কুবি প্রতিনিধি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন নিজ কার্যালয়ে প্রবেশ করতে গেলে শিক্ষক সমিতির বাধার সম্মুখীন হন। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মী ও শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের মধ্যে মারামারি ও উপাচার্যের সাথে শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
রবিবার (২৮ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন দুপুর ১টা ১২ মিনিটে কার্যালয়ে প্রবেশ করতে গেলে এই ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্র মতে জানা যায়, দুপুর ১টা ১২ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন নিজ কার্যালয়ে প্রবেশ করার জন্য প্রশাসনিক ভবনে আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি উপাচার্যকে প্রবেশে বাঁধা দেয়। এই ঘটনার সূত্র ধরে প্রথমে শিক্ষক সমিতির সাথে উপাচার্যের ধাক্কাধাক্কি হয়। পরবর্তীতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত শাখা ছাত্রলীগের আগামী কমিটিতে পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের সাথে শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের মারামারির ঘটনা ঘটে।
এই মারামারির ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগে পদপ্রত্যাশী আমিনুর বিশ্বাসকে শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ মারধর করেন। এছাড়া শাখা ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীরা আবার শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের উপর চড়াও হন। এ সময় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শামিমুল ইসলাম, লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড.জান্নাতুল ফেরদৌসসহ আরো চারজন শিক্ষক আহত হয়েছেন বলে জানা যায়।
এ ব্যাপারে লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, ‘একাধিকবার শিক্ষকদের উপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা, সাবেক শিক্ষার্থীরা আক্রমণ করেছে। এইরকম ঘটনা কোনো বিশ্ববিদ্যালয়েই ঘটে নাই। আজকের এই ঘটনার পর আমরা উপাচার্যের পদত্যাগ চাই।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইভেনিং এমবিএর শিক্ষার্থী বিপ্লব দাস বলেন, ‘আজকে আমরা প্রশাসনিক ভবনে ব্যাংকে ইএমবিএ কোর্সের জন্য টাকা জমা দিতে এসেছিলাম তখন দেখছিলাম উপাচার্য স্যার গেট দিয়ে ঢুকছেন। আমরা তখন শুধু স্যারের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তখনই শিক্ষক সমিতির নেতাকর্মীরা স্যারকে ভিতরে ঢুকতে বাধা দেয়। আমরা সাথে থাকায় আমাদের উপরেও তারা আক্রমণ করেন। আমি নিজে হাতে ব্যথা পেয়েছি। তারপর যখন শিক্ষক সমিতির নেতাকর্মীদের জিজ্ঞেস করতে যাই স্যার আপনারা কেন আমাদের সাথে এমন করলে তখন তারা আবার আমাদের উপরে আক্রমণ করেন। আমাদের একজন ব্যথা পেয়ে হাসপাতালে আছেন।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, ‘উপাচার্য আজকে যা করেছেন তা সারা দেশের উপাচার্যমহলের জন্যই লজ্জাজনক। উনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দ্বারা পরিকল্পিতভাবে শিক্ষকদের উপর হামলা করেছেন। আবার তিনি মিথ্যাচার করছেন আমরা তাঁকে প্রবেশে বাঁধা দিয়েছি। বরং তাদের এসব কার্যক্রমে আমাদের ছয়জন শিক্ষক আহতও হয়েছেন।’
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে কার্যালয়ে প্রবেশের বাঁধা দেয়ার সময় শিক্ষক সমিতির সাথে ধাক্কাধাক্কি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে দাবি তারা তাদের কার্যক্রম চালাতে গিয়ে হেনস্তার শিকার হয়েছেন।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য আমরা তালা ভেঙেছি। মাননীয় উপাচার্য স্যার যখন তার কার্যালয়ে যাওয়ার জন্য যখন প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশ করতে যায় তখন তারা বাধা দেয় এবং উপাচার্যকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। তখন আমাদের প্রক্টরিয়ালবডির যারা দ্বায়িত্ব পালন করছিলেন তাদেরকেও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে তারা। আমি নিজেও আমার হাতে ব্যথা পেয়েছি।’
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ আবদুল মঈন বলেন, ‘আমাকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি দায়িত্ব দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়কে সঠিকভাবে পরিচালনা করার জন্য। অথচ এরা কারা? এখানে (প্রশাসনিক বিল্ডিংয়ে) প্রবেশ করার সময় শিক্ষক সমিতির তিনজন আমার গায়ে হাত তুলেছে। একজন সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, যাকে অন্যায় ছুটি দেই নাই বলে আজ পার্সোনালি আমাকে আক্রমণ করেছে। আরেকজন হলো মোর্শেদ রায়হান, যিনি নম্বর টেম্পারিংয়ের দায়ে অভিযুক্ত। আরেকজন হলো মার্কেটিংয়ের শিক্ষক মাহফুজ। এই ছেলে আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিতে চেয়েছিলো। এসব কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মত না। আমি পুরো জাতির কাছে জানাতে চাই, এই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে তালা সংস্কৃতি বন্ধ করতে চাই।’
এর আগে গতকাল শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন দপ্তরে আবারো তালা দেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষের গাড়ি আটকে পথরুদ্ধ করে রাখেন এবং রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
এসআই/
মন্তব্য করুন