spot_img

আসছে রমজানে সৃষ্টি হতে পারে প্রয়োজনীয় পণ্যের সংকট

এসম্পর্কিত আরো পড়ুন

এডুকেশন টাইমস ডেস্ক: রমজানে ভোগ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাল, গম, ডাল, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, চিনি, ডিম, ছোলা, মটর, মসলা, খেজুরসহ ১১টি পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ঋণপত্র খোলায় মার্জিন কমানোর নির্দেশনা দিয়েছে। বিশ্ববাজারেও বেশ কিছু ভোগ্যপণ্যের দাম এখন কম। তার পরও চাহিদামতো পণ্য আসছে না। এ অবস্থায় প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। আর সরবরাহ পর্যাপ্ত না থাকলে রয়েছে দাম বাড়ার শঙ্কা।

চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের (জুলাই-নভেম্বর) আমদানি চিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩০ শতাংশ পণ্য কম এসেছে। খেজুর, পেঁয়াজসহ কিছু নিত্যপণ্যের এলসি গতবারের তুলনায় এবার কম খোলা হয়েছে। জানা গেছে, দেশের ব্যাংকিং খাতে অস্থিরতা, টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়তে থাকা এবং শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন আমদানিকারকের অংশগ্রহণ কম থাকা এর মূল কারণ। আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, সরবরাহ ঠিক রাখতে ভোজ্যতেল, চিনি ও মসুর ডালের মতো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের এলসি খোলা হয় রমজানের তিন-চার মাস আগে। কিন্তু চাহিদামতো এলসি সুবিধা দিতে পারছে না কিছু ব্যাংক। ব্যাংলাদেশ ব্যাংক উদ্যোগ নিলেও নানা রকম সংকট আছে ব্যাংকে। চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না ডলার।

- বিজ্ঞাপন -

টি কে গ্রুপের পরিচালক মো. শফিউল আতহার তাসলিম সমকালকে বলেন, এলসি খুলতে কিছু ছাড় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে ডলারের বাজার অস্থির থাকায় ছাড়ের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। দেখা গেল, এলসি খোলার সময় প্রতি ডলারের দাম ১২৩ টাকা। কিছুদিন পর তা ১২৭ টাকা হয়ে গেলে মূল্য দেরিতে পেমেন্ট করার সুযোগ কোনো কাজে আসবে না। বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্ববাজারে কিছু জিনিসের দাম স্থিতিশীল থাকলেও আমাদের দেশে অস্থির হয়ে আছে ডলারের বাজার। ডলারের বাজার স্থিতিশীল থাকলে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয় আমদানিকারকদের। ব্যাংক সেক্টরের স্থিতিশীলতাও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিছু প্রতিকূলতা থাকলেও রমজানকে কেন্দ্র করে চাহিদামতো পণ্য শেষ পর্যন্ত চলে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগীর আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংকগুলোর নানান সমস্যার কারণে এখনও প্রত্যাশিত এলসি খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। অন্যবারের তুলনায় এলসি কম মনে হচ্ছে।’

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ব্যবসায়ীরা কত দামে পণ্য এনে কত দামে বিক্রি করছেন, সে বিষয়ে কোনো তদারকি নেই। বাংলাদেশ ব্যাংক এলসি খুলতে নানা সুবিধা দিলেও ব্যাংক তা কতটুকু মানছে, তার ওপরও তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই। এ ছাড়া রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বড় প্রতিষ্ঠানের পলাতক কর্ণধারদের বিকল্প হয়ে কে পণ্য আনবে, কীভাবে আনবে– এসব নিয়েও পরিকল্পনার ঘাটতি রয়েছে। এ কারণে অস্থিরতা কমছে না বাজারে।

আমদানির চিত্র

অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসের আমদানি তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনি এবার এসেছে ৪ লাখ ২৩ হাজার ৯৯৪ টন। আগের অর্থবছরে একই সময়ে এসেছিল ৬ লাখ ৯ হাজার ৫৩২ টন। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানি হয়েছে ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৮১৪ টন। গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১১ লাখ ৩ হাজার ৯০ টন। মসুর, ছোলাসহ ডাল জাতীয় বিভিন্ন পণ্য এবার এসেছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৩৮ টন। গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮৩৫ টন।

রমজান সামনে রেখে পাঁচ মাসে খেজুর এসেছে ২ হাজার ৪৬ টন। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৫ হাজার ৯২১ টন। এ সময়ে পেঁয়াজ এসেছে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৪৯৬ টন। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৩০৩ টন। সব মিলিয়ে আগের তুলনায় এবার প্রায় ৩০ শতাংশ পণ্য কম এসেছে।

রমজানের অত্যাবশ্যকীয় পণ্য হিসেবে পরিচিত খেজুর। কিন্তু সেই খেজুর আমদানিতেও খোলা হচ্ছে না পর্যাপ্ত এলসি। নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের হিসাব এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত অক্টোবরে ২ হাজার ৩৪৭ টন খেজুর আমদানির এলসি খোলা হয়েছে। আগের বছরের এ মাসে যার পরিমাণ ছিল ৬ হাজার ৯০৭ টন। গত অক্টোবরে ৭৯ হাজার ৭৭২ টন পেঁয়াজ আমদানির এলসি খোলা হয়েছে। আগের বছরের একই মাসে ১ লাখ ২৫ হাজার ৮২৬ টন পেঁয়াজ আমদানির এলসি খোলা হয়। তবে গতবারের তুলনায় এবারের রমজানকে ঘিরে বেশি এলসি খোলা হয়েছে ছোলার। গত অক্টোবরে ৩৯ হাজার ৯০৬ টন ছোলা আমদানির এলসি খোলা হয়েছে, যা আগের বছরের একই মাসে ছিল ৯ হাজার ৭৯২ টন।

ডলার সংকটের দিক বিবেচনা করে গত ৬ নভেম্বর এলসির জন্য ১০০ ভাগ মার্জিন সংরক্ষণের শর্ত শিথিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূলত রমজান মাস উপলক্ষে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে ১১টি পণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন শিথিল করা হয়। এসব পণ্য আমদানিতে এখন থেকে ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে নগদ মার্জিন রাখতে বলা হয়। এ নির্দেশনা ৩১ মার্চ পর্যন্ত বহাল থাকবে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা বলছেন, যেভাবে সুবিধা পাওয়ার কথা, তা ব্যাংকে গিয়ে পাচ্ছেন না তারা। তাই এলসির পরিমাণ তুলনামূলক কম। কমে গেছে আমদানির পরিমাণও।

এনবিআর গত অক্টোবরে অপরিশোধিত ও পরিশোধিত চিনির ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করে। এর ফলে আমদানি পর্যায়ে প্রতি কেজি অপরিশোধিত চিনির শুল্ক কর ১১ দশমিক ১৮ টাকা এবং পরিশোধিত চিনির শুল্ক কর ১৪ দশমিক ২৬ টাকা কমে যায়। সরকার ভোজ্যতেল আমদানিতেও ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করে। এর সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা।

ভোজ্যতেল ও চিনির শীর্ষস্থানীয় আমদানিকারকের মধ্যে ছিল এস আলম গ্রুপ। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর তাদের আমদানি কমেছে। কাঁচামাল না থাকায় এরই মধ্যে একবার বন্ধ করে দেওয়া হয় এস আলম সুগার রিফাইনারি। এখন আবার খুললেও খেলাপি ঋণ আদায় করতে নিলামে তোলা হচ্ছে কারখানাটি।

বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম কমেছে

দেশের চিত্র ভিন্ন হলেও বিশ্বজুড়ে কমেছে পণ্যের দাম। ট্রেডিং ইকোনমিকস জানায়, আবশ্যকীয় কিছু পণ্যের দাম কমেছে ২০২৪ সালে। ২০২৫ সালেও পণ্যবাজার স্থিতিশীল থাকবে। কিছু পণ্যের দাম কমে যাবে আরও। এর মধ্যে আছে সয়াবিনও। দেশের ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে দফায় দফায় সয়াবিনের দাম বাড়ালেও বিশ্ববাজারে গত এক বছরে সয়াবিনের দাম কমেছে। ২০২৪ সালে বিশ্ববাজারে সয়াবিনের দাম কমেছে ২৪ দশমিক ৫০ শতাংশ। ২০২৫ সালেও স্থিতিশীল থাকবে এ পণ্যের বাজার। চালের পাশাপাশি বিশ্বে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যপণ্য গম। শীর্ষ দুই সরবরাহকারী দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেন ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধে লিপ্ত হলে গম সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। কিন্তু পরে ভারতসহ অন্য দেশগুলোর সরবরাহ বৃদ্ধি এবং রাশিয়া-ইউক্রেনের সরবরাহ বাড়লে গমের বাজার স্থিতিশীল হয়। ২০২৪ সালে গমের দাম ১২ দশমিক ৮৬ শতাংশ কমে। ২০২৪ সালে বিশ্ববাজারে চালের দাম কমেছে ২১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। বিশ্ববাজারে সবচেয়ে নিম্নমুখী চিনির দাম।

কমেছে এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি

সর্বশেষ তিন মাসে এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির পরিমাণ আগের তুলনায় কমেছে। চলতি অর্থবছরের অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য আনতে এলসি খোলা হয়েছে যথাক্রমে ৬ হাজার ৪১৭, ৫ হাজার ৫৮৮ ও ৪ হাজার ১৯১ মিলিয়ন ডলারের। এই তিন মাসের চিত্র বলছে, আমদানির জন্য এলসি খোলার হার ক্রমেই কমছে। অথচ রমজানকে সামনে রেখে এলসি খোলার হার বাড়ার কথা। শুধু এলসি খোলা নয়; এলসি নিষ্পত্তির হারও কমছে প্রতি মাসে। গত অক্টোবর মাসে আমদানিকৃত পণ্যের বিপরীতে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৬ হাজার ৪১৪ মিলিয়ন ডলার। এর পরের দুই মাস নভেম্বর ও ডিসেম্বরে তা আরও কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৫ হাজার ৩৩৬ ও ৩ হাজার ৩৮০ মিলিয়ন ডলার।

এসএস/

spot_img
spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ প্রকাশিত

spot_img