spot_img

তিন সমন্বয়কের খোঁজে ডিবি কার্যালয়ে শিক্ষকরা

এসম্পর্কিত আরো পড়ুন

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ তিন সমন্বয়কের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো শঙ্কা থাকলে কেন তাঁদের পরিবারের কাছে না দিয়ে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হলো, সেই প্রশ্ন তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একটি দল। আজ শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই তিন শিক্ষার্থীর খোঁজখবর নিতে রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে যান এই শিক্ষকেরা।

গতকাল শুক্রবার নিরাপত্তাজনিত সমস্যা দেখিয়ে নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদারকে রাজধানীর গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে নিজেদের হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

- বিজ্ঞাপন -

এই শিক্ষকেরা বলেন, তুলে নিয়ে নির্যাতনের পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাজনিত কোনো বিষয় থাকলে পরিবারের কাছে না দিয়ে কেন ডিবি হেফাজতে নেওয়া হলো? এতে তিন শিক্ষার্থীর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন তাঁরা। পাশাপাশি আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া এই তিন সমন্বয়ককে দ্রুত পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিও জানান শিক্ষকেরা।

আজ বিকেল চারটার দিকে শিক্ষকদের দলটি মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ের ফটকে যায়। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের’ সদস্য। তাঁরা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ভেতরে প্রবেশ করতে চান। তখন ডিবি কার্যালয়ের অভ্যর্থনার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা অনুমতি লাগবে, জানিয়ে শিক্ষকদের অপেক্ষা করতে বলেন।

ডিবি হেফাজতে থাকা তিন সমন্বয়ক: বাঁ থেকে নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকের মজুমদার

শিক্ষকেরা প্রায় ২০ মিনিট ডিবির ফটকে অপেক্ষারত ছিলেন। এরপর তাঁদের জানানো হয় মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের একটি বৈঠক আছে। এ জন্য তিনি শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। তখন শিক্ষকেরা ১০ মিনিটের জন্য হলেও যেন মোহাম্মদ হারুন তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন, সেই অনুরোধ জানান। কিন্তু ডিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, তিনি এখনই বের হয়ে যাবেন। এ জন্য কথা বলতে পারবেন না। এ সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পরামর্শ দেন, বের হওয়ার সময় হারুনের গাড়ি থামিয়ে কথা বলতে। কিন্তু শিক্ষকেরা এতে অস্বীকৃতি জানান।

এরপর অভ্যর্থনাকক্ষ থেকে বেরিয়ে এসে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে ডিবির ফটকে কথা বলেন শিক্ষকেরা। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন বলেন, ‘আমরা জেনেছি, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজন ছাত্রকে হাসপাতাল থেকে অধিকতর নিরাপত্তার জন্য ডিবির হেফাজতে নিয়ে আসা হয়েছে। হাসপাতাল থেকে তাঁদের এখানে আনা হলো কেন, শুধু এটা জানতেই আমরা এসেছিলাম। তখন এখানকার অফিসপ্রধান ভেতরেই ছিলেন এবং তাঁকে খবরও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি আমাদের সঙ্গে দেখা করেননি।’

অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন আরও বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের অভিভাবকও। কাজেই আমাদের ছাত্ররা ঠিকমতো আছে কি না, সেই খবর তো কারও গাড়ি আটকে জিজ্ঞেস করার কথা না। এ বিষয়গুলো খুবই স্বচ্ছ হওয়ার কথা। তিনি (হারুন) কথা না বলে গাড়ি নিয়ে চলে গেছেন।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বলেন, ‘আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা, নিরাপত্তাসহ সব বিষয় নিয়েই উদ্বিগ্ন। এ জন্যই আমরা খোঁজ নিতে এসেছি, শিক্ষার্থীদের কী নিরাপত্তার অভাব হলো? ডিবি শিক্ষার্থীদের তো আমাদের জিম্মায়ও দিতে পারত। কিন্তু তিনি ( হারুন) তো আমাদের সঙ্গে দেখাই করলেন না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক ডিবি হেফাজত থেকে শিক্ষার্থীদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানান।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজলী সেহরীন ইসলাম, অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রুশাদ ফরিদী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মির্জা তাসলিমা সুলতানা ও সাঈদ ফেরদৌস, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল্লাহ হারুন চৌধুরী, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) অলিউর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অরণি সেমন্তি খান ও কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার তামান্না মাকসুদ।

(প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে নেওয়া)

spot_img
spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ প্রকাশিত

spot_img