ইবি প্রতিনিধি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) প্রশাসন কর্তৃক আইন বিভাগের সিনিয়র অধ্যাপক ড. জহুরুল ইসলামের গবেষণায় বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গবেষণার জন্য ‘সবেতনে শিক্ষাছুটি’র মেয়াদ বৃদ্ধি রুটিন ওয়ার্ক হওয়া সত্ত্বেও তার ছুটি মঞ্জুর করা হয় নি। এছাড়াও প্রশাসন তাকে অবগত না করেই বেতন বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ করেন এই অধ্যাপক।
গতকাল বুধবার (২২ জানুয়ারী) রাত ১০ টায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে যোগ দিয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুনজুরুল ইসলাম নাহিদ, সাধারণ সম্পাদক আজাহারুর ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিব রেদোয়ান এবং সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাজুল জায়িমসহ অন্য সাংবাদিকরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অধ্যাপক ড. জহুরুল ইসলাম।
লিখিত বক্তব্যে ড. জহুরুল ইসলাম বলেন, আমি ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ডেকোটায় ইন্সট্রাকশনাল ডিজাইন এন্ড টেকনোলজি বিষয়ে এমএস ডিগ্রীতে ভর্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। সে আলোকে ২ বছরের MS ডিগ্রীর জন্য গত ১৭ মে ২০২৩ তারিখ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটি বিধির 20(a)(i), (iv), (d) ধারা অনুযায়ী ২১ আগস্ট ২৩ তারিখ হতে প্রাথমিকভাবে ১ বছরের জন্য সবেতনে শিক্ষা ছুটির আবেদন করি। ইতোপূর্বে আমার কোন শিক্ষা ছুটি না থাকায় আমার আবেদন বিবেচনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নোটিং দেন এবং বিধি অনুযায়ী শিক্ষা ছুটি সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিংয়ে এজেন্ডাভূক্ত হয়। কিন্তু শিক্ষা ছুটি সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটি কর্তৃক ‘পিএইচডি ডিগ্রী থাকায় এমএস প্রোগ্রামে ছুটি দেওয়ার বিধান ছুটি বিধিতে নাই’ গ্রাউন্ডে আমার আবেদন বিবেচিত হয় না। কিন্তু পিএইচডি ডিগ্রী থাকলে এমএস বা অন্য কোন ডিগ্রীর জন্য ছুটি দেওয়া যাবে না এরূপ কোন বিধান ছুটি বিধিতে নেই। তৎকালীন উপাচার্যকে আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণের অনুরোধ করা হলে তিনি স্ট্যান্ডিং কমিটির সিদ্ধান্তের বাইরে কোন পদক্ষেপ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। তবে কোন গবেষণার প্রস্তাব পেলে তা বিবেচনার আশ্বাস দেন। পরে আমি ১ বছরের জন্য স্যাবাটিক্যাল লিভের জন্য আবেদন করি এবং কর্তৃপক্ষ গত ৩০ জুলাই ২০২৩ খ্রী. তারিখে আমার অনুকূলে ১ বছরের স্যাবাটিক্যাল লিভ মঞ্জুর করেন।
পরবর্তীতে University of North Dakota হতে NSF EPSCOR “Tribal Energy Sovereignty” প্রজেক্টে Graduate Research Assistant হিসেবে নিযুক্ত হওয়ায় আমি গত ৯ আগস্ট ২০২৩ তারিখে স্যাবাটিক্যাল লিভের পরিবর্তে ছুটি বিধির 20(vii) ধারা অনুযায়ী বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা প্রজেক্টে কাজের জন্য সবেতনে শিক্ষা ছুটির আবেদন করি এবং স্ট্যান্ডিং কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী গত ১৬ আগষ্ট ২০২৩ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমার অনুকূলে ২১ আগষ্ট ২০২৩ হতে ২০ আগস্ট ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত ১ বছরের সবেতনে শিক্ষা ছুটি মঞ্জুর করেন।
পরবর্তীতে নিয়ম অনুয়ায়ী আমি একই প্রোগ্রাম ও প্রজেক্টে গবেষণায় নিযুক্ত থাকার ডকুমেন্টসহ গত ২৭ জুলাই ২০২৪ তারিখে আমার চলমান শিক্ষা ছুটি পরবর্তী ১ বছরের জন্য বৃদ্ধির আবেদন করি। আইন বিভাগ থেকে প্লানিং কমিটির সুপারিশ করে আমার আবেদন বিবেচনার জন্য কর্তৃপক্ষের বরাবরে প্রেরণ করা হয়। পরে স্ট্যাডিং কমিটির সভায় আমার ছুটি বৃদ্ধির বিষয়টি এজেন্ডাভূক্ত হয়। কিন্তু আমার দ্বিতীয় বছরের ছুটি মঞ্জুর একটি রুটিন ওয়ার্ক হওয়া সত্ত্বে ২ মাসেরও বেশী সময় পরে আমাকে পত্র দিয়ে ছুটি মঞ্জুর হয় নি মর্মে জানানো হয় এবং ১ মাসের মধ্যে কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়। এবং সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আমাকে অবগত না করে আমার বেতন বন্ধ করা হয়। আমি আমার সুপারভাইজারের রিকান্ডডেশনসহ ছুটির আবেদন পুন:বিবেচনা জন্য ৩০ অক্টোবর ২০২৪ আবেদন করি। রিভিউ আবেদনটি যথারীতি নথিভূক্ত হয় এবং উপাচার্য স্ট্যান্ডিং কমিটির এজেন্ডাভূক্ত করেন। কিন্তু গত ৯ ডিসেম্বর ২০২৪ উপ উপাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আমার আবেদন আলোচনারই কোন সুযোগ দেওয়া হয় নি। আমি আশঙ্কা করছি আমার বিষয়ে যেকোন ধরণের নেতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে প্রশাসন কুণ্ঠাবোধ করবেন না।
এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক জহুরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষা ছুটি কোন অধিকার নয়, এটা সুবিধা। শিক্ষকগণের এই সুবিধা প্রদান করা হয় শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ৫ বছরের সবেতনে শিক্ষা ছুটির সুবিধা পেয়ে থাকেন। সেই সাথে গবেষণার জন্য সবেতনে ১ বছরের স্যাবাটিক্যাল লিভ, ২ বছরের পোস্টডক, ২/৩ বছরের অর্জিত ছুটি, ৪ বছর বিনা বেতনে লিয়েন ছুটি এবং কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে একট্রা অর্ডিনারি লিভ পেয়ে থাকেন। কিন্তু আমার মাত্র ১ বছর ছুটি ভোগ যেনো বিশাল অন্যায় হয়ে গেছে। যার কারনে আমি অপরাধী। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত ছিলো বিদেশে উচ্চশিক্ষাকে উৎসাহিত করা।
আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. খন্দকার তৌহিদুল আনাম বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানিনা, আমি এমন কিছুই শুনিনি।
এএকে/