এডুকেশন টাইমস ডেস্ক: বাংলার প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা কলেজে ১৮৩ বছরেও ঠিক হয়নি ত্রুটিপূর্ণ ড্রেনেজ ব্যবস্থা। ফলে যত্রতত্র পানি জমে কলেজে ডেঙ্গু রোগের ঝুঁকি বেড়েছে বহুগুণ। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরাজ করছে ডেঙ্গু আতঙ্ক। এসব সমস্যা সৃষ্টি হলেও কর্তৃপক্ষ সমাধানে নেই তেমন কোন উদ্যোগ।
কলেজের আবাসিক হলগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত এক মাসে হল থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে অন্তত চারজন শিক্ষার্থী। এছাড়াও প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে।
মশার উপদ্রব বৃদ্ধির বিষয়ে ঢাকা কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ইরাম সুলতানা বলেন, এখন এডিস মশার নানা রকম প্রজাতি দিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হতে দেখা যাচ্ছে। গতবছর কীটতত্ত্ববিদরা বলেছিল এখনই যদি মশা নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয় তাহলে আগামী বছর ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপধারণ করবে। বর্তমানে গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে শহর থেকে প্যাকেটজাত দ্রব্য গ্রামাঞ্চলে যায়, সেই প্যাকেটগুলো অসচেতনভাবে ফেলে দিই। গ্রামে ডেঙ্গু বিস্তারের অন্যতম কারণ। এছাড়াও ডেঙ্গু মশার সৃষ্টির হটস্পট গুলো চিহ্নিত করে ধ্বংস করতে পারলে ডেঙ্গু রোগ হওয়ার সম্ভাবনা ৬০ শতাংশ কমে যাবে বলে জানান তিনি।
কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের দাবি, প্রচণ্ড গরম যেমন এডিস মশা তৈরি হওয়ার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে এবং ভেজা আবহাওয়াও তাই করে। বৃষ্টির কারণে অপরিচ্ছন্ন নর্দমা, ড্রেনসহ বিভিন্ন স্থানের জমে থাকা পানি হলো এডিস মশার হটস্পট বা উৎপত্তিস্থল।
আজ বুধবার (১৩ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা কলেজের আবাসিক হল, মসজিদের এলাকা ও টেনিস গ্রাউন্ডের আশেপাশে বিশাল আকারের ময়লার স্তূপ জমে আছে। কলেজের দশা তলা একাডেমিক ভবনের সামনের ড্রেন ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগ সংলগ্ন ড্রেনে দীর্ঘদিন ধরে পানি জমে আছে।
এছাড়াও ক্যাম্পাসে ময়লা ফেলার পর্যাপ্ত ডাস্টবিন না থাকায় যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা পড়ে আছে। ঢাকা কলেজ ছাত্রদলের সহ সভাপতি পিয়াল হাসানের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ক্যাম্পাসে বেশ কিছু ময়লা ফেলার ঝুড়ির ব্যবস্থা করা হলেও এখন পর্যন্ত কলেজ কর্তৃপক্ষ ডাস্টবিন স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।
এদিকে ইন্টারন্যাশনালের হল কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে তিন বছর ধরে হলের ড্রেনে পানি জমে আছে। ঝোপঝাড়, প্লাস্টিক, ময়লা আবর্জনায় পরিপূর্ণ এ হলের পেছনের ড্রেনগুলো। এছাড়াও আখতারুজ্জামান ইলিয়াস হল, উত্তর ছাত্রাবাস ও হল মাঠে বিশাল ময়লার স্তূপ থাকা যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এ সকল অপরিষ্কার জমাট পানি ও ময়লা আবর্জনার স্তূপ থেকে সৃষ্টি হচ্ছে মশা। মশার উৎপাতে ক্লাসরুম থেকে শুরু করে হলে অবস্থান করা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের।
সদ্য ডেঙ্গু আক্রান্ত ইন্টারন্যাশনাল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী খালিদ বিন ওয়ালিদ বলেন, আমি চার বছর যাবৎ ঢাকায় থাকি। এর আগে আমার কখনো ডেঙ্গু হয় নাই। ইন্টারন্যাশনাল হলে আশার পরে আমার ডেঙ্গু হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল হলের আশেপাশে খুব খারাপ একটা পরিবেশ। মশার উৎপাদন বলা যায় মোটামুটি এখান থেকে হয়। ড্রেনগুলোর খুব খারাপ অবস্থা। আমার সামনে পরীক্ষা ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে পড়াশোনা করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। হলের ড্রেন দ্রুত মেরামতের দাবি জানায়।
মশা নিধনে হল কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নিয়েছে জানতে চাইলে ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রভোস্ট কামরুজ্জামান অনানুষ্ঠানিকভাবে বলেন, ড্রেন পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনেরও রয়েছে। হলের পেছনের ড্রেনের ময়লা-আবর্জনার পরিষ্কারের বিষয়ে গত তিন বছর ধরেই বলা হয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষকে, কিন্তু এখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অধ্যক্ষ স্যার বলেছে, এ বিষয়ে তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়াও হল সমন্বয়ক আনোয়ার স্যার ভালো বলতে পারবে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, পরিচ্ছন্নতার জন্য নিয়মিত কার্যক্রমগুলোর পাশাপাশি অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়ে পরিচ্ছন্নতার কাজগুলো করা হবে। স্থায়ী সমাধানের জন্য ড্রেনেজ লাইনগুলো পরিষ্কার করার ব্যবস্থা করা হবে। ড্রেনেজ লাইনগুলো উঁচুনিচু আছে এর সাথে বৈদ্যুতিক লাইন আছে এজন্য এ কাজগুলো নিজেরা করতে পারছি না। সিটি কর্পোরেশন ছাড়া পরিচ্ছন্নতা এ কাজগুলো কলেজের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। ২০ নভেম্বরের পরে এ কাজগুলো শুরু করা হবে। ময়লা ফেলার জন্য ট্রলি ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে। আমরা মসজিদের টয়লেট সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।
এসএস/
মন্তব্য করুন