spot_img

বিশ্ব বাজারে তৈরি পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের জায়গা নেওয়ার চেষ্টায় ভারত 

এসম্পর্কিত আরো পড়ুন

বাংলাদেশে চলমান অস্থিরতা বৈশ্বিক তৈরি পোশাক শিল্পের বাজারে ভারতের জন্য ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। এমনটাই মনে করছেন ভারতের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও বাজার বিশ্লেষকেরা। সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য মিন্ট এই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

চীনের পর বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। ভারতের অবস্থান শীর্ষ তিনে না থাকায় দেশটির পক্ষে বাংলাদেশের অবস্থানে আসা খুব একটা সহজ হবে না। বিশেষ করে বাংলাদেশকে পাশ কাটাতে হলে ভারতকে অবশ্যই বাংলাদেশসহ অন্য অনেকগুলো দেশকে ছাড়িয়ে আসতে হবে।

- বিজ্ঞাপন -

আমদানি-রপ্তানির তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এক্সিমপিডিয়ার হিসাব অনুসারে, ২০২২ সালে বিশ্বে পোশাক শিল্পের বাজার ছিল ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন বা দেড় লাখ কোটি মার্কিন ডলারের। এর মধ্যে শীর্ষ স্থানে থাকা চীন একাই বিক্রি করেছে ১৮২ বিলিয়ন ডলারের পোশাক। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশ ওই বছর ৪৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল। পঞ্চম স্থানে থাকা ভারত রপ্তানি করেছিল ১৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। ভিয়েতনাম-তুরস্কের মতো দেশগুলোও ছিল তালিকায় ভারতের ওপরে।

ভারতের অন্যতম শীর্ষ তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান লালভাই গ্রুপের অরবিন্দ লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান কুলীন লালভাই বলেন, ‘(বাংলাদেশের) পরিস্থিতি ভারতের পোশাক খাতের জন্য একটি প্রতিশ্রুতিশীল মধ্যমেয়াদি সুযোগ হাজির করেছে। কারণ বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশের বাইরে থেকেও বৈচিত্র্য তালাশ করতে পারে।’

দেশটির বিনিয়োগ ব্যাংক আনন্দ রথি ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকিংয়ের পরিচালক ভারত বিড়লা বিশ্বাস করেন, যদি বাংলাদেশে এই সংকট চলতে থাকে তাহলে ভারত পোশাক রপ্তানিতে স্বল্প থেকে মধ্য মেয়াদে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়তি লাভ আশা করতে পারে।

এ ছাড়া, ভারতীয় পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গোকুলদাশ এক্সপোর্টস লিমিটেড গত জুন প্রান্তিকে তাদের বিনিয়োগকারীদের এক বৈঠকে জানিয়েছে, বৈশ্বিক ক্রেতারা চীনের বাইরে বিকল্প উৎপাদনকেন্দ্র খুঁজছেন। এটি ভারতের মতো বড় এশীয় সরবরাহকারীদের জন্য সুযোগ তৈরি করছে।

ভারতের বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান এলারা ক্যাপিটালের টেক্সটাইল ও রিটেল বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বিশ্লেষক প্রেরণা ঝুনঝুনওয়ালার মতে, বৈশ্বিক ক্রেতারা হয়তো বাংলাদেশকে পুরোপুরি প্রতিস্থাপন করতে পারবেন না বা অবিলম্বে কোনো বিকল্প খুঁজে পাবেন না। তবে তারা ‘সংকটে জর্জরিত’ দেশটির সঙ্গে অতিরিক্ত বড় ব্যবসা এড়াতে বিকল্প খুঁজতে পারেন, যা তাদের বাংলাদেশে নির্ভরতা কমাবে।

এ অবস্থায় ভারতের যেসব শহরে টেক্সটাইল পণ্য উৎপাদনের ভালো সক্ষমতা রয়েছে, সেখানে নতুন ক্রয়াদেশ অনেকটা বেড়ে যেতে পারে। বিড়লার মতে, গুজরাটের সুরাট, তামিলনাড়ুর তিরুপুর, কর্ণাটকের ইলকাল এবং মধ্য প্রদেশের চান্দেরির মতো শহরগুলো বিশেষভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

ভারতভিত্তিক বহুজাতিক পোশাক বিপণন প্রতিষ্ঠান রেমন্ডের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা অমিত আগরওয়াল সম্প্রতি মিন্টকে বলেছিলেন, যখনই (বাংলাদেশে) রাজনৈতিক বা কোনো ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, তখন মানুষ (ক্রেতারা) আমাদের মতো একটি স্থিতিশীল বাজারে স্থানান্তরিত হওয়ার কথা ভাবে। তিনি বলেন, ‘আগে বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো আমাদের কাপড় সেলাইয়ের জন্য বাংলাদেশে পাঠাত। তাই এখন এর একটি অংশ খুব দ্রুত আমাদের কাছে আসতে পারে। তবে এখন প্রশ্ন হলো, বৈশ্বিক চাহিদা মেটাতে (ভারত) কতটা সক্ষম।’

ভারত কী বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, ভারতকে তার পূর্বে অবস্থিত প্রতিবেশীর অস্থিরতার সুবিধা নিতে হলে পোশাক উৎপাদন সক্ষমতা সম্প্রসারণে বিনিয়োগ করতে হবে। কুলীন লালভাইয়ের মতে, ইউরোপের সঙ্গে একটি সম্ভাব্য মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) এবং তুলাভিত্তিক পোশাক উৎপাদনে প্রণোদনা বাড়ানো হলে ভারতের সক্ষমতা সম্প্রসারিত হতে পারে।

বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করেন, নতুন একটি উৎপাদন কারখানা বা অবকাঠামো স্থাপনের জন্য সাধারণত ৩ থেকে ৫ বছর সময় লাগে। এবং এই বিষয়টি বাংলাদেশকে টেক্কা দেওয়ার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়টিকে কঠিন করে তুলতে পারে। এ ছাড়াও, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বাড়তি চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে বাড়তি বিনিয়োগ উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিতে পারে।

তবে সার্বিকভাবে ভারতীয় বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বাংলাদেশের সমস্যা অব্যাহত থাকলে ভারত সক্ষমতা বাড়িয়ে লাভবান হতে পারে। এটি দীর্ঘমেয়াদি লাভের সুযোগ তৈরি করে দেবে। কারণ এমন পরিস্থিতি বজায় থাকলে ক্রেতারা বাংলাদেশের পরিবর্তে অন্য কোথাও থেকে পণ্য নেওয়ার জন্য আগ্রহী হতে পারে।

ভারত বিড়লা এই বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের বিশ্বাস, সরকার ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত অন্তত ৬ থেকে ৮ মাসের মধ্যে বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা যায় না।’

প্রেরণা ঝুনঝুনওয়ালার মতে, দীর্ঘ মেয়াদে ভারত বৈশ্বিক তৈরি পোশাক শিল্পের বাজারে অংশীদারত্ব বাড়াতে পারে কারণ বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশের ওপর নির্ভরতা কমাতে চায়। তবে বৈশ্বিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ভারতই একমাত্র বিকল্প নয়। ক্রেতারা ভারত, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, শ্রীলঙ্কা এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো এশীয় দেশগুলোর পাশাপাশি লাতিন আমেরিকা ও মেক্সিকোর মতো কাছাকাছি বিকল্পগুলোও খতিয়ে দেখবে।

(ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য মিন্ট থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান, আজকের পত্রিকা থেকে নেওয়া অনুবাদ)

spot_img
spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ প্রকাশিত

spot_img