শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ৮ দিনের মাথায় এ সরকারে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে। এ নিয়ে সরকারের ভেতরে শুরু হয়েছে টানাপড়েন। এমনকি পদত্যাগও করতে চেয়েছেন ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত।
রবিবার রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেবেন বলে তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেও গতকাল শুক্রবার জানান। তিনি মনে করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বড় কিছু পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করার পর তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রধান উপদেষ্টার অনুরোধে আপাতত তিনি হয়তো পদত্যাগ করবেন না। প্রধান উপদেষ্টা তাকে অনুরোধ করেছেন, অন্য কোনো মন্ত্রণালয় দেওয়া হচ্ছে তিনি যেন থেকে যান। উপদেষ্টা পরিষদ এবং ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
নতুন চার উপদেষ্টা গতকাল শপথগ্রহণের পর দপ্তর বণ্টনের আগেই এই ঘটনা ঘটে। পরে সন্ধ্যায় দপ্তর বণ্টন হলে, সাখাওয়াত হোসেনকে স্বরাষ্ট্র থেকে সরিয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দায়িত্ব দেওয়া হয় লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দেওয়া প্রজ্ঞাপনে এ পরিবর্তনের কথা জানানো হয়। এ ছাড়া নতুন উপদেষ্টাদের মধ্যে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদকে পরিকল্পনা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি মন্ত্রণালয়, সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং রেল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে। গতকাল দপ্তর বণ্টনের সময় একমাত্র সাখাওয়াত ছাড়া পুরোনো উপদেষ্টাদের কারোই মূল মন্ত্রণালয় পরিবর্তন হয়নি। বরং তাদের বেশিরভাগ বাড়তি আরও মন্ত্রণালয় পেয়েছেন।
মন্ত্রণালয় পরিবর্তনের বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এম সাখাওয়াত হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কে আমার জানার পরিধি কম। সেখানে গিয়ে কী করব। তবে মন্ত্রণালয় পরিবর্তন হতে পারে। যেখানে যাব সেখানে যতটুকু দায়িত্ব পালন সম্ভব করব। এখন দেশের যে অবস্থা তাতে হার্ডওয়ার্ক ছাড়া উপায় নেই।’
প্রজ্ঞাপন জারির আগে গতকাল বিকালেও এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের। তখনই তিনি জানান, তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে থাকছেন না। এটা তাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে থাকার সময় তিনি কী কী পরিবর্তন আনতে, কোন কোন বিষয়কে অগ্রাধিকার দিতে চেয়েছিলেন তাও জানান। তিনি বলেন, পুলিশে ঘুষ বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। পোশাক ও লোগো পরিবর্তন করতে চেয়েছিলাম। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত ও বিচার শুরুর উদ্যোগ নিতে চেয়েছিলাম। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার ফাইল চেয়ে পাঠিয়েছিলাম। এ মামলার তদন্তে ছিলেনÑ এমন একজন কর্মকর্তা আমার কাছে এসে বলেছিলেন, তদন্তের সময় আমাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তনু ও ত্বকী হত্যার বিষয়ে কাজ করতে চেয়েছিলাম।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর এম সাখাওয়াত হোসেনের আ.লীগ সম্পর্কে মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয় বিএনপি ও এ দলের অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়কও তার ওই বক্তব্যের সমালোচনা করেন। এম সাখাওয়াত হোসেন আওয়ামী লীগ মধ্যবিত্ত সেক্যুলারপন্থি বাঙালিদের দল ছিল উল্লেখ করে তাদের আগামী নির্বাচনের জন্য দল গোছাতে বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এই মন্তব্যের প্রতিবাদে এবং তার পদত্যাগের দাবিতে বিএনপির অঙ্গ-সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল গত সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীসহ অন্যত্র বিক্ষোভ করে। এ ছাড়াও তার পদত্যাগের দাবিতে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।
এম সাখাওয়াত হোসেন তার দায়িত্ব পালনকালে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে মন্তব্য করে বলেছিলেন, ‘বিজিবি সীমান্তে আর পিঠ দেখাবে না।’ এ ছাড়া আন্দোলন দমনে পুলিশের হাতে মারণাস্ত্র দেওয়া নিয়েও তিনি কঠোর সমালোচনা করেন।
(নোট: দৈনিক প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার প্রতিবেদন। গুরুত্বপূর্ণ মনে করায় প্রতিবেদনটি এডুকেশন টাইমসের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো। প্রতিবেদনটি করেছেন কাজী হাফিজ)
এসআই/