জবি প্রতিনিধি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা প্রায় চার মাস আগে সহপাঠী রায়হান সিদ্দিকি আম্মানের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক আচরণের অভিযোগ করেছিল। গত বছরের ১৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বরাবর অভিযোগ দেন অবন্তিকা। যেখানে আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সরকার আলী আক্কাস যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সুপারিশ করেছিলেন।
বিষয়টি তখন তেমন আলোচনায় না আসলেও অবন্তিকার আত্মহত্যার পর থেকেই তুমুল আলোচনায় আসে৷ এই বিষয়টি নিয়ে কতটুকু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল কিংবা অভিযুক্ত আম্মানের বিরুদ্ধে আদৌ কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল কিনা এমন প্রশ্ন এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের৷ তবে বিষয়টি নয়ে পরবর্তীতে অবন্তিকা আর কোন কথাই বলেনি দাবি আইন বিভাগের চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টরের।
অভিযোগপত্রে অবন্তিকা উল্লেখ করেন, র্দীঘদিন ধরে আম্মান তার সাথে হয়রানিমূলক আচরণ ও তাকে উত্যক্ত করে আসছিল। প্রথম বর্ষে আম্মানের প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার কিছুদিন পরেই লিফটের কাছে দাঁড়িয়ে থাকলে অবন্তিকাকে দেখে আম্মান কুরুচিপূর্ণ ও অশ্লীল মন্তব্য করে। অবন্তিকা এরূপ মন্তব্যের প্রতিবাদ করাতেই বিপত্তি বাঁধে। আম্মান অপমানিত বোধ করে এবং অবন্তিকাকে বলে, এক দিন তার এমন অবস্থা করবে বা এমনভাবে তাকে ফাঁসাবে যাতে করে মেয়ে হিসেবে সে আর সমাজে মুখ দেখাতে না পারে এবং আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। ২০২২ সালে আগ্রাসী আচরণ, মৌখিকভাবে গালাগাল এবং রাস্তায় চলতে গেলে দুর্ঘটনার হুমকিতে রূপ নেয়। তখন অবন্তিকার বাবা অসুস্থ থাকায় এ বিষয়ে আলোকপাত করেনি এবং আম্মানকেও গুরুত্ব দেয়নি। তাই অবন্তিকা সরাসরি সুস্পষ্টভাবে জানায় তার সাথে যেন আম্মান কথা না বলে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, তারপর আম্মান কিছু দিন যোগাযোগ করেনি৷ তবে হঠাৎ একদিন সে মেসেঞ্জারে অবন্তিকাকে বলে যে এমন কিছু তথ্য ছড়ানো হবে মানুষের কাছে যাতে অবন্তিকা অপদস্ত হয়৷ এরপর অবন্তিকার বাবা মারা গেলে আম্মানের উৎপাত মাত্রা ছাড়িয়ে যায়৷ বিভিন্ন সময়ে বিভাগের করিডোরে একা থাকলে আম্মান অবন্তিকাকে নতুন একাডেমিক ভবনের ছাদে কিংবা ফাঁকা ক্লাসরুমে ডাকতো কথা বলার জন্য৷ কয়েকমাস আগেও আম্মান অবন্তিকাকে ডেকে বিভাগের উপরের ফ্লোরে নিয়ে কথা বলতে চায়৷ অবন্তিকা এর প্রতিবাদ করলে আম্মান বলে, আমার নামে প্রক্টর স্যারের কাছে নালিশ দিবি? দে,দেখি কি করতে পারোস। প্রক্টর স্যারকে একটি কল দিলেই স্যার ধরে,কারণ আমি সাংবাদিক। তুই জানোস কোতোয়ালি থানায় আমার কেমন লিংক,একমিনিট লাগবে তকে ফাঁসাতে৷
আরও উল্লেখ করা হয়, আম্মানের এসব হুমকির প্রেক্ষিতে অবন্তিকা ভয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যায়৷ কয়েকদিন ক্লাস অফ করে। মিডটার্ম পরীক্ষা দিতে আসে অবন্তিকা, পরীক্ষা শেষে তার বন্ধু বান্ধবীরা যখন চলে যায় আম্মান তাকে আবারও একা ডাকে। অবন্তিকা বিষয়টি এড়িয়ে চলে যেতে চাইলে আম্মান তার পথরোধ করে এবং তার ডাকে ক্লাসে না যাওয়ায় ধমক দেয়৷ তখন অবন্তিকা আম্মানকে বিভাগের অফিস রুমে নিয়ে যায়,যেন কোন ক্ষতি না হয় তার৷ এসব বিষয়ের প্রেক্ষিতে অবন্তিকা প্রচন্ড ভীতসন্ত্রস্ত ছিল। এমনকি পরিবারের কাউকে ছাড়া ঢাকায় থাকায় রাস্তাঘাটে চলাচলেও অনিরাপদ বোধ করতো৷ তাই প্রক্টর যেন এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সরকার আলী আক্কাস বলেন, অবন্তিকার সেই অভিযোগে আমি সুপারিশ করেছিলাম যেন প্রক্টর যথাযথ ব্যবস্থা নেন। এরপর আমি বেশ কয়েকবার অবন্তিকাকে জিজ্ঞেস করেছি ওই অভিযোগের কি অবস্থা,এর জবাবে সে বলতো ঠিক হয়ে গেছে। সবশেষ গত বৃহস্পতিবারও অবন্তিকার সাথে কথা হয়েছিল৷ তখনিও সে একদম স্বাভাবিক ছিল৷ কিন্তু পরদিন জানলাম সে আত্মহত্যা করেছে৷ বিষয়টি আমাকে খুব কষ্ট দেয়।
জবির সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, অবন্তিকা অভিযোগপত্রটি আমার অনুপস্থিতিতে দিয়ে যায়৷ অভিযোগের সাথে ডকুমেন্টস হিসেবে কিছু দেয়নি৷ আর সেসময় উপাচার্য ইমদাদ স্যারের একটা নির্দেশনা ছিল যে, যারা অভিযোগ দিতে আসে তারা কি চান সে বিষয়ে সরাসরি কথা বলতে। কিন্তু অবন্তিকাকে আমরা বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করতে খবর পাঠিয়েছিলাম। সে আসেনি, আর যোগাযোগও করেনি পরবর্তীতে।
তিনি আরও বলেন, অভিযোগের ৩ দিন আগে ইমদাদ স্যার মারা যান৷ উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে আর আগানো সম্ভব হয়নি। কারণ সবকিছুই একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে করতে হয়৷ যোগাযোগ করতে বলার পর সাড়া না দিলে কিসের ভিত্তিতে আমরা আগাবো এই প্রশ্নও রাখনে তিনি।
এসআই/
মন্তব্য করুন