শাবিপ্রবি প্রতিনিধি: সম্প্রতি শাবিপ্রবির সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শেখ ফাকাব্বির সিনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও জুলাই বিপ্লবে শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৮ জানুয়ারি) দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে জড়ো হয়ে নানা রকম স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। স্লোগান শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে চেতনা-৭১ এ এসে বক্তব্যের মাধ্যমে শেষ হয়।
বিক্ষোভ মিছিলে সন্ত্রাসীদের ঠিকানা, ‘এই ক্যাম্পাসে হবে না’ ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে, ‘ডিরেক্ট অ্যাকশন’ সন্ত্রাসী কার্যক্রম, এই ক্যাম্পাসে চলবেনা’ ইত্যাদি স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, গত রবিবার রাত ১০টার দিকে শেখ ফাকাব্বির সিন নামের এক শিক্ষার্থী শাহপারণ হলের ৪৩৬নং কক্ষে এসে রুমে থাকা শিক্ষার্থীদের উপর চড়াও হয়। উচ্চবাক্য করার একপর্যায়ে রুমের থাকা আমিরুল নামের এক শিক্ষার্থীকে চাকু দিয়ে আঘাত করতে গেলে সে কৌশলে রুম থেকে বেড়িয়ে পরে।
রুম থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে অবগত করে এই শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে গার্ডদের সহযোগিতায় রুমের থাকা শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে আটকে রাখা হয়। প্রক্টর, প্রাধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্টরা আসলে প্রক্টর অফিসে নিয়ে থাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এসময় ঐ রুম থেকে একটি চাকু উদ্ধার করা হয়।
ওই রুমের শিক্ষার্থী আবু হুরাইয়রা রাতিন বলেন, তখন আমি, আশিকুজ্জামান (রাসেল) ও আরমান তিনজন রুমের ভিতর আটকা পরে যাই। তখন সে আমাদেরকে চাকু দিয়ে ভয় দেখাতে থাকে। সে নিজেকে খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে দাবি করে ইউটিউব থেকে তার সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ দেখায়। একপর্যায়ে সে নাইম সরকার (ছাত্রদল নেতা) কে ফোন দিয়ে বলে যে শিবিরের ছেলেরা আমাকে আটকিয়ে রেখেছে। আপনি আসবেন নাকি আমি নিজের স্টাইলে ’তিনটাকে শুইয়ে’ বেড়িয়ে আসবো। তখন নাইম সরকার থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিতে বলে।
তখন সে রাত সাড়ে দশটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ফেসবুকে গ্রুপে নিজের শরীরের কিছু আঁচড়ের ছবি শেয়ার করে লিখেন, “হলে ম্যাচের টাকা আনতে গেলে শিবিরের ছেলেরা থাকে রুমে আটকিয়ে কুপিয়ে জখম করে।” এর কয়েকঘণ্টা পর সে আরেকটি পোস্টে লিখেন, “আমার আগের পোস্টটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ছিল। আমি এটি উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কাজটি করেছি। ছাত্রশিবিরকে সবার সামনে খারাপভাবে উপস্থাপন করার জন্য করেছি।
শেখ ফাকাব্বির সিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে জড়িত। খুলনার একটি হত্যা মামলার ২নং আসামিও সে। তাছাড়া খুলনায় তার কিছু সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
বিক্ষোভ সমাবেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও নির্বাহী কমিটির সদস্য আসাদুল্লাহ আল গালিব বলেন, ৫ আগস্টের পর আমরা একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস চেয়েছিলাম কিন্তু কিছু দুষ্কৃতকারী পুরোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আবারও অপরাজনীতির চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, ফাকাব্বিরের মতো যে-সকল সন্ত্রাসীরা ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আহ্বান জানাই।
তিনি আরো বলেন, জুলাই বিল্পবের ছয়মাস হতে চললো কিন্তু শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো কোন ব্যবস্থা নেয় নি। আপনাদেরকে বলতে চাই শিক্ষার্থীদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে আপনারা পদে বসেছেন। আপনারা যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেন তাহলে আমরা আপনাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াব।
এই ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থী শেখ ফাকাব্বির সিন একাধিকবার কল দিলেও কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোখলেসুর রহমান বলেন, “আন্দোলন চলাকালে সহিংস ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে গত দুই মাস আগে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর একটি রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল। সে রিপোর্ট সিন্ডিকেট মিটিংয়ে উত্থাপন করে প্রমাণ সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একটি ফাইনাল রিপোর্ট তৈরি করেছে। তবে প্রশাসন এখনো এ রিপোর্ট প্রকাশ করেনি। করলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অভিযুক্ত ছাত্রদল কর্মী ফাকাব্বিরের বিষয়ে তিনি বলেন, “ফাকাব্বিরের ঘটনায় ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালককে আহ্বায়ক তিন সদস্য বিশিষ্ট আজ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির তদন্ত রিপোর্টের সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
এএকে/