spot_img

বেরোবি উপাচার্যের ইউজিসিকে কেন এই উপেক্ষা

এসম্পর্কিত আরো পড়ুন

বেরোবি প্রতিনিধি:

ইউজিসিকে পাত্তা না দিয়ে কর্মকর্তাদের ৪র্থ গ্রেডে পদোন্নতি দিলেন বেরোবি উপাচার্য। শিক্ষক নেতার স্ত্রী ও জুনিয়র কর্মকর্তাকে সুযোগ দিতেই অনিয়ম!

- বিজ্ঞাপন -

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা লঙ্ঘন করে বিধিবহির্ভূতভাবে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) কিছু কর্মকর্তাকে ৪র্থ গ্রেডে পদোন্নতি দিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ।

শনিবার (২৯ জুন) বিকাল সাড়ে তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হওয়া ১০৫তম সিন্ডিকেট সভায় অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার ও সমপর্যায়ের ৪র্থ গ্রেডে এসব কর্মকর্তার পদোন্নতি অনুমোদন দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. আলমগীর চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

গত মাসের ৩১ তারিখে ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ৩১ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়ার জন্য বাছাইবোর্ড সম্পন্ন করেছিলেন উপাচার্য। কিন্তু ইউজিসির নির্দেশ অমান্য করে পদোন্নতি প্রদানের বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে গত ০১ জুন অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের ১০৩তম সভায় বাছাইবোর্ডের ওই সুপারিশে অনুমোদন দেন নি উপস্থিত সদস্যবৃন্দ।

এ বিষয়ে ইউজিসির নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল।

এছাড়াও ৪র্থ গ্রেডের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার/সমমানের নিয়োগ বোর্ডে বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ৫ম গ্রেডের কর্মকর্তা অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট-১২ শাখার উপসচিব এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার।

১০৩তম সিন্ডিকেট সভায় বিষয়টি ত্রুটিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছিলেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসেন।

এত অনিয়ম এবং ইউজিসির আপত্তি সত্ত্বেও শনিবার অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় ৩১ কর্মকর্তার মধ্যে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ১০ জনের পদোন্নতি অনুমোদন করিয়েছেন উপাচার্য। পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তারা বেশিরভাগই জুনিয়র। তাদের মধ্যে অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদ মন্ডলের স্ত্রী এবং বিভাগীয় মামলায় অভিযুক্ত জনসংযোগের এক জুনিয়র কর্মকর্তা আছেন বলে জানা গেছে। মূলত আসাদ মন্ডলের স্ত্রী এবং জনসংযোগের ওই জুনিয়র কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিতে মরিয়া ছিলেন উপাচার্য। এ কারনেই হাজারো সমালোচনা উপেক্ষা করে এই পদোন্নতি অনুমোদন করিয়ে নেন তিনি।

সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি সভায় উপস্থিত হইনি।

সিন্ডিকেট সদস্য  প্রফেসর ড. মো. মতিউর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,আমি মিটিংয়ে আছি পড়ে কথা বলবো।

সিন্ডিকেট সদস্য সৈয়দ আনোয়ারুল আজিমকে পদোন্নতির বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি মন্তব্য করবেন না বলে জানান।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. হাসিনা খান বলেন,আমি এখন জরুরি মিটিংয়ে আছি, এ বিষয়ে আপনি আগামীকাল কল করেন।

জানা গেছে, এসব পদোন্নতি অনুমোদনের জন্য মাত্র এক দিনের ব্যবধানে দুইটি সিন্ডিকেট সভার আয়োজন করা হয়। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের সংশোধিত এবং ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের মূল বাজেট পর্যালোচনা সংক্রান্ত বিষয়ে বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৪তম সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাত্র এক দিনের ব্যবধানে ২৯ জুন শনিবার আর একটি সিন্ডিকেট সভা আহ্বানের বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা চলছে ক্যাম্পাসে। একটি সিন্ডিকেট সভা আয়োজনের জন্য যেখানে লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়ে থাকে সেখানে এক দিনের ব্যবধানে দুইটি সিন্ডিকেট সভা আয়োজনের বিষয়টি বিলাসিতা বলছেন অনেকে।

এর আগে নজিরবিহীন গোপনীয়তায় কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (৪র্থ গ্রেড) ও সমপর্যায়ের পদে পদোন্নতি দিতে গত ৩১ মে বাছাই বোর্ডের আয়োজন করেছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদ। বিষয়টি জানতে পেরে আগের দিন ৩০ মে বোর্ড বন্ধ করে এ বিষয়ে লিখিতভাবে জানাতে বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দিয়েছিল ইউজিসি। এই নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বাছাই বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে নানা সমালোচনার ঝড় ওঠে। ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করেছিল ইউজিসি কর্তৃপক্ষ। ফলে ০১ জুন অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় এসব সুপারিশ অনুমোদন করা সম্ভব হয় নি।

জানা যায়, এর আগেও কয়েক বার বাছাই বোর্ডের আয়োজন করলে ইউজিসির নিষেধাজ্ঞায় সফল হন নি উপাচার্য। কিন্তু এবার অনিয়ম করে এই পদোন্নতি দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন তিনি। একটু ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে কঠোর গাপনীয়তা রক্ষা করে প্রার্থীদের মোবাইলে কল করে বোর্ডে উপস্থিত হওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।

নথিপত্র থেকে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার ও সমমর্যাদার চতুর্থ গ্রেড এর পদসমূহে কর্মকর্তাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউজিসির বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী উম্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দিতে হবে। এ বিষয়ে ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি নির্দেশনা প্রদান করে ইউজিসি। যাতে বলা হয়েছে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অর্থ ও হিসাব এবং লাইব্রেরি এই চার দপ্তরে ৪র্থ গ্রেডভুক্ত অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার বা সমমানের পদ থাকবে। এই পদসমূহে ইউজিসি’র অনুমোদন সাপেক্ষে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ দিতে হবে, পদোন্নতি/আপগ্রেডেশন/পর্যায়োন্নয়ন দেয়া যাবে না।

ইউজিসির এই নির্দেশনা অমান্য করে বেরোবি’র ভিসি অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার/সমমানের পদে পদোন্নতির জন্য গত ১৯ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে প্রথম বার কর্মকর্তাদের ৪র্থ গ্রেডে পদোন্নতি দেয়ার জন্য বাছাই বোর্ড এর আয়োজন করেছিলেন। বিষয়টি ইউজিসি’র নজরে আসলে ১১ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে পদোন্নতি বা আপগ্রেডেশন কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ প্রদান করে এবং দুই কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা তলব করেছিল।

এরপর ২০২৩ সালের ১১ ডিসেম্বর তারিখে পুনরায় একই পদে আপগ্রেডেশনের জন্য বাছাই বোর্ডের সভা আহ্বান করা হলে কমিশন আবারো ১০ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে পুনরায় এ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দুই কার্যদিবসের মধ্যে কমিশনকে লিখিতভাবে জানাতে বলে। ফলে দ্বিতীয় দফায় বোর্ডের কার্যক্রম ভেস্তে যায়।

ইউজিসির নিষেজ্ঞার কারনে উপাচার্য অধ্যাপক হাসিবুর রশীদ বাছাই বোর্ডের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের আপগ্রেডেশন দিতে না পেরে সরকারি ‘‘চাকরি [স্ব-শাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ] (বেতন ভাতাদি) আদেশ ২০১৫ এর অনুচ্ছেদ ১২’’ এর ভুল ব্যাখাপূর্বক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাগণকে ৪র্থ গ্রেড প্রদানের কার্যক্রম গ্রহণ করলে কমিশন দুই দফা চিঠি দিয়ে সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দিলে এই প্রক্রিয়াটিও বাতিল হয়ে যায়।

এ বিষয়ে ট্রেজারার প্রফেসর ড. মুজিব উদ্দীন আহমদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।

কথা বলার জন্য উপাচার্যের সাথে যোগাযোগ করা করা হলে তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি।

 

ইএইচ/

spot_img
spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ প্রকাশিত

spot_img