spot_img

সংবিধানে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ রাখার পক্ষে যে যুক্তি দিলেন আলী রীয়াজ

এসম্পর্কিত আরো পড়ুন

সংবিধানে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ রাখার পক্ষে বেশ কিছু যুক্তি দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রধান ড. আলী রীয়াজ। গত ১৫ জানুয়ারি এই কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে সংবিধান সংস্কার কমিশন। সেখানে এমন সুপারিশ করেছে, যাতে প্রধানমন্ত্রীর কেন্দ্রীভূত ক্ষমতা চর্চার সুযোগ না থাকে এবং বাংলাদেশে যেন স্বৈরশাসনে ফিরে না যেতে পারে।

সংবিধানের প্রস্তাবনায় গণতন্ত্রকে মৌলিক নীতিরূপে বজায় রেখে কমিশন সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও বহুত্ববাদ অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছে। পাশাপাশি তিনটি নীতি বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। কমিশনের অন্যতম সুপারিশ ছিল ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’কে মৌলিক নীতির তালিকা থেকে বাদ দেওয়া। এই বিষয়টি কিছু মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

- বিজ্ঞাপন -

সম্প্রতি জাপানভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সাময়িকী দ্য ডিপ্লোম্যাটের সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলেছেন সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আলী রীয়াজ। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দ্য ডিপ্লোম্যাটের দক্ষিণ এশিয়া সম্পাদক সুধা রামাচন্দ্রন। সাক্ষাৎকারে আলী রীয়াজ যুক্তি দেন, শেখ হাসিনা সরকারের ঘোষিত ও চর্চিত ধর্মনিরপেক্ষতা ছিল শুধু ধর্মীয় বৈচিত্র্যের সহনশীলতার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাঁর মতে, কমিশন যে বহুত্ববাদের সুপারিশ করেছে তার পরিধি অনেক বিস্তৃত ও ব্যাপক।

আলী রীয়াজের কাছে জানতে চাওয়া হয়, বর্তমান সংবিধানে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ এবং ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’ সহাবস্থান করছে। কমিশনের প্রস্তাবে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেওয়া হয়েছে এবং ইসলামকে আগের জায়গাতেই রাখা হয়েছে। তাহলে রাষ্ট্রের সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক কেমন হবে?

আলী রীয়াজ বলেন, ‘১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলাম সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়। এরপর থেকে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি একাধিকবার ক্ষমতায় এসেছে এবং ৮ বার সংবিধান সংশোধন করেছে, কিন্তু তারা কখনোই এটি বাতিলের উদ্যোগ নেয়নি। ২০২৪ সালের এপ্রিলে হাইকোর্টের এক রায়ে বলা হয়, ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম বহাল রাখা সংবিধানিক স্ববিরোধ সৃষ্টি করে না। আমরা যখন সমাজের বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করেছি, তখন বিপুলসংখ্যক ব্যক্তি ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে বহালের পক্ষে মত দিয়েছেন। আমাদের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ৫০ হাজারেরও বেশি মতামত গ্রহণ করা হয়েছে, যার মধ্যে বিপুলসংখ্যক মত ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে সংবিধানে বহাল রাখার পক্ষে ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের পর্যালোচনা প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ১২১টি দেশের সংবিধান পর্যালোচনা করেছি, যার মধ্যে বাংলাদেশের সংবিধানও অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই পর্যালোচনা থেকে আমরা দেখেছি যে, ১৯টি দেশে রাষ্ট্রধর্ম আছে এবং ৭৫টি দেশের সংবিধানে “পরমেশ্বরের প্রতি বিশ্বাস”–এর কথা উল্লেখ আছে। অনেক পশ্চিমা দেশেও একটি রাষ্ট্রধর্ম বা একক ধর্মের সরকারি স্বীকৃতি রয়েছে।’

এ সময় তিনি বিশ্বজুড়ে রাষ্ট্রধর্মের অবস্থান নিয়ে পরিচালিত এক গবেষণার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘২০১৭ সালে ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টার জানিয়েছিল, ৮০ টিরও বেশি দেশ একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে সমর্থন করে, যা সরকারিভাবে অনুমোদিত ধর্ম হিসেবে অথবা এক ধর্মকে অন্য ধর্মের তুলনায় অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। সমীক্ষায় তারা দেখেছে, ১৯৯টি দেশের মধ্যে ২২ শতাংশ দেশের একটি রাষ্ট্রধর্ম রয়েছে এবং ২০ শতাংশ দেশ একটি ধর্মকে প্রাধান্য দেয়। সুতরাং, বাংলাদেশ কোনোভাবেই অনন্য নয়।’

রাষ্ট্র অনুমোদিত একটি ধর্ম থাকলেও রাষ্ট্র এবং ধর্মের সম্পর্ক আলাদা হতে পারে বলে জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, ‘ইসরায়েলের বার ইলান ইউনিভার্সিটির ধর্ম ও রাষ্ট্র (আরএসএস) সংক্রান্ত গবেষণার তথ্য–উপাত্তের ভিত্তিতে জনাথন ফক্স বলেছিলেন যে, এ ধরনের পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে ভিন্ন হতে পারে। তিনি যুক্তরাজ্য এবং ইরানকে উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। উভয় দেশেই রাষ্ট্রধর্ম বা সরকারি গির্জা আছে, তবে এই দুই রাষ্ট্রের কার্যক্রমে ধর্মের ভূমিকা একেবারে বিপরীত।’

আলী রীয়াজ বলেন, ‘(প্রস্তাব অনুযায়ী) সংশোধিত সংবিধানে বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও ধর্মের সম্পর্ক গত কয়েক দশকের মতোই থাকবে। যতক্ষণ না ধর্ম আইনগত ব্যবস্থার উৎস হিসেবে কাজ করছে অথবা রাজনৈতিক–আইনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে চ্যালেঞ্জ করছে, ততক্ষণ উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। অনেক সময় রাষ্ট্রধর্মগুলো প্রতীকীভাবে বেশি দেখা যায়, এর বাস্তবিক প্রভাব থাকে কম।’

এসআই/

spot_img
spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ প্রকাশিত

spot_img