এডুকেশন টাইমস ডেস্ক: ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনী বিলের ২০ ও ২১ নম্বর প্রস্তাবনায় সংবিধানের ৫৮(ক) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে। তাই বিদ্যমান সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের বেতন ও সুযোগ সুবিধার বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছুই বলা নেই।
তবে প্রধানমন্ত্রীর সমান পদমর্যাদায় দায়িত্বপালন করবেন প্রধান উপদেষ্টা। একইভাবে মন্ত্রীর সমান মর্যাদায় দায়িত্ব পালন করবেন উপদেষ্টারা। সেই হিসাব অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর পাওয়া সব সুযোগ সুবিধাই পাবেন প্রধান উপদেষ্টা এবং মন্ত্রীদের পাওয়া সব সুবিধা পাবেন উপদেষ্টারা। তবে দায়িত্বপালন শেষ করে তারা যখন সরকার ছেড়ে চলে যাবেন, তখন তারা সবাই সাধারণ নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবেন। এক্ষেত্রে একমাত্র প্রধান উপদেষ্টা দায়িত্ব ছাড়ার পরে সরকারি ব্যবস্থাপনায় দুই বছর আবাসিক সুবিধা পাবেন। বঙ্গভবন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের ২০১৬ সালের ৪ মার্চ আর্কাইভ করা তথ্যমতে ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল’ সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল সম্পর্কে ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনী বিলের ২০ ও ২১ নম্বর প্রস্তাবনায় বলা হয়, সংবিধানের ৫৮(ক) অনুচ্ছেদ বিলুপ্ত হইবে। সংবিধানের ২(ক) পরিচ্ছেদে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হইবে।
জানা গেছে, একজন প্রধানমন্ত্রীর কাজ হলো সঠিকভাবে দেশকে পরিচালনা করা। তবে বিনামূল্যে এই কাজ করেন না তিনি। এইজন্য অন্য চাকরিজীবীদের মতই মাসের শেষে মাইনে পান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। সেইসঙ্গে তিনি পান একাধিক সুবিধা। দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স (রেমুনারেশেন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৬ অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বেতন মাসে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এছাড়া তিনি মাসিক বাড়ি ভাড়া পান ১ লাখ টাকা, দৈনিক ভাতা পান ৩ হাজার টাকা। বর্তমান প্রধান উপদেষ্টাও একই সুবিধা পাবেন।
প্রধানমন্ত্রীর মাসিক বেতন ছাড়াও, যাতায়াত খরচ, বাড়ির ভাড়া, ডেইলি অ্যালাউন্স, ইনস্যুরেন্স সুবিধা, কূটনৈতিক পাসপোর্ট, নিজের দফতরের এবং অন্য টেলিফোন ব্যয়, চিকিৎসা সেবাসহ আরও অনেক সুবিধা পেয়ে থাকেন সরকার প্রধান; যার তার পুরোটাই দেয় রাষ্ট্র। নতুন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার জন্যও এসব খরচ পুরোটাই দেবে রাষ্ট্র।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীরা সাধারণত নির্বাচিত হওয়ার পর একটা সরকারি বাসভবন পান। অতীতের রেকর্ড মতে বর্তমান প্রধান উপদেষ্টাও এই সুবিধা পাবেন। এর সাজানো থেকে শুরু করে রক্ষণাবেক্ষণের যাবতীয় খরচ বহন করবে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ফান্ড থেকে এর পেছনে এক টাকাও খরচ করতে হয় না। কেউ চাইলে নিজের বাড়িতে অথবা অন্য কোথাও বাড়িভাড়া নিয়েও থাকতে পারবেন। সেক্ষেত্রে সেই বাড়িও সরকারি টাকায় অত্যাধুনিক বিলাসবহুল করে সাজিয়ে দেওয়া হবে। বাড়িভাড়া হিসেবে একটি বড় অঙ্কের অর্থ পান প্রধানমন্ত্রী। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর হাউজ রেন্ট অ্যালাউন্সের পরিমাণ প্রতিমাসে ১ লাখ টাকা। তার বাড়ির নিরাপত্তায় থাকেন স্পেশাল ফোর্সের সদস্যরা। বর্তমান উপদেষ্টাও একই সুবিধা পাবেন বলে জানিয়েছে বঙ্গভবন সূত্র।
প্রধানমন্ত্রীর মতো প্রধান উপদেষ্টাকেও বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন, পানির বিল যত খরচই হোক না কেন, এসব নিয়ে কোনও চিন্তাই করতে হবে না। সবকিছুই খরচ হবে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে। দেশ এবং দেশের বাইরে যাতায়াত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর যে টাকা খরচ হয়, তাও সম্পূর্ণ বহন করে রাষ্ট্র। দেশের মধ্যে ট্রেনে যাতায়াতের ক্ষেত্রে, তার জন্য বরাদ্দ থাকে বিলাসবহুল রেলওয়ে সেলুন কোচ। পরিবারের কোনও সদস্য থাকলে, তারাও ফ্রিতে যাতায়াত করতে পারেন। এছাড়াও বিমানে ভ্রমণে যে খরচ হয়, তাও বহন করে রাষ্ট্র। আকাশপথে ভ্রমণের সময় রাষ্ট্রীয়ভাবে, বাৎসরিক ২৫ লাখ টাকার ইন্স্যুরেন্স কাভারেজ পান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও প্রতিদিন ৩ হাজার টাকা পান তিনি। প্রধান উপদেষ্টাও একই সুবিধা পবেন।
একইভাবে মন্ত্রিসভার একজন পূর্ণমন্ত্রীর সমান বেতনভাতা ও আনুষঙ্গিক সুযোগ সুবিধা পাবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন উপদেষ্টা। দ্য মিনিস্টারস, মিনিস্টার অব স্টেট অ্যান্ড ডেপুটি মিনিস্টারস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৬ অনুযায়ী, একজন মন্ত্রী বেতন পান মাসিক ১ লাখ ৫ হাজার টাকা। ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা এবং চিফ হুইপরাও সমান বেতন পান। মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী কাউকেই তাদের বেতনের জন্য কোনও কর পরিশোধ করতে হয় না। সেক্ষেত্রে একজন উপদেষ্টাকেও রাষ্ট্র একই সুবিধা দেবে।
সরকারের নিয়ম অনুযায়ী একজন মন্ত্রী দৈনিক ভাতা পান ২ হাজার টাকা। নিয়ামক ভাতা পান মাসে ১০ হাজার টাকা। স্বেচ্ছাধীন তহবিল থাকবে ১০ লাখ টাকা। মোবাইল ফোন কেনার জন্য ৭৫ হাজার টাকা। সরকারি খরচে সার্বক্ষণিক গাড়ি পাবেন। ঢাকার বাইরে অফিশিয়াল ট্যুরের জন্য অতিরিক্ত একটি জিপ গাড়ি পান, যার যাবতীয় খরচ সরকার বহন করে। উপদেষ্টারাও এই সুবিধা পাবেন।
উপদেষ্টারা সরকারি খরচে রেল ভ্রমণ ও বিদেশ ভ্রমণের খরচ পাবেন। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী সরকারের একজন পূর্ণমন্ত্রী বিনা ভাড়ায় সরকারি বাসভবন সুবিধা পান। তার বাসার গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, টেলিফোনসহ ভবনটির যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ সরকার বহন করে সরকার। সরকারি বাসায় সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা মূল্যের আসবাবপত্র সরকারি বাসায় না থাকলে বাড়ি ভাড়া বাবদ ৮০ হাজার টাকা, সেই সঙ্গে বাড়ি ব্যবস্থাপনা খরচ ও সব ধরনের সেবা খাতের বিল, বিমান ভ্রমণের জন্য বিমা সুবিধা ৮ লাখ টাকা পেয়ে থাকেন একজন মন্ত্রী। এছাড়াও মন্ত্রীরা সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রহরী পান। বাসস্থান থেকে অফিস বা অফিস থেকে বাসস্থানে যাতায়াতের জন্য খরচ পান। নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের ভ্রমণ খরচও পান তারা। এছাড়া অন্তত দুজন গৃহকর্মীর ভ্রমণের খরচ পান একজন মন্ত্রী। এসব সুবিধাই নতুন সরকারের উপদেষ্টারা পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
একজন মন্ত্রী উপসচিব পদমর্যাদার একজন একান্ত সচিব, সহকারী সচিব পদমর্যাদার একজন সহকারী একান্ত সচিব এবং ক্যাডারের বাইরে থেকে আরেকজন সহকারী একান্ত সচিব ও জাতীয় বেতন স্কেলে দশম গ্রেডের দুজন কর্মকর্তা পান। আরও পান একজন জমাদার ও একজন আরদালি, দুজন এমএলএসএস এবং একজন পাচক বা পিয়ন। এসব সুবিধাও দেওয়া হবে উপদেষ্টাদের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহাবুব হোসেন জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর মতো রাষ্ট্রের নির্বাহী দায়িত্ব পালন করবেন। উপদেষ্টারাও মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। সে ক্ষেত্রে তারা রাষ্ট্রের বিদ্যমান সব সুযোগ-সুবিধাই পাবেন।
(বাংলা ট্রিবিউনের রিপোর্ট)
এসআই/