কুবি প্রতিনিধি:
২০১৮ সালে কোটা বাতিল করে দেওয়া প্রজ্ঞাপন হাইকোর্ট কর্তৃক অবৈধ ঘোষণার প্রতিবাদে ও প্রজ্ঞাপন পুনর্বহালের দাবিতে প্রায় ৪ ঘন্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক তৃতীয় দিনের মত অবরোধ করে রেখেছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এই অবরোধে অংশ নেয় শিক্ষার্থীরা। এই অবরোধের ফলে সড়কের দুইপাশে প্রায় ১৩ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
রবিবার (৭ জুলাই) দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে শিক্ষার্থীরা ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার কোটবাড়ী অংশে এসে সড়ক অবরোধ করেন। এই অবরোধ শেষ হয় ৭ টা বেজে ২০ মিনিটে। অবরোধ শেষে তারা আগামী দিনে ক্যাম্পাসমুখী কর্মসূচি করা হবে বলে জানান।
তাদের আজকের আন্দোলনের একাত্মতা পোষণ করে অংশ নিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজ, জেলার বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী সাদা কাপড় গায়ে জড়িয়ে গাছে ঝুলে থাকার ভঙ্গি করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। তার গাঁয়ের সাদা কাপড়ে ‘মেধা থাকার পরও কোটা পদ্ধতি আমাকে বাঁচতে দেয়নি’, ‘তোর ছেলেকে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছে মা’ লেখা রয়েছে। এসব উপস্থিত আন্দোলনকারীরা ‘লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই, আমার সোনার বাংলায়, বৈষ্যমের ঠাই নাই, লেগে ছেরে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে, একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার, সারা বাংলা খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে ইত্যাদি বলে স্লোগান দেন।
আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ফরহাদ কাউসার বলেন, ‘আমরা সকল জায়গা থেকে অযৌক্তিক কোটা পদ্ধতির বাতিল চাই। যতক্ষন পর্যন্ত কোটা পদ্ধতি বাতিল হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সাইফুল মালেক আকাশ বলেন, ‘কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে আমরা তিন দিনের মত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছি। বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। এটাই আমাদের একমাত্র দাবি। বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতি বাতিল করে মেধাবীদের মুক্তি দেন।’
আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে ক্রিকেট-ফুটবল খেলায় মেতে উঠেন। এছাড়া অবরোধ চলাকালীন সার্বিক যান চলাচল বন্ধ থাকলেও এম্বুলেন্সগুলো ছেড়ে দেন অবরোধকারীরা।
অবরোধ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও আন্দোলন সমন্বয়কদের মধ্যে অন্যতম মোহাম্মদ সাকিব হোসাইন বলেন, ‘আমরা আজকের মত আন্দোলন শেষ করছি এখানে। আপাতত আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমরা ক্যাম্পাসেই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবো। পরবর্তীতে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা দিব।’
কোটবাড়ী অবরোধস্থলে আছেন সদর দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবাইয়া খানম। তিনি বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছি। শিক্ষার্থীরা আজ সন্ধ্যা ৭ টায় অবরোধ তুলে দেয়। এখন মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক আছে।’
এর আগে গত ৪ ও ৬ জুলাই ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক যথাক্রমে তিন ঘন্টা ও চার ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
ইএইচ/
মন্তব্য করুন