চবি প্রতিনিধি: পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের উপর হামলা ও হেনস্তার ঘটনায় মানববন্ধন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (চবিসাস)।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ভুক্তভোগী সাংবাদিকবৃন্দ ও চবিসাসের নেতৃবৃন্দ।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে ঢাকা মেইলের ক্যাম্পাস প্রতিবেদক ভুক্তভোগী সাংবাদিক রেদ্ওয়ান আহমদ বলেন, ‘একদল ছাত্র রাত ১১টার দিকে শেখ হাসিনা হলের সামনে থাকা হাসিনার ম্যুরাল ও পাকা-নৌকা ভাঙতে যায়। ঘটনার খবর পেয়ে আমরা কয়েকজন ক্যাম্পাস সাংবাদিক সেখানে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য ছুটে যাই। মেয়েরা হলের পশ্চিম দিকের গেইট ভেঙে শেখ হাসিনার ম্যুরাল এবং নৌকা প্রতীক ভাঙতে বাঁধা দিয়ে ছাত্রদের ইট-পাটকেল ছুঁড়তে থাকলে একপর্যায়ে তারা সরে যান।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসময় আমরা ঘটনার ছবি-ভিডিও ধারণ করলে ছাত্রীরা আমাদেরকে পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাঁধা দেন। সাংবাদিকের হেনস্তা করে উচ্চবাচ্য করেন, গালিগালাজ করেন, ফোনও কেড়ে নেন। এমনকি ছবি-ভিডিও ধারণ করলে তারা দুইজন সাংবাদিকের গায়ে হাত তুলেন। আমরা এই ঘটনার দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচার চাই। আমরা ক্যাম্পাসে স্বাধীন সাংবাদিকতা করতে চাই।’
এসময় ভুক্তভোগী সাংবাদিক আকিজ মাহমুদ বলেন, আমরা সাংবাদিক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব পালন করতে শেখ হাসিনা হলের সামনে গিয়েছি। কিন্তু, আবাসিক ছাত্রীরা আমাদের ওপরে চড়াও হয়ে হামলা করেছে। তাদের এমন আচারণ ন্যাক্কারজনক। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। এই ঘটনার সাথে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদের আমলে যেখানে ক্যাম্পাস প্রতিনিধিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিষয়ের ওপর নজর রেখেছে, সকল অনিয়মের বিষয়ে তাদের কলম চালিয়েছে। হামলা করে সাংবাদিকদের কলম বন্ধ করা যাবে না।
সমাবেশে শেখ হাসিনা হলের আবাসিক ছাত্রীদের দ্বারা হেনস্তার শিকার নারী সাংবাদিক অনিন্দিতা সরকার প্রথা বলেন, ‘আমরা সাংবাদিক, আমরা ফোর্থ স্টেট। কেউ আমাদের ক্যামেরা অফ করার জন্য অর্ডার করতে পারে না। ছবি তোলার জন্যও অর্ডার করতে পারে না। আমরা সত্যনিষ্ঠ কাজটা করতে যাই। আজকে শেখ হাসিনা হলের মেয়েরা সাংবাদিকদের সাথে যে আচরণ করেছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা তাদের সমস্যাটাই জানতে গিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, নারী সাংবাদিক হিসেবে তারা আমার সাথেও বেশ ন্যাক্কারজনক আচারণ করে। কিন্তু কোনো ঘটনা ঘটলেই সবার আগে ক্যাম্পাস প্রতিনিধিরা নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে চলে আসে। কিন্তু তারা সাংবাদিকদের ওপর হামলা করে ফ্যাসিবাদের স্বরূপ দেখিয়েছে।
এসময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য মাহফুজ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে সাংবাদিকদের উপর এমন নেক্কার জনক হামলা খুবই নিন্দনীয়। সাংবাদিক সমাজ কখনোই কারো আধিপত্যের কারণে দমে যাইনি। আর দমন নিপীড়নের মাধ্যমে সাংবাদিক সমাজের মুখ কখনোই বন্ধ করা যায় না। শেখ হাসিনা হলের শিক্ষার্থীদের কেমন আচরণ ছাত্রলীগ করতো। এই ঘটনায় যারা জড়িত রয়েছে তাদেরই নিশ্চয়ই কোন দুরভিসন্ধি ছিল। জড়িতদের সনাক্ত করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। যাতে অন্য কেউ কখনোই সাংবাদিক সমাজের উপর হামলা করার দুঃসাহস দেখাতে না পারে।
চবিসাসের দপ্তর, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. জানে আলম বলেন, গতকাল রাতে শেখ হাসিনা হলে যে ঘটনাটি ঘটেছে এর তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি৷ ইতোপূর্বে আমরা দেখেছি জুলাই গণ অভ্যুত্থানের সময় যখন মেয়েদেরকে আবাসিক হল থেকে জোরপূর্বক বের করে দিচ্ছিলো প্রশাসন তখন চবি সাংবাদিক সমিতির নেতৃবৃন্দ ও আমার সহকর্মীরা তাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। মিডিয়াকে তাদের মতো করে লাজ করতে দিন৷ যারাই এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে তাদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চবি প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানাই এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হোক।
চবিসাস সভাপতি মোহাম্মদ আজহার বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি জুলাই অভ্যুত্থানে যে অবদান রেখেছে সেটি সারা বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে। জুলাই অভ্যুত্থানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় কণ্ঠস্বর ছিল এই সাংবাদিক সমিতি। আজ এই সমিতির বিরুদ্ধেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্রীরা অবস্থান নিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, নতুন প্রশাসন আসার পরে ছেলেদের আবাসিক হলগুলোতে এলোটমেন্ট দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে হলগুলো থেকে অনেকাংশেই ছাত্রলীগ বিদায় নিয়েছে। কিন্তু মেয়েদের হলগুলোতে আগে থেকেই এলোটমেন্ট থাকায় এখানে এখনো ফ্যাসিবাদের দোসররা অবস্থান নিচ্ছে। আমরা জানি আপনারা কারা। অতি শীগ্রই আপনাদের মুখোশ উন্মোচিত হবে। আমরা প্রশাসনকে বলে দিতে চাই, দ্রুত ব্যবস্থা নিন। আমরা সেই সংগঠন যারা ফ্যাসিবাদের সময়েও একদিনের মধ্যে এমন ঘটনার ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছি।
এএকে/