আনিসুর রহমান:
‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা মঞ্জুরি কর্ণে/ আমি ভুবন ভুলাতে আসি গন্ধে ও বর্ণে’
কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই মনোমুগ্ধকর গানে আমরা উপলব্ধি করি কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্য। কবির এই লেখনীর মতোই লাল রঙের কৃষ্ণচূড়ার গন্ধে ও বর্ণে অপূর্ব সাজে সেজেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। রক্তরাঙা কৃষ্ণচূড়ার অপূর্ব বাহারি দৃশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
আকাশে জ্বলন্ত কাঠফাটা রোদ্দুর ও তপ্ত বাতাসে প্রকৃতি যখন প্রখর রৌদ্রে পুড়ছে, জনজীবনে নেমে এসেছে তীব্র হাহাকার ঠিক তখনই কৃষ্ণচূড়ার এমন সৌন্দর্য মনকে কিছু সময়ের জন্য হলেও করে তোলে প্রশান্ত। যেন লাল রঙে কৃষ্ণচূড়ার পসরা সাজিয়ে বসে আছে পুরো ক্যাম্পাস, এমন তীব্র গরমেও যে কারো চোখে এনে দেয় শিল্পের দ্যোতনা। যেন রক্তিম আভার এক স্বর্গপুরী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
১৭৫ একরে সবুজের বুক চিরে উঁকি দিয়েছে রক্তিম লাল আভা, চারদিকে ফুটেছে চোখ জুড়ানো রংমশাল, ডানা মেলেছে রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া। গ্রীষ্মের খরতাপে শরীর মন যখন ক্লান্ত, তখন ক্লান্ত-শ্রান্ত মনকে হঠাৎ বৃষ্টির মতো জুড়িয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে একটি মাত্র গুচ্ছ ফুলের বৃক্ষ কৃষ্ণচূড়া। প্রকৃতির এই রুক্ষ-শুষ্ক মৌসুমে কৃষ্ণচূড়া এসেছে শিক্ষার্থীদের মানব মনকে শীতল পরশ বোলাতে, ক্লান্তি দূর করে নব উদ্যমে জাগিয়ে তুলতে।
প্রশাসন ভবন, টিএসসিসির মূল ফটক, স্মৃতিসৌধ এলাকা, রবীন্দ্র-নজরুল কলা ভবন এলাকা, খালেদা জিয়া হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে অনন্য এক সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে কৃষ্ণচূড়া।
কৃষ্ণচূড়ার এমন রূপ নজর কাড়ছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ ক্যাম্পাসে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের। ক্লান্ত দুপুরে এসব গাছের নিচে বসেই আড্ডায় স্বস্তি ফেরানোর চেষ্টা করেন শিক্ষার্থীরা। বন্ধুরা মেতে ওঠে খুনসুটিতে, কেউবা ব্যস্ত থাকেন ফুল কুড়াতে। কেউ আবার ছবি ও সেলফিতে মত্ত। দেখা মেলে পাখিদের আনাগোনা ও খুনসুটিও। প্রেমিক তার প্রিয় মানুষটির খোঁপায় কৃষ্ণচূড়া গুঁজে দিতে ভুল করেন না।
কৃষ্ণচূড়া অনিন্দ্য সৌন্দর্য বর্ণনা করতে ‘ল’ এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাহ তাসনিয়া সিলভী বলেন, তীব্র তাপদাহ ও গরমের মধ্যেও সুন্দর এই কৃষ্ণচূড়া কিছুক্ষণের জন্যে হলেও মনে প্রশান্তির ছোঁয়া জাগিয়ে দেয়। গ্রীষ্মের এ সময়ে আকাশ প্রায়শই মেঘমুক্ত থাকে। গাঢ় সবুজ পত্রযুক্ত সাথে কৃষ্ণচুড়ার রক্তিম বর্ণ সব মিলে মিশে প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্যের মহিমা জানান দেয়। যার সৌন্দর্য প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে তো বটেই বাইরের দশনার্থীদের নজর কাড়তেও বাধ্য। মনে হয় যেন গ্রীষ্মের তাপদাহের কাছে এর সৌন্দর্যের উত্তাপ কিছুই না। সর্বোপরি, সবকিছুকে ছাপিয়ে গ্রীষ্মেকালের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য ও মনে প্রশান্তি আনয়নের জন্য একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ হতে পারে অনবদ্য ও অনন্য।
ফুলের মন মাতানো সৌন্দর্যের অনুভূতি জানাতে গিয়ে ইংরেজি বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী জায়েদ তালুকদার বলেন, অসহ্য গরমে ক্লাসের ফাকে শান্তির খোজে বন্ধুদের সাথে আড্ডা জমে গাছতলায়। আর এই অস্বস্তিকর গরমে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে ক্যাম্পাসের কৃষ্ণচূড়া ফুলগুলো। প্রিয় মানুষের খোঁপায় গুঁজে দেওয়ার এক অনন্ত প্রয়াস যেমন কবি কাজী নজরুল চেয়েছিলেন, ‘মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী দেবো খোঁপায় তারার ফুল’ তেমনি ইবিতেও একই পরিবেশ তৈরি করেছে এই রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া। যেমন লাল ফুলে ভ্রমর জড়ো হয় বিভিন্ন দিক থেকে তেমনি এই ফুল দেখে মানব মনেও প্রেম উদিত হয়।এই সৌন্দর্য পৃথিবীর অমৃত লহরীর মতো যার ব্যাখার অন্ত নেই।
এসআই/
মন্তব্য করুন