জাবি প্রতিনিধি:
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীদের ওপর শাখা ছাত্রলীগের হামলার পর ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ফলে ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করছে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এই হামলার ঘটনার প্রতিবাদে খোদ শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর পদত্যাগ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর ‘ন্যাক্কারজনক’ হামলার প্রতিবাদে পদত্যাগ করছেন তারা।
রবিবার (১৪ জুলাই) রাত থেকে এ পর্যন্ত ফেসবুক স্ট্যাটাসে অনেকেরই পদত্যাগের খবর মিলছে।
পদত্যাগকারীদের মধ্যে রয়েছেন, শেখ রাসেল হল শাখা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ সামি (দপ্তর সম্পাদক শেখ রাসেল হল), শাখা ছাত্রলীগের সদস্য ইমরান আহমেদ (বাংলা ৪৮), শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আফরিন আলম রিমি, নিয়ামুল আরফে (বিএমবি ৪৭), খাদিজা জুই ( গণিত ৪৯), সিদরাতুল মুনতাহা ( নবাব ফয়জুন্নেছা হল সেক্রেটারি ), রিপনুল ইসলাম রবিন প্রমুখসহ অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মীরা।
ইমরান আহমেদ তাঁর ফেসবুক পোস্টে বলেন , একটা আদর্শ বুকে নিয়ে কোনপ্রকার স্বার্থের বাইরে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতাম। কিন্তু গতকাল রাতের ঘটনার পরেও যদি চুপ থাকি তাহলে নিজের বিবেক আর আদর্শের কাছে সারাজীবন অপরাধী হয়ে থেকে যাব। আমি ইমরান বশর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য।
আজকের পর থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সমস্ত রকম কর্মকান্ড থেকে নিজেকে অব্যাহতি দিলাম।
আফরিন আলম রিমি ফেসবুকে পোস্টে বলেন, বিবেকের কাছে পদ পদবি, ক্ষমতার জন্য হেরে যেতে পারবো না। আমি আফরিন আলম রিমি, আজ থেকে সমস্ত ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেকে নিজেকে নিষ্কৃতি দিলাম।
শেখ রাসেল হল শাখা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ সামি তার পোস্টে বলেন, আমি মো: সামি,
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের শেখ রাসেল হল দপ্তর সম্পাদক। এই মুহূর্ত থেকে সাংগঠনিক সকল দায়িত্ব থেকে অব্যহতি নিলাম। বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তৈরি হয়েছিলো কিছু লক্ষ্য উদ্দেশ্য সামনে রেখে। এক কথায় সংগঠনটি হবে শিক্ষার্থীদেরকে সাথে নিয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব একটি ছাত্রসংগঠন। তারা দেশের যে কোন অন্যায়, অবিচার, বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলবে, অধিকার আদায়ে সচেষ্ট থাকবে, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিদাওয়া আদায়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ থেকে যোজন যোজন দূরে সরে গেছি! তাই এখন যা হচ্ছে আমার ক্যাম্পাসে সেইটা কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ মানতে পারে না। জীবনে কোনো দিন জুলুম করিনি, কারো সাথে অন্যায় করিনি। ইনশাআল্লাহ, বেঁচে থাকলে কখনো বিবেক বিসর্জন দিবো না। আমি সৃষ্টি তাই স্রষ্টায় বিশ্বাস করি এবং আমার বিশ্বাস প্রতিটি রাবার বুলেট, টিআর শেল ও অন্যায়ের হিসাব দিতে হবে।
শাখা ছাত্রলীগের উপ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক নিয়ামুল আরফে তার পোস্টে বলেন, একটা আদর্শ বুকে নিয়ে কোন স্বার্থের বাইরে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতাম। কিন্তু গতকাল রাতের ঘটনার পরেও যদি চুপ থাকি তাহলে নিজের বিবেক আর আদর্শের কাছে সারাজীবন অপরাধী হয়ে থেকে যাব। আমি শেখ মো: নাঈমুল আরাফী, উপ ধর্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। আজকের পর থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সমস্ত রকম কর্মকান্ড থেকে নিজেকে অব্যহতি দিলাম।
উল্লেখ্য গতকাল রাতে (১৫ জুলাই) দিবাগত রাতে কয়েক দফায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার চালায় শাখা ছাত্রলীগ ও তাদের ভাড়াটেরা। পরে আন্দোলনকারীরা ভিসির বাসভবনে ঢুকলে সেখানেও হামলা চালায় আক্রমনকারীরা। এসময় পুলিশ প্রশাসনকে হামলাকারীদের জন্য পথ ছেড়ে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। পরে সব হল থেকে শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে বের হয়ে আসেন। তারা হামলাকারীদের হটিয়ে ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভিসির বাসভনে অবরুদ্ধ শিক্ষার্থীদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
এএকে /
মন্তব্য করুন