spot_img

ইবিতে সনদ উত্তোলনে ভোগান্তি সমাধানে ৬ প্রস্তাবনা

এসম্পর্কিত আরো পড়ুন

আজাহারুল ইসলাম: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে অর্থাৎ স্নাতক-স্নাতোকোত্তর সম্পন্ন করে সনদ, ট্রান্সক্রিপ্ট, নম্বরপত্র ফল প্রকাশের তারিখসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উত্তোলনে ভোগান্তির যেন শেষ নেই। গণমাধ্যমে বারবার সংবাদ প্রচার হলেও কর্তৃপক্ষের যেন হেলদোল নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন স্টেকহোল্ডার শিক্ষার্থীরা হলেও এ ব্যাপারে উপাচার্যরা সমাধান এনে দিতে পারেনি। উত্তীর্ণ হওয়ার চেয়েও সনদ সংগ্রহ যেন আরো দুরূহ। তাই শিক্ষার্থীরা এটিকে ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুঃখ’ বলেও আখ্যায়িত করেন।

এদিকে কাগজপত্র উত্তোলনে বিড়ম্বনা কমাতে স্নাতক ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে ‘অনলাইন অটোমেশন প্রিন্ট’ সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট দেওয়া শুরু হয়। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এই দুইটি কাগজ দিতে পারছেন তারা। তবুও নাম ভুল, হলের নাম ভুল সহ বিভিন্ন বিভ্রান্তি কাটেনি। এদিকে এই পদ্ধতিতে নম্বরপত্র ও ফল প্রকাশের তারিখ এখনো দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট দপ্তরটি।

- বিজ্ঞাপন -

এখানেই শেষ নয়। বিড়ম্বনার কোনো শেষ নেই কাগজপত্র উত্তোলনে। তাছাড়া সনদ, নম্বরপত্র লেখার ঘরের নাম গোপনীয় শাখা হলেও সেখানে উপচে পড়া ভীড় লেগেই থাকে। পা ফেলবারও যেন জায়গা নেই। এবার আসি ভীড়ের কারণ খুঁজতে। সাধারণত কাগজপত্র স্বাক্ষর, লেখানোসহ অন্যান্য কাজ থাকে দপ্তর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মকাচীদের। কিন্তু তাদের অপেক্ষায় থাকলে ফাইল পড়ে থাকে দীর্ঘদীন। কাগজ আর শিক্ষার্থীদের হাতে আসে না। আবেদন ফরম হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাও দেখা যায় অহরহ। যার ফলে বাধ্য হয়েই সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাতে হাতে কাজ করে নিতে হয়। এদিকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে যোগাযোগ করলে কেবল লোকবল সংকটের অজুহাত মেলে। একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘পলিটিকাল’ প্রচারণা চালাতে গিয়ে অনেক সময় দপ্তরগুলোতে সংশ্লিষ্ট চেয়ারগুলো ফাঁকা পড়ে থাকে। তাছাড়া কর্মচারীদের কয়েকজনের প্রমোশন হতে কর্মকর্তা হয়েছেন। এ কারণেই মূলত লোকবল সংকট।

যাইহোক। বিড়ম্বনা কমাতে স্নাতক ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে ‘অনলাইন অটোমেশন প্রিন্ট’ সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট। দেওয়া শুরু হয়। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এই দুইটি কাগজ দিতে পারছেন তারা। তবুও নাম ভুল, হলের নাম ভুল সহ বিভিন্ন বিভ্রান্তি কাটেনি। এদিকে নম্বরপত্র ও ফল প্রকাশের তারিখ এখনো দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট দপ্তরটি।

এ তো গেল স্নাতক-স্নাতোকোত্তর শেষে কাগজপত্র উত্তোলনের আলাপ। এবার আসি বর্তমান শিক্ষার্থীদের সেমিস্টার ভিত্তিক মার্কশিট উত্তোলণের কথা। আবাসিক হলে আবাসিকতার আবেদন সহ বিভিন্ন একাডেমিক কাজে এটি প্রয়োজন হয়। তাছাড়া কারো মানোন্নয়ন পরীক্ষা আছে কি-না সেটা জানতে মার্কশিট প্রয়োজন হয়। সেটি নিতে গিয়েও বিড়ম্বনা। পরীক্ষার নম্বর জানার জন্যেও সেমিস্টার ভিত্তিক ৫০ টাকা করে জমা দিতে হয়। অনেক সময় ইন্টারনেট সমস্যার অজুহাতে মার্কশিট দেওয়া বন্ধও থাকে। ফলাফল ভুল আসার ঘটনাও অহরহ।

এক শিক্ষার্থীর অভিজ্ঞতা বলি। তিনি জানান, আমি একটি সেমিস্টারের মার্কশিট নেওয়ার জন্য টাকা জমা দেই। কয়েকদিন ধরে ঘুরেও পাচ্ছিলাম না। আমাকে সংশ্লিষ্ট এক অফিসার বললেন নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে দেওয়া যাচ্ছে না। অথচ ক্যাম্পাসে সব জায়গার ইন্টারনেট (ওয়াইফাই) সচল। পরে আমি তাকে বললাম আমার মোবাইল থেকে ইন্টারনেট কানেকশন নিয়ে প্রিন্ট দেন। তাও তিনি করবেন না। জোড়াজুড়ি করার পর প্রিন্ট দিলেন। আমি আশ্চর্য হলাম। শুধুমাত্র ইন্টারনেট কানেকশনে সমস্যা থাকায় তিনি মার্কশিট প্রিন্ট দেওয়াই বন্ধ রেখেছেন।

সনদ উত্তোলন সমস্যা সমাধানে প্রস্তাবনা:

১. দক্ষ জনবল: ডিজিটাল যুগেও এনালগ পদ্ধতিতে চলে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর। এর মূল কারণই হলো দক্ষ জনবলের অভাব। কম্পিউটার সম্পর্কে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অজ্ঞতা। এই অজ্ঞতা দূরীকরণে দক্ষ জনবলের বিকল্প নেই। আর তাদের দক্ষ করে তুলতে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কর্মকর্তাদের ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ জরুরি।

২. খণ্ডকালীন চাকরি: বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ শিক্ষার্থীদের খণ্ডকালীন চাকরির কথা বলেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে ভোগান্তি কমাতে এর বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীই আইটি খাতে অনেক দক্ষ। বিভিন্ন দেশিও ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সফলতা রয়েছে।

৩. অনলাইন ফরম: এই যুগে এসেও এনালগ পদ্ধতিতে আবেদন ও কাগজপত্র উত্তোলন বড় বেমানান। বিশ্বের পরাশক্তিগুলো যেখানে প্রযুক্তিখাতে এগিয়ে যেতে পাল্লা দিচ্ছে। সেখানে এখনো হাতে লিখে ফরম জমা দিতে হয়। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো পর্যন্ত অনলাইন ফরমের মাধ্যমে সদস্য আহবান করে। বহুল প্রচলিত গুগল ফরম সহ বিভিন্ন মাধ্যমেই সহজে আবেদন করা ও আবেদন দেখা যায়।

৪. অনলাইনে ফি প্রদান: বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মাত্র ব্যাংক অগ্রণী ব্যাংকে ফি জমা দেওয়া সাপেক্ষে কাগজপত্র দেওয়া হয়। প্রথম প্রক্রিয়াই হলো টাকা জমা দেওয়া। তবে এখানেই বিড়ম্বনার শুরু। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ফি দিতে হয়। অথচ অনলাইন পদ্ধতিতে মোবাইলের মাধ্যমেই ফি দেওয়া সম্ভব। এ সংক্রান্ত অগ্রণী ব্যাংকের সাথে যৌথভাবে অ্যাপ চালু করলেও তার কার্যকারিতা নেই। কারণ সেটি মনিটরিংয়ে কোনো পদ্ধতি নেই। দ্রুত মনিটরিং ব্যবস্থা চালু করে আরো সহজ পদ্ধতিতে এই কাজ করা সম্ভব।

৫. বিভাগে বিভাগে আবেদন: সনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উত্তোলনে আরেকটি অন্যতম কারণ আবেদনের আধিক্য। সব আবেদন নিষ্পত্তি করতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। এটি সহজীকরণে বিভাগে বিভাগে আবেদন পদ্ধতি চালু করা যায়। অর্থাৎ স্নাতক বা স্নাতকোত্তর শেষে শিক্ষার্থীরা বিভাগে আবেদন করবে। পরীক্ষার ফল প্রকাশ শেষে বিভাগ নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে আবেদন সংগ্রহ করে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরে পাঠাবে। ওই দপ্তর কাগজপত্র প্রস্তুত করে আবার বিভাগে পাঠাবে। সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাগজপত্র সংগ্রহ করবে।

৬. মিনি সমাবর্তন: সমাবর্তন ব্যতীত সাধারণত শিক্ষার্থীদের মূল সনদ দেওয়া হয় না। আর ইবি প্রতিষ্ঠার ৪৬ বছরে মাত্র ৪টি সমাবর্তন হয়েছে। সমাবর্তন একটি ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। যার ফলে প্রতিনিয়ত এটি করা হয়তো কঠিন। এক্ষেত্রে অনুষদভিত্তিক প্রতিবছর মিনি সমাবর্তন করা যেতে পারে। এতে খরচ কমবে এবং শিক্ষার্থীরা উপকৃত হবে। বাইরের অনেক দেশেই এভাবে আয়োজন হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ স্যারও এরকম আয়োজনের মনোভাব ব্যক্ত করেছিলেন। সর্বশেষ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেছেন। তবে এটি বাস্তবায়নে প্রশাসন ভূমিকা রাখা প্রয়োজন।

এই ধরণের উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তরের ভোগান্তি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সক্রিয় উদ্যোগই কেবল এই ভোগান্তি দূর করতে পারে। সমস্যাগুলোর স্থায়ী সমাধান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কাছে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে বলে বিশ্বাস রাখি।

লেখা: আজাহারুল ইসলাম

শিক্ষার্থী, ল’ এন্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

spot_img
spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ প্রকাশিত

spot_img