এডুকেশন টাইমস ডেস্ক: মূল ভবনের সামনের গ্লাস ভাঙা। কম্পিউটার ল্যাব ফাঁকা, পড়ে আছে ভাঙা বেঞ্চ। পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নসহ অন্যান্য ল্যাব সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত। লিফটগুলোর বোতাম নেই। শ্রেণিকক্ষগুলো কোনোরকম সংস্কার করে চলছে। গতকাল সোমবার রাজধানীর ডেমরার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে (ডিএমআরসি) গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ নভেম্বর হামলায় কলেজে ১০৪ ধরনের সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া কলেজ ভবনে অবস্থিত ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে ১৪ ধরনের সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। মোট ১০৮ ধরনের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে কলেজের ক্ষতির আর্থিক মূল্য ৪০ কোটি ৭৭ লাখ ৪ হাজার ৫০০ টাকা। আর ইনস্টিটিউটে ক্ষয়ক্ষতির আর্থিক মূল্য ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ৪৪ কোটি ৭ লাখ ৪ হাজার ৫০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, কলেজের ১ নম্বর ভবনের সামনের গ্লাস এখনও হামলার চিহ্ন বহন করে বেড়াচ্ছে। ভেতরে ঢুকতে কলেজের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতচিহ্ন চোখে পড়ে। শ্রেণিকক্ষগুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে চলছে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস। কলেজটিতে ১০ তলাবিশিষ্ট একাধিক ভবন রয়েছে। এসব ভবনে ওঠানামার লিফটগুলোর বোতাম ভেঙে ফেলা হয়েছে। এ কারণে লিফট পুরোপুরি কার্যকর নয়। এসব বোতাম বিদেশি হওয়ায় দ্রুত সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় বাজার থেকে কেনা ৯টি বোতাম দিয়ে চলছে লিফটগুলো। এসব লিফট দিয়ে নিচতলা থেকে একেবারে ৯ তলা পর্যন্ত উঠতে হয়। মাঝখানে লিফট না থামায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের।
কলেজের ল্যাবগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, কিছু ভাঙা বেঞ্চ পড়ে আছে। কম্পিউটার ল্যাবে একসঙ্গে ৭৫টি কম্পিউটার ছিল। এখন একটিও নেই। একই অবস্থা পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন ল্যাবের। জীববিজ্ঞান ল্যাবে কিছু সংরক্ষিত প্রাণী ও বেঞ্চ চোখে পড়ে। এ ছাড়া কলেজের বিভিন্ন স্থানে নামফলকও ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। সবকিছুর সংস্কার কার্যক্রম চলছে।
কলেজ প্রশাসন জানায়, ২১ নভেম্বর থেকে কলেজে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকায় তা স্থগিত করা হয়। ২৫ নভেম্বর হামলার পর ১৪ দিন কলেজ বন্ধ ছিল। এ সময় ক্যাম্পাস পরিষ্কার ও প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়। এর পর আবার পরীক্ষা নেওয়া হয়। বর্তমানে জরুরি সংস্কারকাজ করে একাডেমিক কার্যক্রম চলছে। বাকি সংস্কার পর্যায়ক্রমে হবে। এ হামলার কারণে শিক্ষা কার্যক্রমে কলেজটি এক মাস পিছিয়ে গেছে। এ ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো আইনি ব্যবস্থা নেয়নি। তবে সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজে হামলায় অংশ নেওয়ায় ৩০-৪০ শিক্ষার্থীকে চিহ্নিত করে ছাড়পত্র দিয়েছে।
এ বিষয়ে কলেজের সহকারী অধ্যাপক মামুনুর রশীদ ও মাজহারুল হক জানান, ২৫ নভেম্বর কলেজে আসেন তারা। এরপর জানতে পারেন, হামলা হতে পারে। তখন কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবাইকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়। দূরে নিরাপদ স্থান থেকে তারা তাণ্ডব দেখেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও এ সময় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছিল।
উপাধ্যক্ষ মো. সাইফুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘গত ২৪ নভেম্বরই আমরা খবর পেতে শুরু করি যে, সাত কলেজের ব্যানারে হামলা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। দ্বিমুখী সংঘর্ষ এড়াতে তারা আমাদের কলেজে থাকতে বারণ করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আমাদের আশ্বস্ত করে, শিক্ষার্থীরা লংমার্চ করে চলে যাবে। কিন্তু তারা এসে নজিরবিহীন হামলা চালায়।’
কলেজের অধ্যক্ষ মো. ওবায়দুল্লাহ নয়ন বলেন, ‘আগে ছাত্রদের মধ্যে ঝামেলা হলে সর্বোচ্চ ধর্মঘট দিত। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হামলার নজির ছিল না। কিন্তু এখন এ বিষয় দেখা যাচ্ছে। একটি চক্র এ ধরনের হামলার পেছনে কাজ করছে। তারা এর মাধ্যমে নিজস্ব ফায়দা লুটতে চায়।
এসএস/