এডুকেশন টাইমস
৩১ মার্চ ২০২৪, ৩:১৫ অপরাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

‘বুয়েটকে নষ্ট করতে চাইলে দরকার পুরোদমে রাজনীতি চালু করা’

লেখক: ড. কামরুল হাসান মামুন

ড. কামরুল হাসান মামুন: বাংলাদেশের ৩টি সেরা কলেজের নাম বলতে গেলে প্রথমেই আসবে নটরডেম কলেজ। তারপর আসবে হলিক্রস ও সেন্ট জোসেফ। এই তিন প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করতে চাইলে কী করতে হবে? শুধু মাত্র রাজনীতি চালু করতে হবে। এক সময় ঢাকা কলেজ আর নটরডেম কলেজের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতা ছিল। রাজনীতি ওটাকে শেষ করে দিয়েছে। বাংলাদেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বলতে গেলে বুয়েটের নাম সবার আগে আসে। এই বুয়েটকে নষ্ট করতে চাইলে দরকার ওখানে পুরোদমে রাজনীতি চালু করা।

বাংলাদেশের দুটি বড় দল যেই ছাত্রদের দিয়ে যেই রাজনীতি করায় এই রাজনীতি যদি হার্ভার্ড, এমআইটি কিংবা ক্যামব্রিজ বা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু করা হয় সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মানে নেমে আসবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি থাকার ফল কী হয়েছে? একটি মাত্র দল রাজনীতি করবে। সেই দলের ছাত্রদের কিভাবে সমীহ করতে হবে, জোর করে মিছিলে নামাতে বাধ্য করতে গেস্ট রুমে ডেকে এনে ছাত্র হয়ে ছাত্রদের টর্চার করে। বর্তমানে বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতি মানে ক্যাস্ট্রেটেড হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যাবে না। এখনকার ছাত্রনেতারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শুধু ভুলে যায়নি কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে মেরেধরে থামিয়ে দেওয়া হয়। শিক্ষায় বরাদ্দ কমালে ছাত্রনেতারা এখন আনন্দ মিছিল করে। ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়ার জন্য ন্যূনতম একটা পড়ার টেবিল পায় না, ঘুমানোর জন্য একটা বিছানা পায় না, ভালো মানের খাবার পায় না। বুয়েটে এখন যারা ছাত্র রাজনীতি চালু করার কথা বলছে তারা কী কখনো এসবের জন্য দাবি জানিয়ে কোন আন্দোলন করেছে? জোর করে বিরোধীদলকে থামিয়ে নিজেরা একচ্ছত্র রাজনীতি করার নামই কী ‘ছাত্র রাজনীতি করার অধিকার’? MIST এবং BUP ওগুলোও তো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। ওখানে তো ছাত্র রাজনীতি খোলার দাবি জানানোর সাহস দেখি না। ও দুটো প্রতিষ্ঠান শুধু মাত্র ছাত্র রাজনীতি না থাকার কারণে একটা সুষ্ঠূ পরিবেশ আছে যেটা নিয়ে ওখানের ছাত্ররা এবং তাদের অভিবাবকরা খুশি।

কেউ কেউ বলে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্ররাজনীতির অনুপস্থিততে কট্টরপন্থী সংগঠনগুলো গোপনে ঢুকে যায়। এই ক্ষেত্রে উদাহরণ দেয় বুয়েটকে। আরো বলে ছাত্র রাজনীতি হয়তো একটা ক্যাম্পাসকে রুগ্ন করে দেয় কিন্তু মৌলবাদ একটা দেশকে বিধ্বস্ত করে দেয়।

এই বক্তব্যের সাথে আমি একদম একমত নই। একটা খারাপকে আরেকটা খারাপ দিয়ে মোকাবেলা একদম ঠিক না এবং করা যায় না। খারাপকে প্রতিস্থাপিত করতে হবে ভালো দিয়ে। ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি আমাদের কত মেধাবীর মেধার অপচয় ঘটিয়েছে তার হিসাব কী কেউ করেছে? কত মেধাবীর জীবন গেছে তার হিসাব কী কেউ করেছে?

ছাত্রদের স্কলারশিপ দিয়ে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল করুন। ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক কর্মকানণ্ড, সামাজিক কর্মকাণ্ড ও খেলাধুলা বেশি করে চালু করুন। এইসবের মাধ্যমেই ছাত্রছাত্রীরা সত্যিকারের মানবিক নেতৃত্ব শিখে। আমাদের দেশের এখন যেই রাজনীতি বিদ্যমান এই রাজনীতি দিয়ে ছিনতাই শিখে, মারামারি শিখে, ধান্দাবাজি শিখে বড় হয় যা কর্মজীবনেও জারি রাখে। ছাত্র রাজনীতি দিয়েই যদি কট্টর ধর্মান্ধপন্থী সংগঠনগুলোকে ঠেকানো যেত তাহলে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এইসব আছে কিভাবে? ছাত্রলীগ ছাত্রদল কী এইসব থামাতে পেরেছে বা তাদের মিশন কী এইসব থামানো? পুরো দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে অসুস্থ রাজনীতি নষ্ট করে দিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এইটা রাজনীতি করার জায়গা না। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা হলো কারিকুলারের অংশ আর খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড হলো এক্সট্রাকারিকুলার এক্টিভিটিজের পার্ট। দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা বৃত্তি ও ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্ধকারের রাজনীতি ঢুকে ছাত্রদের ভালনারেবিলিটিকে পুঁজি করে। এইসব এক্সট্রাকারিকুলার এক্টিভিটিজ ছাড়া একজন শিক্ষার্থী পূর্ণাঙ্গ মানুষ হতে পারে না। কিন্তু যেই রকমভাবে আমাদের দেশে ছাত্র রাজনীতি গত ৩০-৪০ বছর যাবৎ দেখছি এর মাধ্যমে কেবল লেখাপড়া বিঘ্নিত হতে দেখি, মেধাবীদের মেধার মৃত্যু দেখি। ছাত্র দ্বারা ছাত্র হত্যা দেখি। বিশ্বের কোনো দেশের কোনো ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে এইসব নাই। আসলে এই দুটো এক সাথে এক স্থানে থাকতে পারে না। আমাদের দেশই এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ।

আজ যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও ছাত্র শিক্ষকদের তথাকথিত বড় দুই দলের ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতি না থাকতো আমি হলফ করে বলতে পারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক অনন্য উচ্চতায় উঠে যাবে। কেউ একে দাবায়ে রাখতে পারবে না। হ্যাঁ আদর্শভিত্তিক রাজনীতি করতে পারবে, সাংস্কৃতিক এক্টিভিটিজ করবে, বিভিন্ন এক্সট্রাকারিকুলার এক্টিভিটিজ করবে এবং এইসবের মাধ্যমেই নেতৃত্ব শিখবে। দলান্ধতা আর ক্ষমতা লিপ্সু রাজনৈতিক নেতাদের চামচামি করে নেতৃত্ব শেখা যায় না বরং নিজেদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ধ্বংস হু যা দেশের জন্য ক্ষতিকর।

লেখক: ড. কামরুল হাসান মামুন, অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

এসআই/

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাবি যশোর জেলা সমিতির সভাপতি জুয়েল, সম্পাদক সজীব

বেরোবিতে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পত্রিকা পুড়িয়ে বয়কটের ডাক

নিয়োগ দিচ্ছে এসএমসি গ্রুপ, ৩টি উৎসব বোনাসসহ থাকছে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা

বেরোবিতে ফুটসাল চ্যাম্পিয়ন সাংবাদিকতা বিভাগ

কাকরাইলে আগামীকাল সকল জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে ডিএমপি

বাকৃবিতে বাঁধনের ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবিতে আগামীকাল জাপার সমাবেশ

সাত কলেজ নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে যা জানিয়েছে ঢাবি

সমঝোতা হয়নি, ফের ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ ববি শিক্ষার্থীদের

রাবিতে ইউনিস্যাব’র ট্যালেন্ট হান্ট-৩ ফাইনাল অনুষ্ঠিত

১০

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন শুরু, ফি বেড়েছে ১২৫ টাকা

১১

সিমাগো র‍্যাঙ্কিংয়ে চতুর্থ অবস্থানে হাবিপ্রবি’র গণিত বিভাগ

১২

জাবিতে আইএইজি-র ৬০ বছর পূর্তি উদযাপন

১৩

নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে আইইইই স্পিক্সকন সম্মেলন : উপাচার্য

১৪

জাবিতে সকল ছাত্রসংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিতের দাবি

১৫

চবি শিক্ষার্থীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

১৬

বুয়েট সিএসই ফেস্ট সিটিএফ প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় রানার্স-আপ ইবি

১৭

বুটেক্সে প্রথমবারের মতো শ্যামা পূজা উদযাপিত

১৮

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি

১৯

জাতীয় পতাকার ওপর গেরুয়া পতাকা উত্তোলন, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা

২০