spot_img

জাবি থিয়েটার সম্পাদকের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীর নিপীড়নের অভিযোগ

এসম্পর্কিত আরো পড়ুন

জাবি প্রতিনিধি:

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাংস্কৃতিক সংগঠন জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের (অডিটোরিয়াম) সাধারণ সম্পাদক চন্দন সমাদ্দার সোম হিমাদ্রীর বিরুদ্ধে এক নারী শিক্ষার্থী শারীরিক ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে।

- বিজ্ঞাপন -

রবিবার (২৮ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেয়। অভিযুক্ত হিমাদ্রী বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের (২০১৭-১৮ সেশন) ভর্তি হন। তবে তিনি এখন ২০১৮-২০১৯ সেশনের সাথে পড়ালেখা চালিয়ে যাচেছন।

অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, ২০২২ থেকে ২০২৩ সালে পর্যন্ত ভুক্তভোগী ও হিমাদ্রীর প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। হিমাদ্রীর দ্বারা চারবার গুরুতরভাবে আহত হয় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। কানের পর্দা ফাটিয়ে দেওয়া, আঙুল ভেঙ্গে দেওয়া, মাটিতে ফেলে বুকের উপর বসে গলা চেপে ধরাসহ কথায় কথায় গায়ে হাত তোলার অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী ।

মারধরের প্রথম ঘটনা ঘটে ২০২২ জুন মাসে। ঘটনাটি ঘটেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এলাকায়। এসময় ভুক্তভোগীর কানের পর্দা ফেটে যায়। প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঘটনাটি ২২ সালের ৬ জুনের। যেখানে দেখা যাচ্ছে ভুক্তভোগী কানে গুরুতর আঘাত পেয়েছে।

ভুক্তভোগী ওই নারী জানান, ওই সময় আমার ফোনটি হিমাদ্রীর কাছে ছিলো । সে ফোনটি দিতে শহীদ মিনারে আসে। তখন সে পিছন থেকে আমাকে ডাক দেয়। আমি শুনতে না পাওয়ায় আমাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালি দেয় । প্রতিবাদ করতে গেলে হিমাদ্রী কানে থাপ্পড় মারে। এতে আমার কানের পর্দা ফেটে যায়।

অভিযোগপত্রে ওই নারী আরো একটি মারধরের বিবরন দিয়েছেন। ঘটনাটি ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের টারজান পয়েন্ট এলাকায় ঘটে। এখানে ভুক্তভোগী অভিযুক্ত দ্বারা এলোপাতাড়ি মারধরে শিকার হন। ভুক্তভোগীর দাবি হিমাদ্রী তাকে মাটিতে ফেলে বুকের উপর বসে গলা চেপে ধরে এবং শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে আর মুখ চেপে ধরে যাতে চিৎকার করতে না পারি। একসময় ভুক্তভোগী উপায় না পেয়ে হিমাদ্রীর হাত কামড় দেয়। এরফলে হিমাদ্রীর হাত কেটে যায় এবং রক্তপাত হয়। এরপর দৌড়ে লোকালয়ে চলে যায় ঐ ছাত্রী। পরে ভুক্তভোগী প্রক্টরের কাছে যেতে চাইলে হিমাদ্রী তাকে হুমকি দেয় এই বলে যে, তৎকালীন প্রক্টর তার নিজের বিভাগের শিক্ষক এবং একই সাথে অজ্ঞাত কারো সাথে ভিডিও কল দিয়ে তার কাটা হাত দেখিয়ে বলতে থাকে তাকে আঘাত করে রক্তাক্ত করা হয়েছে এবং পাশাপাশি ঐ ছাত্রীর চরিত্র নিয়ে কুৎসা রটাতে থাকে।

পরে একই মাসের ৩১ ডিসেম্বর ওই শিক্ষার্থী আবারো মারধরের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ের গনিত বিল্ডিংয়ের সামনে। ঐ দিন রাতে হিমাদ্রী ভুক্তভোগীর সাথে গনিত বিভাগের সামনে দেখা করতে আসে। এক পর্যায়ে হিমাদ্রী তার উপড় ক্ষীপ্ত হয়। হিমাদ্রী তার হাতে ঘুষি মারে, যার ফলে ঐ ছাত্রীর হাতের কনিষ্ঠা আঙ্গুলটি ভেঙ্গে যায় এবং পরবর্তীতে আঙ্গুলটিতে স্থায়ী ক্ষতি সাধিত হয়।

পরবর্তী মারধরের ঘটনা ঘটে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে । ২০২৩ মে মাসে ঘটনাটি ঘটেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকায়। হিমাদ্রী বটতলায় উপস্থিত লোকজনের সামনে ঐ ছাত্রীকে চড় মারে ও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে সে পাশের একটি দোকানের পিছনে নিয়ে ভুক্তভোগীর গলা টিপে ধরে বলে উল্লেখ করেন অভিযোগপত্রে।

এ বিষয়ে হিমাদ্রী মুখ খুলতে রাজি হয়নি। অভিযোগের বিষয়ে চন্দন সমাদ্দার সোম হিমাদ্রী বলেন, এতদিন পরে এসে এইধরনের অভিযোগে আমি বিব্রত এবং বিরক্ত। এতদিন পরে এসে এধরণের কথা আমার জন্য মানহানিকর এবং আমিও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং আমার মনে হয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং মিথ্যামিশ্রিত। তারপরেও যেহেতু আমার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ এসেছে, আমিও চাই এই অভিযোগ যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তদন্ত হোক।

লিখিত অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আলমগীর কবিরের বলেন, আমরা লিখিত অভিযোগপত্র পেয়েছি। ইতিমধ্যে দুজন সহকারি প্রক্টরকে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়া এবং গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রকৃতি বিশ্বাস। প্রতিবেদন দাখিলের পর প্রয়োজনে নিপীড়নবিরোধী সেলে এ অভিযোগ পাঠানো হতে পারে।

এএআর/

spot_img
spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ প্রকাশিত

spot_img