর্ববর্তী গবেষণার সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা, গবেষণার প্রয়োজনীয়তা এবং উদ্দেশ্য এখানে ব্যাখ্যা করা হয়। এতে বোঝানো হয় কেন এই গবেষণা প্রয়োজন এবং এটি কী ধরনের নতুন জ্ঞান বা অবদান আনবে।
𝐋𝐢𝐭𝐞𝐫𝐚𝐭𝐮𝐫𝐞 𝐑𝐞𝐯𝐢𝐞𝐰: পূর্ববর্তী গবেষণাগুলোর সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা করা হয় এখানে। এতে গবেষণার ফাঁক (Research Gap) চিহ্নিত করা হয় এবং নতুন গবেষণার যৌক্তিকতা (Rationale) ব্যাখ্যা করা হয়।
𝐌𝐞𝐭𝐡𝐨𝐝𝐨𝐥𝐨𝐠𝐲: গবেষণায় ব্যবহৃত উপকরণ, গবেষণার নকশা, ডেটা সংগ্রহের কৌশল, পরিসংখ্যান বিশ্লেষণের পদ্ধতি ইত্যাদি এখানে বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হয়। এটি গবেষণার পুনরুৎপাদনযোগ্যতা (Reproducibility) নিশ্চিত করে, যাতে অন্য গবেষকরা একই পদ্ধতি অনুসরণ করে একই ফলাফল পেতে পারেন।
𝐑𝐞𝐬𝐮𝐥𝐭𝐬: গবেষণার প্রধান তথ্য ও বিশ্লেষণ টেবিল, গ্রাফ বা পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়।
𝐃𝐢𝐬𝐜𝐮𝐬𝐬𝐢𝐨𝐧: গবেষণা ফলাফলের ব্যাখ্যা, পূর্ববর্তী গবেষণার সাথে তুলনা, সীমাবদ্ধতা এবং গবেষণার ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা এখানে বিশ্লেষণ করা হয়। এটি গবেষণার অর্থপূর্ণ ব্যাখ্যা ও প্রভাব তুলে ধরে।
𝐂𝐨𝐧𝐜𝐥𝐮𝐬𝐢𝐨𝐧: গবেষণার সারসংক্ষেপ, মূল ফলাফল ও ভবিষ্যত গবেষণার সুপারিশ এখানে উল্লেখ করা হয়।
𝐑𝐞𝐟𝐞𝐫𝐞𝐧𝐜𝐞𝐬: গবেষণায় ব্যবহৃত সমস্ত উৎস নির্দিষ্ট Citation শৈলীতে (যেমন APA, MLA, IEEE) উল্লেখ করা হয়। এটি গবেষণার সততা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করে।
২. গবেষণাপত্র প্রকাশের পরিভাষা
𝐏𝐞𝐞𝐫 𝐑𝐞𝐯𝐢𝐞𝐰: গবেষণার মান ও নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করার জন্য গবেষণাপত্র প্রকাশের আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পর্যালোচিত হয়।
𝐈𝐦𝐩𝐚𝐜𝐭 𝐅𝐚𝐜𝐭𝐨𝐫 – 𝐈𝐅: জার্নালের মান নির্ধারণের একটি পরিমাপক, যা নির্ধারিত হয় সেই জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাগুলোর Citation সংখ্যার ভিত্তিতে।
𝐇-𝐈𝐧𝐝𝐞𝐱: একজন গবেষকের প্রকাশনা সংখ্যা এবং Citation-এর ভিত্তিতে তার গবেষণার প্রভাব নির্ধারণের একটি সূচক।
𝐃𝐎𝐈 – 𝐃𝐢𝐠𝐢𝐭𝐚𝐥 𝐎𝐛𝐣𝐞𝐜𝐭 𝐈𝐝𝐞𝐧𝐭𝐢𝐟𝐢𝐞𝐫: প্রত্যেক গবেষণাপত্রের জন্য নির্দিষ্ট একটি Unique নম্বর, যা আর্টিকেলটি সহজে খুঁজে পেতে সাহায্য করে।
𝐏𝐥𝐚𝐠𝐢𝐚𝐫𝐢𝐬𝐦: অন্য কারও গবেষণা বা লেখা অনুমতি ছাড়া বা Citation ছাড়া ব্যবহার করা। এটি গবেষণার নৈতিকতার পরিপন্থী এবং গুরুতর অপরাধ।
𝐂𝐢𝐭𝐚𝐭𝐢𝐨𝐧: গবেষণাপত্রের মধ্যে ব্যবহৃত সমস্ত তথ্যের উৎস উল্লেখ করা।
𝐒𝐞𝐥𝐟-𝐂𝐢𝐭𝐚𝐭𝐢𝐨𝐧: নিজের পূর্ববর্তী প্রকাশিত গবেষণাপত্রকে Cite করা।
𝐒𝐜𝐢𝐞𝐧𝐜𝐞 𝐂𝐢𝐭𝐚𝐭𝐢𝐨𝐧 𝐈𝐧𝐝𝐞𝐱 𝐄𝐱𝐩𝐚𝐧𝐝𝐞𝐝 – 𝐒𝐂𝐈𝐄: উচ্চমানের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণাপত্রের সূচিকৃত তথ্যভাণ্ডার।
𝐒𝐜𝐨𝐩𝐮𝐬: একটি বৃহৎ গবেষণা ডাটাবেস, যা বিভিন্ন উচ্চ-মানের গবেষণাপত্র সংরক্ষণ করে।
𝐏𝐫𝐞𝐝𝐚𝐭𝐨𝐫𝐲 𝐉𝐨𝐮𝐫𝐧𝐚𝐥:কম মানের বা ভুয়া জার্নাল, যা সঠিক পিয়ার রিভিউ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে অর্থের বিনিময়ে গবেষণাপত্র প্রকাশ করে।
𝐏𝐫𝐞𝐩𝐫𝐢𝐧𝐭: গবেষণাপত্র প্রকাশের আগে পিয়ার রিভিউ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে উন্মুক্তভাবে শেয়ার করা সংস্করণ।
𝐂𝐨𝐫𝐫𝐞𝐬𝐩𝐨𝐧𝐝𝐢𝐧𝐠 𝐀𝐮𝐭𝐡𝐨𝐫: গবেষণাপত্রের প্রধান দায়িত্বশীল ব্যক্তি, যিনি সম্পাদক ও রিভিউয়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন এবং গবেষণা সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করেন।
𝐎𝐩𝐞𝐧 𝐀𝐜𝐜𝐞𝐬𝐬: এই প্রকাশনা মডেলে গবেষণাপত্র বিনামূল্যে পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে।
𝐒𝐮𝐛𝐬𝐜𝐫𝐢𝐩𝐭𝐢𝐨𝐧: এ ধরনের গবেষণাপত্র পড়তে অর্থ পরিশোধ বা জার্নালের সদস্যতা নিতে হয়।
𝐁𝐥𝐢𝐧𝐝 𝐑𝐞𝐯𝐢𝐞𝐰: রিভিউয়ারদের নাম লেখকদের কাছে প্রকাশ করা হয় না।
𝐃𝐨𝐮𝐛𝐥𝐞-𝐁𝐥𝐢𝐧𝐝 𝐑𝐞𝐯𝐢𝐞𝐰: এতে লেখক ও রিভিউয়ার পরস্পরের পরিচয় গোপন থাকে।
𝐌𝐚𝐧𝐮𝐬𝐜𝐫𝐢𝐩𝐭: গবেষণাপত্রের খসড়া সংস্করণ, যা প্রকাশনার জন্য জমা দেওয়া হয়।
𝐀𝐮𝐭𝐡𝐨𝐫 𝐆𝐮𝐢𝐝𝐞𝐥𝐢𝐧𝐞𝐬: জার্নালের নির্দিষ্ট নিয়মকানুন, যা গবেষণাপত্র জমা দেওয়ার সময় অনুসরণ করতে হয়।
𝐄𝐭𝐡𝐢𝐜𝐚𝐥 𝐀𝐩𝐩𝐫𝐨𝐯𝐚𝐥: যেসব গবেষণায় মানুষ বা প্রাণী অন্তর্ভুক্ত থাকে, সেখানে সংশ্লিষ্ট কমিটি থেকে অনুমোদন নিতে হয়।
𝐃𝐚𝐭𝐚 𝐒𝐡𝐚𝐫𝐢𝐧𝐠: গবেষণার ডেটা উন্মুক্তভাবে শেয়ার করা, যাতে অন্য গবেষকরা তা যাচাই বা অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
𝐑𝐞𝐩𝐫𝐨𝐝𝐮𝐜𝐢𝐛𝐢𝐥𝐢𝐭𝐲: একই পদ্ধতি অনুসরণ করে অন্য গবেষকরা একই ফলাফল পেতে সক্ষম হওয়ার সম্ভাবনা।
𝐏𝐨𝐬𝐭𝐩𝐫𝐢𝐧𝐭: পিয়ার রিভিউ-পরবর্তী সংস্করণ, যা প্রকাশনার চূড়ান্ত পর্যায়ের আগে তৈরি করা হয়।
𝐏𝐮𝐛𝐥𝐢𝐜𝐚𝐭𝐢𝐨𝐧: গবেষণাপত্রের চূড়ান্ত সংস্করণ যখন জার্নালে প্রকাশিত হয়, তখন সেটিকে Publication বলে। এটি হতে পারে প্রিন্ট (Printed) বা অনলাইন (Online)।
𝐀𝐜𝐜𝐞𝐩𝐭𝐞𝐝: গবেষণাপত্র পিয়ার রিভিউ প্রক্রিয়া সফলভাবে অতিক্রম করার পর যখন প্রকাশনার জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন পায়, তখন সেটিকে Accepted বলে।
𝐏𝐫𝐨𝐨𝐟𝐫𝐞𝐚𝐝: গবেষণাপত্র প্রকাশের আগে ভাষাগত ভুল, বানান ভুল, এবং গঠনগত ত্রুটি সংশোধন করার প্রক্রিয়া হল Proofreading। এটি গবেষণার ভাষাগত শুদ্ধতা ও পঠনের সুবিধা নিশ্চিত করে।
𝐎𝐧𝐥𝐢𝐧𝐞: অনেক জার্নাল তাদের গবেষণাপত্র প্রথমে অনলাইনে প্রকাশ করে। এটি “Online First” নামে পরিচিত, যেখানে গবেষণাপত্রটি প্রিন্ট সংস্করণ প্রকাশের আগেই পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে।
𝐕𝐨𝐥𝐮𝐦𝐞: একটি জার্নালের নির্দিষ্ট সময়ে প্রকাশিত সংখ্যাগুলোর একটি সেট, যা সাধারণত বছরভিত্তিক গণনা করা হয়।
𝐈𝐬𝐬𝐮𝐞 𝐍𝐮𝐦𝐛𝐞𝐫: একটি নির্দিষ্ট Volume-এর মধ্যে প্রকাশিত পৃথক সংখ্যাগুলোকে Issue বলা হয়।
𝐏𝐚𝐠𝐞 𝐍𝐮𝐦𝐛𝐞𝐫: প্রকাশিত গবেষণাপত্রটি জার্নালের কোন পৃষ্ঠায় ছাপা হয়েছে তা নির্দেশ করে।
𝐄𝐫𝐫𝐚𝐭𝐮𝐦: জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রের ভুল সংশোধন।
𝐑𝐞𝐭𝐫𝐚𝐜𝐭𝐢𝐨𝐧: গুরুতর ত্রুটি, প্লেজিয়ারিজম বা নৈতিক লঙ্ঘনের কারণে একটি প্রকাশিত গবেষণাপত্র বাতিল করা।
লেখা: আজিজুল হক, সহকারী অধ্যাপক, ইয়ুংনাম ইউনিভার্সিটি
এসআই/