spot_img

কুবি সমন্বয়কের বিতর্কিত মন্তব্য, ফেসবুকে সমালোচনার ঝড়

এসম্পর্কিত আরো পড়ুন

কুবি প্রতিনিধি: ‘আপনাদের বলতে চাই আমরা ৫ আগস্ট আমাদের সংগ্রামের যে সফলতা পেয়েছি এটা মূলত ৫ই মে হেফাজতের যে রক্ত ঝরেছিল, এই রক্ত থেকে আমরা এই (কোটা আন্দোলন) সংগ্রামের প্রেরণা পেয়েছি।’

গত মঙ্গলবার (১৩ আগষ্ট) কুমিল্লা শহরের মাদরাসায়ে আশরাফিয়া নামক একটি মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়কদের একজন আবু মুহাম্মদ রায়হান। এই বক্তব্যের ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। শিক্ষার্থীরা জানান, তার এই আন্দোলনকে বিতর্কিত করে তুলবে। প্রতিবেদনের স্বার্থে ভিডিওটি প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে।

- বিজ্ঞাপন -

উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বট্টগ্রাম মাদ্রাসার মুহতামিম ও শায়খুল হাদীস আল্লামা নুরুল হক এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেফাজতে ইসলাম কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মুফতি বশীরুল্লাহ, অর্থ-সম্পাদক মাওলানা মুনীর হোসাইন কাসেমীসহ কুমিল্লা জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের সমন্বয়কেরা।

এই অনুষ্ঠানে রায়হান আরও বলেন, ‘স্বাধীন বাংলাদেশে আপনাদের সামনে দাঁড়াতে পেরে আমি খুব গর্বিত অনুভব করতেছি। আসলে এর আগেও বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের দাওয়াত দিয়েছে, সব জায়গায় না গেলেও আলেম ওলামাদের সম্মানে এই দাওয়াত কবুল করেছি আমরা। আর আপনাদের বলতে চাই আমরা ৫ আগস্ট আমাদের সংগ্রামের যে সফলতা পেয়েছি এটা মূলত ৫ ই মে হেফাজতের যে রক্ত ঝরেছিল এই রক্ত থেকে আমরা সংগ্রামের প্রেরণা পেয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘এই দেশ আলেম ওলামার দেশ। এই দেশে কোন ভারতীয় এজেন্ডা আমরা বাস্তবায়ন করতে দিবোনা, এরপরে দেশে আলেম ওলামা বা ছাত্রদের বিরুদ্ধে যেকোন চক্রান্ত আমরা একসাথে রুখে দিবো, ইনশাআল্লাহ। আপনাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ আপনারা হেফাজত, চরমোনাই, জামাত সবাই একসাথে হয়ে যান। আমরা ছাত্রসমাজ আপনাদের পক্ষে আছি। অন্য যত অপশক্তি আছে সবাই আমাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ কিন্তু আমরা আলেম ওলামারা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে আছি। আমরা চাই আগামী দিনের বাংলাদেশ আলেম ওলামার নেতৃত্বে গড়ে উঠবে, ইনশাআল্লাহ। সবাইকে সংগ্রামী শুভেচ্ছা, বাংলাদেশ জিন্দবাদ, ইনকিলাব জিন্দাবাদ।’

বিশ্ববিদ্যালয় সুত্রে জানা যায়, আবু মুহাম্মদ রায়হান বিশ্ববিদ্যালয়ের নবম ব্যাচ অর্থাৎ ২০১৪-১৫ সেশনের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ সেশন ও কাজী নজরুল ইসলাম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ফাহিম আবরার বলেন, ‘৫ মে হেফাজতের আন্দোলন থেকে আমরা এই গণ আন্দোলনের অনুপ্রেরণা পেয়েছি’ এটি সম্পূর্ণ বিতর্কিত একটি মন্তব্য করেছেন আবু রায়হান ভাই। জনগণের স্বাধীনতার অনুপ্রেরণা জাগ্রত হওয়ার পুরো স্বত্ব তিনি একটি রাজনৈতিক দলকে দিয়ে দিলেন।’

এই বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ সেশন ও ‘শেখ হাসিনা হল’ যেটির নাম শিক্ষার্থীরা পাল্টে ‘সুনীতি – শান্তি হল’ দিয়েছে, সেই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আমেনা আক্তার বলেন, ‘এই আন্দোলনের শুরুটা কোটা নিয়ে, ধর্ম-বর্ণ  নির্বিশেষে সবাই একত্রিত হয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে এক দফা আন্দোলনে উপনীত হয়েছে। হেফাজত, জামাত, শিবির সহ অন্যান্য অনেকেরই ভুমিকা আছে, তা অস্বীকার করবো না। কিন্তু ২০১৩ সালের ৫ই মে-এর উপর ভিত্তি করে এই আন্দোলন শুরু হয়নি। তবে কুবি সমন্বয়ক আবু রায়হান আবেগের তাড়নায় বা অন্য কোনো কারণে দাবি করছে ৫ই মে-এর হেফাজতের ঝরানো রক্তই নাকি আমাদের ৫ আগস্টের বিজয়ের প্রেরণা। এমন বক্তব্য বিভ্রান্তিকর। আবু রায়হান ‘সমন্বয়ক’ পদ ব্যবহার করে নিজেকে জাহির করায় ব্যস্ত।’

এছাড়াও আবু রায়হান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের নিয়েও বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা।

কাজী নজরুল ইসলাম হলের ফাহিম অবরার বলেন, ‘রায়হান ভাই হলের এক জায়গায় বলেছেন, হলের শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে ছিলো, ওরা কি দেশ স্বাধীন করেছে! তাঁর হিসেবে হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোনো আন্দোলন করেনি। অথচ, জুন মাস থেকে ১১ তারিখ পর্যন্ত হল ব্যতিত কুমিল্লায় বাইরের কেউ আন্দোলনে যোগ দেয়নি, এমন কি আবু রায়হান কে দেখা গেছে ১৫ তারিখ এর পর। হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাঁর এই মন্তব্যে ক্ষুদ্ধ এবং ব্যথিত। সাবেক একজন শিক্ষার্থী হয়ে বর্তমান শিক্ষার্থীদের উপর তাঁর দাবী-দাওয়া চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এমতাবস্থায় আমরা চাই না সমন্বয়ক পরিচয়ে কোনো সাবেক শিক্ষার্থী বর্তমান শিক্ষার্থীদের উপর প্রেশার দিক।’

‘সুনীতি-শান্তি’ হলের আমেনা বলেন, ‘আন্দোলনে প্রধান ভূমিকায় থাকা হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে রায়হান ভাই বলেছেন “হলের শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে ছিল, তারা কী দেশ স্বাধীন করেছে!” এছাড়াও অনলাইন অফলাইনে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে ছাত্রলীগের ট্যাগ দিয়ে বেড়াচ্ছে উনি। তার সাথে দ্বিমত হলেই ছাত্রলীগ বলে ট্যাগ দিচ্ছে।’

অভিযোগ সমূহের বিষয় জানতে আবু মুহাম্মদ রায়হানকে ফোন করলে তিনি বলেন, ‘আমি বক্তব্যটা আলেম সমাজের সাথে ছাত্র সমাজ আছে এবং তাদের উপরে যে হত্যাকাণ্ড স্বৈরাচারী সরকার চালিয়েছিলো তার প্রতিবাদের ভিত্তিতে বলেছি।’

আবাসিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের বিষয় তিনি বলেন, ‘আমি ওই মন্তব্য করেছি, তবে সকল আবাসিক শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে নয়। যারা সেসময় আন্দোলনে না গিয়ে বরং অন্যদের বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখাচ্ছিলো যে নাম থাকলে সমস্যা হবে বা এমন তাদের উদ্দেশ্য করে বলেছি।’

তিনি একজন সাবেক শিক্ষার্থী এবং শিক্ষার্থীরা যখন সিনিয়র কেউ আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকুক চেয়েছিলো তার ভিত্তিতেই তিনি এসেছেন। এখন যদি তাকে সিনিয়র হিসেবে শিক্ষার্থীরা এখানে না চায় তাহলে তিনি এখান থেকে সড়ে যাবেন বলেও জানান।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করতে ‘নারী উন্নয়ন নীতিমালা’ ঘোষিত হওয়ার পরপরই আলোচনায় আসে ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ’ সংগঠনটি। ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী রাজীব হায়দার খুন হওয়ার পর আবারও আলোচনায় আসে এ সংগঠন। দেশে ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে তারা ১৩ দফা উত্থাপন করে। ১৩ দফা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে প্রথমে সংগঠনটি ২০১৩ সালের ৫ এপ্রিল ঢাকা অবরোধ করে। পরবর্তীতে আবার ৫ মে শাপলা চত্বরে সমাবেশ ডাকে। একপর্যায়ে সমাবেশকে ঘিরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়, ডাক দেওয়া হয় সরকার পতনের। সেই রাতে পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবি যৌথ অভিযান চালিয়ে হেফাজতের নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এই অভিযানে হতাহতের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

এসএস/

spot_img
spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ প্রকাশিত

spot_img