রাতুল সাহা, বুটেক্স: বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুটেক্স) ক্লাসরুমের সংকট নিরসন এবং শিক্ষার পরিবেশ বিস্তৃতির লক্ষ্যে ২০১৭ সালের বঙ্গবন্ধু ভবন নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়ে সে বছরই নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রায় দুই বছর আগে থেকে ভবনটিতে শুরু হয় নিয়মিত ক্লাস কার্যক্রম। অ্যাকাডেমিক কার্যক্রমের বেশিরভাগই চলে এখানে।
তবে ভবনটিতে রয়েছে নানা সমস্যা। সুপেয় পানির ব্যবস্থা না থাকা, ওয়াশরুমের নানা সমস্যা এবং সেসব বিষয়ে সঠিক তদারকির অভাব নিয়ে অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। তীব্র তাপদাহে মৌলিক চাহিদা পানির ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। বারবার বলার পরও সমস্যার সমাধান না হওয়া, কিছু ক্ষেত্রে সমাধান করলেও তা কিছুদিনের মধ্যেই পুনরায় সমস্যা তৈরি হচ্ছে।
ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে সুপেয় পানির ফিল্টারের ব্যবস্থা থাকলেও অকেজো হয়ে পড়ে আছে ফ্লোরের পানির ট্যাপগুলো। এতে পানির জন্য এক ফ্লোরের শিক্ষার্থীদেরকে অন্য ফ্লোরে যাওয়া লাগছে। পাশাপাশি রয়েছে আরও সমস্যা। প্রতিটি ফ্লোরের ওয়াশরুমে হাই-কমোড ও লো কমোডের ফ্ল্যাশ, ওয়াটারগান কাজ না করা, আবার সেসব না থাকাসহ ওয়াশরুমের লাইট নষ্ট পাওয়া যায়। ওয়াশরুমগুলোতে নেই সাবান, হ্যান্ড ওয়াশ, টিস্যু পেপার, টাওয়েলসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি। নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণে অপরিচ্ছন্ন টয়লেট থেকে নির্গত হচ্ছে দুর্গন্ধ। যা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করে।
ছেলেদের ক্ষেত্রে গ্রাউন্ড ফ্লোর, ২য়, ৩য়, ৮ম ও ১০ম তলায় এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে গ্রাউন্ড ফ্লোর, ৪র্থ, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলায় খাবার পানির ফিল্টার নষ্ট পাওয়া গেছে। তাছাড়া বিভিন্ন ফ্লোরে খাবার পানির ট্যাপ সংলগ্ন বেসিনও নষ্ট পাওয়া গেছে। ক্যান্টিনের ওয়াশরুমে ১১টি বেসিনের মধ্যে ৫টি বেসিন নষ্ট পাওয়া গেছে। প্রতিটি ফ্লোরে ছেলে ও মেয়েদের আলাদা ওয়াশরুমের ব্যবস্থা থাকলেও ক্যান্টিনের হাত ধোয়ার ওয়াশরুমটা কম্বাইন্ড হওয়ায় তা অনেকের কাছে বিব্রতকর মনে হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ছেলেদের ওয়াশরুমের ক্ষেত্রে ২য় তলায় সবগুলো ফ্ল্যাশ ও ওয়াটার গান নষ্ট, ৩য় ও ৪র্থ তলায় প্রত্যেকটিতে ৬টি কমোডের মধ্যে ৪টি কমোডের ফ্ল্যাশ নষ্ট, ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলায় ৬টি কমোডের মধ্যে প্রতিটিতে ১টি করে ফ্ল্যাশ ও ২টি করে ওয়াটার গান নষ্ট, ৭ম তলায় ১টি ফ্ল্যাশ ও ১টি ওয়াটার গান নষ্ট, ৮ম তলায় ৩টি ফ্ল্যাশ ও ২টি ওয়াটার গান নষ্ট, ৯ম তলায় ২টি ওয়াটার গান এবং ১০ম তলায় ২টি ফ্ল্যাশ ও ২টি ওয়াটার গান নষ্ট।
মেয়েদের ওয়াশরুমে গ্রাউন্ড ফ্লোরে ৪টি, ২য় ও ৩য় ফ্লোরে ৩টি করে, ৪র্থ তলায় ১টি, ৫ম তলায় ২টি, ৬ষ্ঠ তলায় ৩টি, ৭ম তলায় ১টি, ৮ম তলায় ৪টি, ৯ম তলায় ৫টি ও ১০ম তলায় ১টি ফ্ল্যাশ নষ্ট পাওয়া গিয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন ফ্লোরে ওয়াটার গানসহ ওয়াশরুমের বাতিও নষ্ট পাওয়া গেছে।
উক্ত সমস্যা নিয়ে ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তৈয়বা ভূঁইয়া বলেন, তীব্র গরমে বেশিরভাগ সময় ফিল্টারে পানি না থাকায় তৃষ্ণার্ত অবস্থায় দীর্ঘ সময় ক্লাস করে খুবই ক্লান্ত লাগে। নামমাত্র একটা হ্যান্ড ওয়াশ থাকলেও নেই কোনো টিস্যু বা পেপার টাওয়েলের ব্যবস্থা। এছাড়া বাজে দুর্গন্ধ তো রয়েছেই। রোজার বন্ধের পর বেসিন থেকেও বের হচ্ছিল ডিসকালারড ময়লা পানি।
একই বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম বলেন, অজুতে পা ধোয়ার জন্য নিচু কল থাকলে অনেক ভালো হতো। যদিও নিচ তলার কমন রুমের পাশে একটা অজুখানা আছে। তবে ওইটা এত নোংরা যে কষ্ট করে নিজের ফ্লোরেই অজু করতে যেতে হয়। আবার ক্লাসের ফাঁকে হলে গিয়ে অজু করে নামাজ পড়ে আসার মত সময়ও থাকে না।
৪৮তম ব্যাচের ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী অঙ্গঁন রায় জানান, ভার্সিটি খোলার পর থেকে পানি পাই নাই ফিল্টার থেকে৷ আজকেও খাইতে গেলাম, দেখি যে পানি আসে না৷ এই পিচ গলা, চামড়া পুড়ে যাওয়ার মতো গরমে সবাই যাতে ঠাণ্ডা পানি পাই। এই ব্যবস্থার বাস্তবায়নটা দেখতে চাই আমরা বুটেক্সের সাধারণ শিক্ষার্থীরা৷
অভিযোগগুলো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কাবেরী মজুমদারের সাথে কথা বললে তিনি জানান, এই বিষয়গুলো প্রতি ডিপার্টমেন্টের বিভাগীয় প্রধান দেখেন।বিভাগীয় প্রধান পরবর্তীতে ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনকে অবগত করলে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবে। তারপরও আমি ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনে সমস্যা সমাধানের জন্যে বলে দিবো।
ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মো: আফজাল হোসেন বলেন, এ সকল সরঞ্জামাদি ইঞ্জিনিয়ারিং অফিস সরাসরি ক্রয় করে না। আপনাদের সমস্যা সম্বলিত দরখাস্ত বুটেক্সের প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্টের পরিচালক মহোদয়ের কাছে জমা দেন। পরিচালকের কাছ থেকে আমাদের এখানে ফরোয়ার্ড হলে আমরা সরেজমিনে এগুলো চেক করে একটি প্রতিবেদন স্যারের কাছে জমা দিবো। কারণ এগুলো ইঞ্জিনিয়ারিং অফিস থেকে ক্রয় হয় না।
প্রতিবার শিক্ষার্থীদেরকে কেন আবেদন করতে হবে আর বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ দেখিয়েছেন কিছু শিক্ষার্থী।
এ নিয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইব্রাহীম শেখ বলেন, শিক্ষার্থীদের সকল সমস্যা, চাওয়া পাওয়া নিরসনে সব সময় শিক্ষার্থীদেরই আবেদন করা লাগবে বিষয়টা কাম্য নয়। একটি সাধারণ সমস্যা সমাধানে যদি শিক্ষার্থীদের প্রতিবার প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তাহলে বিষয়টা আসলেই ভোগান্তির। কর্তৃপক্ষের উচিত শিক্ষার্থীদের লিখিত আবেদনের অপেক্ষায় না থেকে নিজেরাও সমস্যা নিরসনে অগ্রগামী হওয়া এবং শিক্ষার্থীবান্ধব হওয়া।
এসআই/
মন্তব্য করুন