spot_img

গ্রেড ভিত্তিক বৈষম্য দূর করার দাবিতে ডিএমটিসিএল’র কর্মচারীদের সংবাদ সম্মেলন

এসম্পর্কিত আরো পড়ুন

নিউজ ডেস্ক: ডিএমটিসিএল এর গ্রেড ভিত্তিক বিভিন্ন বৈষম্য দূরীকরণে উক্ত প্রতিষ্ঠানের ১০ থেকে ২০ গ্রেডের কর্মচারিদের আহবানে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১০ আগস্ট (শনিবার) এ সংবাদ সম্মলেনটি অনুষ্ঠিত হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে কার্যকর ও গনমানুষের আস্থার একমাত্র গণপরিবহন হিসাবে ঢাকা মেট্রোরেল গত ২৮ ই ডিসেম্বর ২০২২ সাল থেকে সফলভাবে অপারেশন ও মেইনটেইনেন্স করে আসছে। শুরুতে যাত্রীদের অভ্যন্ত করতে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় মেট্রো অপারেশন চালু থাকলেও পরবর্তীতে হেডওয়ে কমিয়ে এনে পুরো দিন মেট্রো অপারেশন হয়ে আসছে।

- বিজ্ঞাপন -

প্রতিদিনের মেট্রো অপারেশন শুরু করার ক্ষেত্রে বেশ কিছু প্রসেসের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যা মূলত মাঠপর্যায়ের কর্মচারীগণ (গ্রেড ১০ থেকে গ্রেড ২০) পালন করে থাকে। সম্মানিত যাত্রীদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে যাত্রী পরিবহনের পূর্বে একটি সুইপ ট্রেন পরিচালনা করা হয় ট্র্যাক সম্পূর্ণরুপে প্রস্তুত রয়েছে কিনা তা যাচাই করার জন্য। প্রতিদিনের যাত্রী পরিবহনের জন্য নির্দিষ্ট ট্রেনগুলো প্রত্যেক রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মচারীগণ কর্তৃক নিরাপত্তা নিশ্চিত পূর্বক ফিটনেস পাশ করেই তবে ছাড়পত্র পেয়ে থাকে। প্রত্যেক দিনের অপারেশন শুরুর পূর্বে প্রত্যেকটি স্টেশন যাত্রীদের জন্য পুরোপুরি নিরাপদ কিনা তা যাচাই করা হয় স্টেশন স্টাফ এর মাধ্যমে। সবশেষে একজন দক্ষ সার্টিফাইড ট্রেন অপারেটর কর্তৃক ট্রেন অপারেশন পরিচালিত হয়ে থাকে। এছাড়া প্রতিদিন রাতে ট্রেন ও প্রতিটি স্টেশন পরবর্তী দিনের জন্য প্রস্তুত করতে রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের কর্মচারীগণ শিডিউল মেইনটেইনেন্স/ কারেকটিভ মেইনটেইনেন্স করে থাকেন। এই সকল কিছুর একটাই উদ্দেশ্য থাকে যে সম্মানিত যাত্রীদের নিরাপদ ও আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত করা। কার্যত ডিএমটিসিএল এর মাঠপর্যায়ের কর্মচারীগণ সরাসরি এই সকল কাজে নিয়োজিত থাকেন।

এর পরেও সম্মানিত যাত্রীদের কাছ থেকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অভিযোগ পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে কিছু অভিযোগ সত্য হলেও আমাদের স্তরে সেগুলোর সঠিক সমাধান দেওয়া সম্ভব হয় না বলে আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ চাইলে সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করা সম্ভব ছিলো, কিন্তু এসকল বিষয়ে তাদের উদাসীনতা আমাদের ব্যথিত করে।

এমনকি এই একই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নিজের প্রতিষ্ঠান এর ১০ থেকে ২০ গ্রেডের ক্ষেত্রেও বৈষম্য সৃষ্টি করে আসছে শুরু থেকেই। এমনকি বারবার বলার পরেও তারা এসকল বিষয় নিরসনে উদাসীন থাকেন।

দুঃখের সাথে জানাতে হচ্ছে যে, গত ২৮ ডিসেম্বর ২০২২ সালে অপারেশন শুরু এবং এর ০৬ জুন, ২০১৩ সাল থেকেই ডিএমটিসিএল প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে রূপ লাভ করলেও এখনো পর্যন্ত সঠিক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে উঠেনি। এমনকি প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট সার্ভিস

রুলস না থাকায় কর্মচারীগণ তাদের প্রাপ্য বিভিন্ন ভাতাসমূহ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রাতিষ্ঠানিক রুলস না থাকায় উর্ধ্বতন অনেক কর্তৃপক্ষের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ও কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন উঠার সুযোগ রয়েছে।

এছাড়া উক্ত প্রতিষ্ঠানে গ্রেড ১ থেকে গ্রেড ৯ পর্যন্ত কর্মচারীগণ জাতীয় বেতন স্কেলের ২.৩ গুণ হারে এবং গ্রেড ১০ থেকে গ্রেড ২০ কর্মচারীগণ জাতীয় বেতন স্কেলের ২ গুণ হারে মূল বেতন পেয়ে থাকেন। যা দৃশ্যত বৈষম্য।

উপরোক্ত বৈষম্যগুলোর দ্রুত সমাধানের জন্য বারবার কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলেও আজ অবধি কার্যত কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। বরং এই বিষয়ে বারবার অবহিত করার দরুণ অনেককেই তিরস্কার ও দুই একজন স্যার কর্তৃক অনেককে চাকুরি হতে অব্যাহতির ভয় দেখানো হয়।

আরো উল্লেখ্য করা যাচ্ছে যে, উল্লেখিত বেতন বৈষম্য দূরীকরণে ডিএমটিসিএল বোর্ড এর সকল সদস্য কর্তৃক বারবার মতামত দেওয়া হলেও ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষ তা উপেক্ষা করেন।

আপনারা সকলেই জানেন সম্প্রতি দুর্বৃত্ত কর্তৃক মেট্রোরেল এর স্টেশন ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কারনে আপাতত মেট্রো অপারেশন বন্ধ রয়েছে। তবে অপারেশন বন্ধ থাকলেও অনান্য স্টেশন সমূহে রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মচারীগণ কর্তৃক শিডিউল মেইনটেইনেন্স করে মেট্রো পরিচালনার পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেওয়ার সাথে সাথেই মাঠ বিভাগের সকল কর্মচারীগণ (১০ম গ্রেড থেকে ২০তম গ্রেড) ট্রেন পরিচালনা করতে প্রস্তুত রয়েছে।

তবে যেহেতু আপামর ছাত্র জনতার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এর বিজয়ের পর বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশের সুচনা হয়েছে,

সেহেতু নতুন বৈষম্যহীন বাংলাদেশে ঢাকা মেট্রোর ক্ষেত্রেও গ্রেড ভিত্তিক সকল বৈষম্য দূর করে পুনরায় অতি দ্রুত নতুন উদ্যমে মেট্রো পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ শুরু করে সম্মানিত যাত্রীদের চাহিদার প্রতিফলনে আশাবাদ ব্যক্ত করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় ডিএমটিসিএল এ বিদ্যমান গ্রেড ভিত্তিক বৈষম্য দূরীকরণে গ্রেড ১০ থেকে গ্রেড ২০ গ্রেডের কর্মচারীগ পক্ষ থেকে নিম্নলিখিত দাবীসমূহ উপস্থাপন করা হচ্ছেঃ

১। বর্তমান বেতন কাঠামো অনুযায়ী ১-৯ম গ্রেড পর্যন্ত জাতীয় বেতন স্কেল-এর ২.৩ গুণ হারে এবং ১০-২০তম গ্রেড পর্যন্ত জাতীয় বেতন স্কেল-এর ২.০ গুণ হারে প্রদান করা হচ্ছে। যা পরিবর্তন করে বৈষম্যহীন বেতন কাঠামো অর্থাৎ সকল গ্রেডের একই রকম

বেতন কাঠামো যা জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ এর ২.৩ গুণ হারে যোগদানের তারিখ হতে বকেয়াসহ প্রদান করতে হবে। অর্থাৎ ডিএমটিসিএলে দুই ধরনের বেতন কাঠামো বিদ্যমান। ১-৯ম গ্রেডের জন্য এক রকম এবং ১০-২০তম গ্রেডের জন্য অন্যরকম। যা দূর করে একই হারে বেতন কাঠামো প্রদান করতে হবে।

২। চাকুরিতে যোগদানের তারিখ হতে বকেয়াসহ সিপিএফ সুবিধা প্রদান করতে হবে।

৩। রাষ্ট্রের অন্যান্য সকল স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানির সাথে সামঞ্জস্য রেখে এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশের মেট্রোরেলের সাথে সমন্বয় করে ১০ম গ্রেডের উচ্চতর পদ, ১৫তম ও ১৬তম গ্রেডের পদসমূহের গ্রেড উন্নয়ন করে অর্গানোগ্রাম (প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো) প্রণয়ন করতে হবে এবং বিশ্বের সকল মেট্রোরেলের সাথে সামঞ্জস্য রেখে যথাসময়ে মেধা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রমোশনের ব্যবস্থাসহ অন্যান্য সকল ভাতা ও সুযোগ সুবিধা সমূহ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করে অতি দ্রুত সার্ভিস বুলস প্রকাশ করতে হবে।

৪। শিক্ষানবিশকাল শেষে অন্যান্য সকল সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানির ন্যায় যোগদানের তারিখ হতে স্থায়ীকরণ (নিয়মিতকরণ) করতে হবে।

৫। স্টেশন ও ডিপোসহ সকল স্থানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাসহ পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করে ডিউটি প্রদান করতে হবে।

৬। সর্বোপরি, কর্মক্ষেত্রে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের স্বৈরাচারী মনোভাব ও বৈষম্যমূলক আচরণ এবং ব্যক্তিগত আক্রোশের যেন বহিঃপ্রকাশ না ঘটাতে পারে-সেই নিশ্চয়তা প্রদান ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে।

উল্লিখিত দাবীসমূহ বাস্তবায়নে গ্রেড ১০ থেকে গ্রেড ২০ এর কর্মচারীগণ গত ০৬.০৮.২০২৪ খ্রি. তারিখ হতে কর্মস্থলে উপস্থিত থেকে কর্মবিরতি পালন করে আসছে। গত তিন (৩) বছর ধরে তারা আামদেরকে আশ্বস্থ করছেন, বর্তমানেও তারা আমাদের সাথে দেখা করে আগের মতোই আশ্বস্থ করছেন। যার কোনো ফলাফল আমরা আগেও দেখতে পাইনি, এখনো দেখতে পাবো কি না সন্ধিহান- এর জন্য নিশ্চিত না হয়ে আমরা কর্মবিরতি বন্ধ করতে চাচ্ছি না। আমরা অতি দ্রুত মেট্রো অপারেশন করতে চাই। কিন্তু উনারা আমাদের সাথে বিষয়গুলো নিয়ে সমাধানের চেষ্টা না করে মূলত মেট্রো অপারেশন পিছিয়ে দিতে চাচ্ছেন। যা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত।

ঢাকা শহরের সম্মানিত মেট্রো যাত্রীদের দ্রুত মেট্রো অপারেশন চালুর চাহিদাকে মাথায় রেখে এবং বৈষম্যবিহীন নতুন বাংলাদেশে ডিএমটিসিএল এর গ্রেড ভিত্তিক সকল বৈষম্য দূর করে গ্রেড ১০ থেকে গ্রেড ২০ এর কর্মচারীগণ অতিদ্রুত মেট্রো অপারেশন চালুর বিষয়ে বদ্ধপরিকর।

ইএইচ/

spot_img
spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ প্রকাশিত

spot_img