কুবি প্রতিনিধি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ ৯ বছর পেরিয়ে দশ বছরে পদার্পণ করেছে। দশম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে নানা আয়োজনসহ ‘জুলাই বিপ্লব পরবর্তী শিক্ষাঙ্গন ও গণমাধ্যম’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১ টার দিকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক মো. মশিউর রহমানের সঞ্চালনায় ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের কনফারেন্স রুমে আলোচনা সভাটি শুরু হয়।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দিনসহ বিভাগটির শিক্ষক ও বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। এরপর মুক্তমঞ্চে কাক কাটা হয়।
আলোচনা সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুতাসিম বিল্লাহ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী এম. আনিছুল ইসলাম এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ড. শামীমা নাসরিন। এছাড়া সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহকারী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান।
প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুতাসিম বিল্লাহ বলেন, ‘আজকে আমার ধারণা জুলাই বিপ্লবের ওই সময়টাতে যারা আন্দোলন করেছে তাদের বাইরেও অনেকেই চেয়েছিলো তারাও আন্দোলনে আসবে কিন্তু আসেনি কেন? কারণ একটা ভয় ছিল। যদি তারা আসে তাহলে তারা হয়তো তাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান সবকিছু থেকে বঞ্চিত হবে। এই ভয়ের পিছনেও একটা কারণ আছে, সেটা হলো আত্মসম্মানবোধ কম থাকা। আর এটা কমে যাওয়ার পিছেনে কারণটা হচ্ছে অলসতা।’
তিনি আরও বলেন, ‘অলস মানুষ সব সময় অন্যের ওপর ভর করে নিজেদের চালিয়ে নিতে চায়। আমরা জানি মানুষ তিন ক্যাটাগরির থাকে ইন্ডিপেন্ডেন্ট, ডিপেন্ডেন্ট ও ইন্টার ডিপেন্ডেন্ট। আর এই ডিপেন্ডেন্ট মানুষগুলো সব সময় চায় অন্যের ওপর ভর করে চলতে। আর এখান থেকেই আমাদের রাজনৈতিক কার্যক্রমগুলো চলে। আমরা যদি ওয়েস্টার্নদের ফিলোসোফির কথা চিন্তা করি, ওদের যে ন্যারেটিভ এটাকে যদি আমরা কোনকিছু চিন্তা করা ছাড়া বিশ্বাস করে নেয় এটা একধরনের ডিপেন্ডেন্সি। যখন আমরা কোন ওয়েস্টার্ন থিওরিকে লোকাল থিওরি দ্বারা পরীক্ষা না করে বিশ্বাস করি এটা একধরনের লুকায়িত সাইন্সের জন্ম দেয়। তাই আমাদের পশ্চিমা ন্যারেটিভ বিশ্বাস করার আগে চিন্তা করে দেখতে হবে যে এখানে ওদের কোন স্বার্থ হাসিলের জন্য এগুলো তৈরি করছে কিনা। কিন্তু যখন আমরা কোন কিছু চিন্তা না করে তাদের এই ন্যারেটিভ বিশ্বাস করব, আমাদের রিজিওনাল জায়গা থেকে প্রশ্ন না করেই এগুলো মেনে নিব তখন একটা জাতি একটা ফ্যাসিজম থেকে মুক্ত হয়ে আরেকটি ফ্যাসিজমের মধ্যে পতিত হবে।’
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী এম. আনিছুল ইসলাম বলেন, ‘গণমাধ্যমে ফ্যাসিজম তৈরি হয় যখন আপনি মেনে নেন। জুলাইয়ে যখন চুপ না থেকে এর বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলে তখনই ফ্যাসিস্ট পালাতে বাধ্য হয়েছে। গণমাধ্যমের ফ্যাসিজম দূর করতে পারে আপনার আমার আওয়াজ। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার ফ্যাসিজম আঁকরে বসেছে, শিক্ষার্থীদের মতামতকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা আবার জেগে উঠলে এখান থেকেও ফ্যাসিবাদ বিলুপ্ত করা সম্ভব।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই অন্তর্বতীকালীন সরকার জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থ হয়েছে। সাধারণ মানুষ, ব্যাবসায়ীসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষ এখন অনিশ্চয়তার সময় পার করছে। এখন এই সরকারের আচরণেও ফ্যাসিজম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাই সরকারকে উচিৎ একটি গণতান্ত্রিক ধারা তৈরি করে ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়া।’
বিভাগটির বিভাগীয় প্রধান মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ ১০ম বছরে পদার্পণ করেছে, বিষয়টা আনন্দের। নতুন জ্ঞান সৃষ্টি ও প্রফেশনাল যোগাযোগবিদ তৈরিতে এই বিভাগ সামনের দিনগুলোতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে এই স্বপ্ন দেখি।’
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮তম বিভাগ হিসেবে যাত্রা শুরু করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ।
/ইএইচ