এডুকেশন টাইমস
১ অক্টোবর ২০২৪, ৬:৪১ অপরাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

ইসরায়েলের পরবর্তী টার্গেট কি খামেনি?

লেখক: তানভীর খান

তানভীর খান: ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারী, সিরিয়ার বেসরকারি বিমান পরিবহন সংস্থা ছাম উইংসের একটি ফ্লাইটে রাত ১২টা ৩৫ মিনিটে ইরাকের বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন ইরানের রেভ্যুলশনারি গার্ডের কুদস শাখার প্রধান জেনারেল কাসেম সোলাইমানি। বিমানবন্দরে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন তার দীর্ঘদিনের বন্ধু এবং ইরাকে ইরানের বড় মিত্র হাশদ আল-শাবির উপ-প্রধান আবু মাহদি আল-মুহানদিস। বিমানবন্দরে নামার পর ছোট অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সোলেইমানিকে স্বাগত জানানো হয়। তারপর দুটি গাড়িতে মুহানদিসের সঙ্গে বাগদাদের গ্রিন জোনে অবস্থিত তার বাড়িতে যাওয়ার জন্য যাত্রা শুরু করেন সোলেইমানি। তারা দুজন একই গাড়িতে ছিলেন।

ওদিকে জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে আগে থেকেই নজরদারিতে রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র। বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে জেনারেল সোলাইমানি ও মুহানদিসকে বহনকারী টয়োটা আভালন গাড়িটি যাত্রা শুরু করে, সাথে নিরাপত্তারক্ষীদের গাড়িও রয়েছে। একটু পরেই আকাশ থেকে মার্কিন এমকিউ-নাইন রিপার ড্রোন থেকে দুটি গাড়ি লক্ষ্য করে তিনটি গাইডেড ক্ষেপনাস্ত্র ছোড়া হয়। জেনারেল সোলাইমানি ও মুহানদিস ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

শুধু যুক্তরাষ্ট্রের কাসেম সোলাইমানি বা মুহানদিস হত্যাই নয়, এরপর যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা ও দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের কল্যাণে ইসরায়েলও একের পর এক হত্যা করেছে তাদের টার্গেটে থাকা ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানী, হামাস নেতা, বেশ কয়েকজন ইরানি জেনারেল এবং সর্বশেষ হিজবুল্লাহ প্রধানকে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে পরবর্তী টার্গেট হতে যাচ্ছে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি, তাই ইতোমধ্যে খামেনিকে ইরান তার অভ্যন্তরেই অজ্ঞাত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে।

জেনারেল কাসেম সোলাইমানি হত্যার কয়েকমাস পরেই ২৭ নভেম্বর ২০২০ এ হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিযাদেহ। তিনি একটি বুলেটপ্রুফ গাড়িতে করে তার স্ত্রীকে নিয়ে তেহরানের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। সে সময় নিরাপত্তাবাহিনীর তিনটি গাড়ি তাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল। হঠাৎ তার গাড়িতে একটি বুলেট লাগার শব্দ হলে তা দেখতে তিনি বের হন। এরপরই একটি রিমোট কন্ট্রোলড বন্দুক থেকে গুলি ছোড়া হয়। জানা যায়, ফখরিজাদেহের গাড়ি থেকে ১৫০ মিটার দূর থেকে তাকে গুলি করা হয়েছিল। তার শরীরে অন্তত ৩টি গুলি করা হয়। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ইরান এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে সরাসরি ইসরাইলের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করে। তবে চুপ ছিল ইসরায়েল। ইসরায়েল এবং পশ্চিমা গোয়েন্দারা মনে করতেন, মি. ফখরিযাদেহ ইরানের পারমানবিক কর্মসূচির প্রধান স্তম্ভ।

এরপর ২০২৪ সালে এপ্রিলের শুরুতেই সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেট ভবনে ইসরায়েলি হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ডস বাহিনীর কুদস ফোর্সের শীর্ষ কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি এবং ডেপুটি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ হাদি হাজি-রহিমিসহ সাত কর্মকর্তা নিহত হন।

এর কিছুদিন পরে ১৯ মে, ২০২৪ ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদোল্লাহিয়ান দেশের অভ্যন্তরে একটি হেলিকপ্টার দূর্ঘটনায় নিহত হন। এই ঘটনাটিতেও অনেকে ইসরায়েলের সংশ্লিষ্টতা খোঁজার চেষ্টা করেছেন, কারণ প্রথমে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেটে ইসরায়েল হামলা করে। এরপর এর প্রতিশোধ হিসেবে এপ্রিলেই কয়েকশত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলের উপর হামলা চালায় ইরান। এর পরই এমন দুর্ঘটনা।

এরপর ৩১ জুলাই ২০২৪, হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান ইসমাইল হানিয়াকে ইরানের অভ্যন্তরে হত্যা করে ইসরায়েল। ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে তিনি ইরানে গিয়েছিলেন।

আবার দুই মাস না যেতেই গত ২৭ সেপ্টেম্বর ইরান সমর্থিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় ইসরায়েল ইরানের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যা করেছে। এর আগে, ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ইরানের চারজন পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত হন। ইরান সেসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে সরাসরি ইসরাইলের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করেছে।

এই হত্যাকাণ্ডগুলোর পেছনে নানাবিধ কারণ রয়েছে, প্রথমত ইসরায়েল চায় না পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে তার শত্রু বেঁচে থাকুক। দ্বিতীয়ত ইসরায়েলের রয়েছে দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ, তাদের নিখুঁত পরিকল্পনার কাছে ইরান বা ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো অনেকটাই নাজুক। এছাড়া ইসরায়েলের রয়েছে উন্নত প্রযুক্তিতে তৈরি অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র। সর্বোপরি আমেরিকা তথা পশ্চিমা বিশ্বের নিরঙ্কুশ সমর্থন ও সর্বাত্মক সহযোগিতা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হামলায় সরাসরি আমেরিকা সহযোগিতা করে। আবার কোনোটায় গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে।

অপরদিকে ইরান বা ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে তেমন সহযোগিতা পায় না। বরং ধীরে ধীরে আরব বিশ্বের দেশগুলো ফিলিস্তিনের অধিকারের পক্ষে অবস্থান না নিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছে, সম্পর্ক স্বাভাবিকও করেছে।

এমতাবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সঙ্গে লড়াইয়ে টিকে থাকতে হলে ইরানকে তার গোয়েন্দা সক্ষমতা ছাড়াও সামরিক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোর সঙ্গে বিবাদ মিটিয়ে শক্তিশালী জোট গঠন করতে হবে। সেই সাথে চীন রাশিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ও বোঝাপড়ার মাত্রাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে হবে।

লেখক: তানভীর খান

শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এবার রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের দাবি জানালেন সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ 

ইউনূসের সরকার ওয়ান ইলেভেনের মতোই: ফরহাদ মজহার

শিক্ষার্থীদের খোঁজ নিতে হঠ্যাৎ করেই পাবিপ্রবির হলে উপাচার্য

দুইদিন ব্যাপি পাবিপ্রবিতে ১৫তম আইইইই দিবস পালিত

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে শনিবার থেকে বৈঠক শুরু প্রধান উপদেষ্টার

প্রয়োজন হলে জামায়াতের সাথে এক হয়ে কাজ করবো: মুফতি ফয়জুল করীম

দেশে ফিরেছেন ইসলামি বক্তা মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী

‘রাজনৈতিকভাবে সরকারের অধিকর্তাবৃন্দ স্থায়ী প্রশাসন কে নিয়ন্ত্রণ করে’

কুবিতে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু ২৭ অক্টোবর

শাল্লায় অ্যাকাডেমিক ভবন প্রধান শিক্ষক ও তার ভাইয়ের দখলে

১০

পরীক্ষা দিতে এসে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে ইবি ছাত্রলীগের ২ নেতা

১১

ঢাবি ছাত্রশিবিরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ

১২

শিক্ষক জসিমকে বাধ্যতামূলক ছুটি দিলো কুবি প্রশাসন, প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক

১৩

বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায় রাবির ২৯৪ শিক্ষক 

১৪

ঝুঁকিতে পাবিপ্রবি; মেয়াদ নেই ৬৫ শতাংশ অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের

১৫

ফের সাতদিনের রিমান্ডে সালমান এফ রহমান

১৬

পাবিপ্রবির মেডিক্যাল সেন্টারে যেসব সেবা পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা

১৭

ববিতে আয়োজন হতে চলেছে ক্যাম্পাস গরু পার্টির

১৮

সাংবাদিকদের সাথে শাবি উপাচার্যের মতবিনিময়

১৯

ইবির নতুন প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান 

২০