জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) জলাশয় ভরাট করে ভবন নির্মাণ ও অতিথি পাখির আশ্রয়স্থলে বহুতল ভবন নির্মাণ বন্ধের দাবিতে পরিবেশ ফোরামের ব্যানারে মানববন্ধন করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার সংলগ্ন সড়কে এ মানববন্ধনটি অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এবং গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের ডিন বরাবর স্মারকলিপি জমা দেন।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে জলাশয় ভরাট করে গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন এবং অতিথি পাখির আশ্রয়স্থলে চারুকলা অনুষদের ছয়তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবন এবং কলা ও মানবিকী অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করেছে প্রশাসন। এ অপরিকল্পিত স্থাপনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য ও পরিযায়ী পাখির জন্য হুমকি বলে উল্লেখ করা হয়। দ্রুততম সময়ে মাস্টারপ্লান প্রণয়নের মাধ্যমে পরিকল্পিত ভবন নির্মাণে আহ্বান করা হয়েছে।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী পূর্ণিমা কবির বলেন, জলাশয় পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। পরিবেশ আইনেও জলাশয় সংরক্ষণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারপরও জলাশয় ভরাট করে ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম সংকট রয়েছে, আমরা তাদের ক্লাস রুম চাই, তাদের জন্য ভবন চাই তবে সেটা অবশ্যই পরিবেশবান্ধব হতে হবে। দ্রুত একটি মাস্টারপ্ল্যান করে পরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণ করতে হবে।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. এনামউল্যা বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সব সময় তার জীববৈচিত্র্য ও সৌন্দর্যকে সংরক্ষণ করে। কিন্তু অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের নামে আনা টাকাগুলা হজম করার জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ধরনের অপরিকল্পিত স্থাপনা তৈরি করে যা জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করেছে। বর্তমানে লেক ভরাট করে যে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে সেটি সর্বপ্রথম ভিন্ন জায়গায় হওয়ার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিলেও পরে প্রভাবশালী শিক্ষকদের নেতৃত্বে জলাশয়ের উপর নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। স্বল্পবৃষ্টিতেই মুক্তমঞ্চ সংলগ্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এবং শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। লেকটিতে ভবন নির্মাণ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। কারণ ওই লেকটি উঁচু এলাকার পানি নিষ্কাশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আমির হোসেন ভূঁইয়া বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সৌন্দর্য কে কেন্দ্র করে এই জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল যাতে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ পায়। এখানে বেশ কয়েকটি লেক ছিল কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই লেকগুলোকে ভরাট করার পরিকল্পনা করে স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে প্রশাসন তাদের খেয়াল খুশি মত যত্রতত্র ভবন নির্মাণ করেছে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় এ সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে স্বৈরাচার সরকারের অধীনে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসবাহিনীকে লেলিয়ে দিয়ে তাদেরকে দমনোনোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু আজ আমরা একটি সুন্দর ক্যাম্পাস গড়ার জন্য সকল শিক্ষার্থীকে আহ্বান জানাচ্ছি।
জলাশয়ে ভবন নির্মাণের বিষয়ে গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আবদুর রব বলেন, স্থাপনা তৈরির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো মাস্টারপ্ল্যান ছিল না। মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমেই কাজ হওয়া উচিত। যেহেতু আমাদের উপাচার্য পদত্যাগ করেছেন, নতুন উপাচার্য না আসা পর্যন্ত আমরা পরামর্শ করতে পারছি না। তবে আমরা এর একটি সমাধান বের করার চেষ্টা করব।
এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ. এন. এম. ফকরুদ্দিন সহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
এসআই/
মন্তব্য করুন