জবি প্রতিনিধি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে রান্না করাকে কেন্দ্র করে এক ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় অভিযুক্ত তাসমিম সানজানা সৃষ্টিকে স্থায়ীভাবে হল (হলের বরাদ্দকৃত সিট বাতিল করে) ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
শুক্রবার (০৮মার্চ) হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দীপিকা রানী সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অধ্যাপক ড. দীপিকা রানী সরকার বলেন, ‘শৃঙ্খলা কমিটিতে বিষয়টি উপস্থাপিত হয়েছে। ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে হলের সিট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী রবিবার তাকে অফিসিয়ালি চিঠি পাঠিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।’
হল প্রভোস্ট আরও বলেন, এমন ছোট ঘটনাকে কেন্দ্র করে মারামারি আসলে কোনভাবেই কাম্য নয়। আমাদের সবাইকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। পাশে একটা চুলা ছিলো চাইলে তারা পরিবর্তন করে অন্য চুলায় রান্না করতে পারতো। তারা সেটা না করে মারামারি, ভাষা খারাপ করলো। এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
হলের শৃঙ্খলা কমিটিতে ড. আনোয়ারা আক্তার, ড. বুসরা জামান, মানসুরা বেগম দায়িত্ব পালন করেন। বৃহস্পতিবার (০৭ মার্চ) মানসুরা বেগম অনুপস্থিত থাকায় হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দীপিকা রানী সরকার শৃঙ্খলা কমিটিতে থেকে নিজেই দায়িত্ব নিয়ে অভিযোগ নিষ্পন্ন করেন।
হলের দায়িত্বে থাকা হাউজ টিউটর ড. নিপা দেব নাথ বলেন, বৃহস্পতিবার লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর শৃঙ্খলা কমিটিতে বিষয়টি আলোচনা করা হয়। আলোচনা শেষে সিট বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিষয়টি মৌখিকভাবে তাকে বলা হয়েছে। পরবর্তীতে চিঠিতে তাকে জানিয়ে দেওয়া হবে।
তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে ড. নিপা বলেন, তদন্তের বিষয়টি হল করতে পারে না, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন করতে পারে। অভিযুক্তকে আমরা সিট বাতিল করে হলে না থাকার নির্দেশ দিয়েছি। কিন্তু সে তো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাদ যাচ্ছে না। তদন্ত হলে তাকে অবশ্যই পাওয়া যাবে।
এর আগে গত মঙ্গলবার (০৫ মার্চ) হলে রান্না করাকে কেন্দ্র করে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ১৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ইতি খাতুনকে মারধর করেন ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী তাসমিম সানজানা সৃষ্টি। এ ঘটনায় ছাত্রী হলের হাউস টিউটর ও প্রভোস্ট বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ইতি খাতুন। পরবর্তীতে পাল্টা অভিযোগ দেন তাসমিম সানজানা সৃষ্টি।
ভুক্তভোগী ছাত্রী ইতি খাতুন বলেন, ‘আমি রান্না করছিলাম। পরে চুলা ফাঁকা থাকায় সৃষ্টি আপু ডিম ভাজতে চাইলে চুলা ছেড়ে দেই। কিন্তু রান্না শেষ করতে দেরি হওয়ায় ও আমার ক্লাসের সময় হওয়ায় আপুকে দ্রুত রান্না শেষ করতে বলি। কিন্তু আমি জুনিয়র বলে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালি দেন আপু। আমার মরা বাপ তুলেও গালি দেন। প্রতিবাদ করলে আমাকে চড়-থাপ্পড়, কিল-ঘুষি মারে তিনি। পরের ঘটনা আমার মনে নেই, আমি অজ্ঞান হয়ে যায়।’
অভিযুক্ত তাসমিম সানজানা সৃষ্টি বলেন, ‘জুনিয়র হয়ে ইতি বেয়াদবি করেছিল। এজন্য আমি কি বসে থাকব? আমিও মাইর খাইছি, আমিও অভিযোগ দিছি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী সৃষ্টিকে ফোন দেন সাংবাদিকরা। এর জের ধরে সৃষ্টির ছেলে বন্ধু মার্কেটিং বিভাগের (১২ তম ব্যাচের) শিক্ষার্থী ফাহিম ইশতিয়াক বুধবার (০৬ মার্চ) এক সাংবাদিককে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। নিউজ করলে মামলার হুমকিও দেন। হুমকির ঘটনায় কল রেকর্ডে শোনা যায়, ফাহিম ওই সাংবাদিককে ফোনে বলেন, ‘এই নিউজ যদি হয়, তুই যদি জড়িত থাকিস তোর খবর আছে। তোর নামে মামলা হবে। তোর লাইফ কিভাবে হেল করতে আমি দেখব। তোর সাহস কি। তুই আজ দেখা কর। তোর খবর আছে, তোর বাপের নামের বল।’
উল্লেখ্য, তাসমিম সানজানা সৃষ্টি, সংগীত বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। এর আগেও হলে অনেকের সাথে ঝামেলার করার অভিযোগ পাওয়া যায়। কেউ কোন ধরনের লিখিত অভিযোগ না দেওয়া আমলে নেয়নি প্রশাসন।
এসআই/
মন্তব্য করুন