সাগর শুভ্র, শাবিপ্রবি প্রতিনিধি: কমিটির মেয়াদ এক বছর হলেও এক কমিটি দিয়েই ৯ বছর পার করেছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) শাখা ছাত্রলীগ। টেন্ডারবাজি, মাদক সেবন, চাঁদাবাজি, হলে-ক্যাম্পাসে ফাউ খাওয়া, শিক্ষক-শিক্ষার্থী-দলীয় কর্মীকে মারধর, ইভটিজিং, সাইবার বুলিং, দলে অনুপ্রবেশকারী, বহিষ্কৃত হওয়াসহ নানা অভিযোগ ছিল ওই কমিটির অনেক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।
এদিকে কেন্দ্রীয় কমিটির কর্মী সমাবেশের ঘোষণা দেয়ার পর দীর্ঘদিন পর আবারো এ ইউনিটটিতে নতুন কমিটি আসবে বলে এমনটাই আশাবাদী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের। নতুন এই কমিটির নেতৃত্ব যেন মেধাবী, যোগ্য, স্মার্ট ও ক্লিন ইমেজের কারও হাতেই উছে এমনটাই প্রত্যাশা শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। কোনো অছাত্র, টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ যেনো ছাত্রলীগের নেতৃত্বে না আসে প্রত্যাশা তাদের। একইসাথে যোগ্য নেতৃত্ব না আসলে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হবে; ব্যাঘাত ঘটবে প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রমের এমন শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগকর্মীরা বলছেন, যারা গঠনমূলক ভূমিকা পালন করবে ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করবে তারাই আসুক নেতৃত্বে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করবে না তারাই আসুক নেতৃত্বে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে ও গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ের খবরাখবর বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত একদশকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতাদের তাণ্ডবে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। এমনকি তাদেরকে মারধল থেকে জীবননাশের হুমকিও দিয়েছেন নেতারা। এ ছাড়া নিজেদের অন্তর্কোন্দলের জেরে একাডেমিক কার্যক্রম হয়েছে ব্যাহত। ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় সৃষ্টি হয়েছে সেশনজটসহ নানা সমস্যা।
গত দশ বছরে শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন ঘটনা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৩ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত একদশকে ১২০টিরও বেশি ছোট-বড় সংঘর্ষে জড়িয়েছে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খুনসহ নানান ঘটনায় অস্থিতিশীল ছিল ক্যাম্পাস। আতঙ্কে ছিলেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।
এদিকে ২০১৪ সালের ২০ নভেম্বর ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি সঞ্জীবন চক্রবর্তী পার্থ ও সহ-সভাপতি অঞ্জন রায় গ্রুপের মধ্যে ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে সুমন দাশ নামের এক বহিরাগত ছাত্রলীগ কর্মী নিহত ও ১৫ জন আহত হন। এতে করে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একইবছর স্থানীয়দের সঙ্গে একাধিকবার সংঘর্ষের জড়িয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
২০১৫ সালে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের ওপর হামলা, ২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর খাদিজাকে কোপানো, ২০১৭ সালের স্কুল ছাত্রীকে ইভটিজিং ও মারধর এবং সাংবাদিকদের ওপর হামলা, ২০১৮ সালে ছাত্রজোটের ওপর অতর্কিত হামলা, ২০১৯ সালের ২৩ মার্চ দলীয় নেতা রাজিব সরকারের ওপর হামলা, ২০২০ সালে ফোনালাপে টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির তথ্যফাঁসে দলীয় কর্মীকে গুম, ২০২২ সালে হলের ছাত্রীদের দাবিদাওয়ার আন্দোলনে ছাত্রলীগের অতর্কিত হামলা, ২০২৩ সালে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আবাসিক হলে পাল্টিপাল্টি হামলা-সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি মামলাসহ একাধিক বিষয় উঠে এসেছে খবরের পাতায়।
দেশব্যাপী আলোচিত এসব খবর বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এসব সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। হয়রানির শিকার হয়েছেন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
হয়রানি থেকে রেহাই পাননি টং দোকানদার ও ডাইনিং-ক্যান্টিন ম্যানেজাররা। তাই এসব বিবেচনায় আর যেন এরকম কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি না হয়। এজন্য ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব যাতে ক্লিন-ইমেজধারী কেউ আসেন সেটাই প্রত্যাশা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীজনেরা।
যারা মেধাবী, কোনো ধরণের অপকর্মের সাথে জড়িত নয়, যাদের সাংগঠনিকভাবে দক্ষ এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে তারাই নেতৃত্বে আসুক এমন প্রত্যাশাই ব্যক্ত করেছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফারুক উদ্দিন ।
মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তচিন্তায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ ফোরামের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. আখতারুল ইসলাম বলেন, ‘যারাই নেতৃত্বে আসুক তারা যেন গঠনমূলক ভুমিকা পালন করে। তবে তারা যেন ছাত্র হয়।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. কবির হোসেন বলেন, ‘যারা ছাত্রদের সাথে ছাত্রসুলভ, সৎ ব্যবহার করবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো অস্থিরতা সৃষ্ঠি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখবে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সহযোগীতা করবে ও তারা সঠিক সময়ে ডিগ্রি নিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়ে যাবে তারাই নেতৃত্বে আসুক।’
এসআই/
মন্তব্য করুন