spot_img

বেরোবিতে ছুটি না নিয়ে লাপাত্তা রেজিস্ট্রার আলমগীর চৌধুরী

এসম্পর্কিত আরো পড়ুন

বেরোবি প্রতিনিধি: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে(বেরোবি) ছুটি না নিয়ে লাপাত্তা রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোঃ আলমগীর চৌধুরী।

স্বৈরাচার সরকার পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উপাচার্য, প্রক্টর, ট্রেজারারসহ ৪০ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন। তাদের পদত্যাগে বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে নিজের ইচ্ছামতো ছুটি কাটাচ্ছেন রেজিস্ট্রার।

- বিজ্ঞাপন -

প্রথম নিয়োগের পর থেকেই প্রকৌশলী আলমগীর চৌধুরী অফিস করেন অনিয়মিত। তবে গত ফেব্রুয়ারিতে শেষ নিয়োগ পাওয়ার পর অনিয়মিত তো বটেই, বেশির ভাগ দিন ছুটি কাটিয়েছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ্য ও একমাত্র আবাসিক কর্মকর্তা হিসেবে রেজিস্ট্রারের অনুপস্থিতিতে স্বাভাবিক কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় কোনো প্রশাসন না থাকায় অনিরাপদ বলেও মনে করেন শিক্ষার্থীরা।এমন পরিস্থিতিতে রেজিস্ট্রার চলে যাওয়ায় প্রশাসনের মধ্যে চলছে সমালোচনা।

আজ (৩ সেপ্টেম্বর) সরজমিনে গিয়ে তার খোঁজ পাওয়া যায়নি,প্রশাসনিক ভবনের একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারী বলেন,হঠাৎ কি কারণে গেছেন বলতে পারি না।কবে আসবেন সেটাও জানা যায়নি।।

জানা যায়,বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মুহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী একের পর এক অবৈধভাবে নানা সুবিধা নিয়েই চলেছেন।
সর্বশেষ গত ৫ ফেব্রুয়ারি ৩য় বারের মতো চুক্তিভিত্তিক তাকে পুনঃনিয়োগ দেওয়া হয়।চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া একজন আবাসিক কর্মকর্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অনুমতি ছাড়া ছুটি কীভাবে ভোগ করছেন সেটি নিয়ে অনেকে সমালোচনা করছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক ভবনের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ নিয়োগ পাওয়ার পর ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৮৬ দিনের মধ্যে ৫৩ দিন ছুটি কাটিয়েছেন। মাঝে ২০ দিন বিরতি দিয়ে আবার টানা ৪০ দিনের ছুটি কাটাতে দেশের বাইরে যান।আবারও ৭ আগষ্ট অসুস্থতার কথা বলে ছুটিতে চট্রগ্রামে চলে যান।কতদিনে অফিসে যোগদান করতে পারবেন তা উল্লেখ করেনি। তবে চিঠিতে তিনি লেখেন,সুস্থ হয়ে কর্মস্থলে যোগদানের আশা রাখি। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা ড.ইউনূস বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন শুনে ৯ আগষ্ট রাতে ক্যাম্পাসে তড়িঘড়ি করে চলে আসেন।এরপর আবার ২ সেপ্টেম্বর কাউকে না জানিয়ে ছুটিতে চলে গেছেন বলে প্রশাসনিক ভবন থেকে জানা যায়।

রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোঃ আলমগীর চৌধুরী শুধু ক্যাম্পাসে অনিয়মিতই নন, বছরের পর বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউজের একটি রুম দখল করে আছেন। এমনকি উপাচার্যের নামে বরাদ্দকৃত একটি গাড়িও সার্বক্ষণিক ব্যবহার করেন তিনি।সর্বশেষ সিন্ডিকেটে বিশ্ববিদ্যালয় জরুরি বন্ধ ঘোষণা করেন।বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেটে মাধ্যমে গাড়ি চলাচল বন্ধ করলেও তিনি তার গাড়ি সার্বক্ষণিক ব্যবহার করেছেন বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন। এক কর্মকর্তা রেজিস্ট্রারকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কিছু বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন।যেহেতু কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীর বাস চলছে না আপনার গাড়ি চললে শিক্ষার্থীরা সমালোচনা করছেন তা বললে তিনি গ্রাহ্য করেননি।

এর আগে চুক্তির শর্ত ভেঙে গত বছর অবৈধভাবে প্রায় দেড় লাখ টাকা ঈদ বোনাস নিয়েছিলেন প্রকৌশলী আলমগীর চৌধুরী। এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে ইউজিসির নির্দেশনায় ওই অর্থ ফেরত দিতে বাধ্য হন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো এক বছরের জন্য রেজিস্ট্রার পদে সর্বসাকূল্যে ১ লাখ ৫ হাজার ৬৬০ টাকা বেতনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালের অবসরে যাওয়া প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী। এরপর ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারসহ আরো কয়েকটি পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও পরিচালকসহ অন্যান্য পদে পূর্ণকালীন কর্মকর্তা নিয়োগের নির্দেশনা দেয়। এই নীতিমালা ও নির্দেশনা অমান্য করে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বিতীয়বারের মতো চুক্তিভিত্তিক পুনঃনিয়োগ পান তিনি। সর্বশেষ চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি আবারো ইউজিসির নির্দেশনা ও চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা নিয়োগ নীতিমালা, ২০২২ লঙ্ঘন করে এক বছরের জন্য তাকে চুক্তিভিক্তিক পুনঃনিয়োগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
প্রতি মাসে লাখ টাকা বেতন নেয়া এই কর্মকর্তা সর্বশেষ মেয়াদবৃদ্ধির পর গত ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত ৮৬ দিনে ছুটি কাটিয়েছেন ৫৩ দিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নথি থেকে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি মাসে ছুটি কাটিয়েছেন ১২ দিন, মার্চ মাসে ছুটি কাটিয়েছেন ৪ দিন এবং এপ্রিল মাসে ছুটি কাটিয়েছেন ২২ দিন। এছাড়া গত তিন মাসে তার নেয়া এসব অফিসিয়াল ছুটির বাইরে সাপ্তাহিক ছুটি ছিল ১৫ দিন। জাতীয় দিবসগুলোতেও তিনি বেশির ভাগ সময় ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থাকেন। এতদিন ক্যাম্পাসে অনুপস্থিতির পর গত ২৯ এপ্রিল থেকে অফিস শুরু করার ২০ দিনের মাথায় আবার ৪০ দিনের ছুটিতে গেছেন। গত ১৯ মে তার নিজের জারি করা এক অফিস আদেশে দেখা যায়, ২২ মে থেকে ২৬ জুন পর্যন্ত ছুটিতে তিনি অস্ট্রেলিয়া অবস্থান করবেন এবং আগামী ৩০ জুন ২০২৪ তারিখে কর্মস্থলে যোগদানের আশা করেন। আবার ৭ আগষ্ট অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটিতে চলে যান,তার নিজের জারি করা অফিস আদেশে দেখা যায়,সুস্থ হয়ে কর্মস্থলে যোগদানে আশা রাখি বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বিশ্ববিদ্যালয়ে আসছেন শুনে তড়িঘড়ি করে ৯ আগষ্ট ক্যাম্পাসে চলে আসেন।

একজন আবাসিক এবং প্রধান কর্মকর্তার এভাবে দিনের পর দিন অফিসে অনুপস্থিতির ফলে ক্যাম্পাসে সমালোচনা চলছে। এছাড়া তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ায় তার এতদিন ছুটি নেয়া অবৈধ বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত এ বিষয়ে জানার জন্য রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আলমগীর চৌধুরীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

এসএস/

spot_img
spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ প্রকাশিত

spot_img