spot_img

শিক্ষা সংস্কার ও উন্নয়ন; ডিআইইউ শিক্ষকদের ভাবনা

এসম্পর্কিত আরো পড়ুন

বাংলাদেশে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ধারায় শিক্ষার গুরুত্ব প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থীদের রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে দেশের মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াই নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বৈষম্যমুক্ত সমাজ নির্মাণের লক্ষ্যে শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। বিষয়গুলো নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইইউ) শিক্ষকদের ভাবনা ও প্রত্যাশার কথা তুলে ধরেছেন এডুকেশন টাইমস‘র ডিআইইউ প্রতিনিধি বায়েজিদ হুসাইন

উন্নত ভবিষ্যতের পথে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা

- বিজ্ঞাপন -

শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী ও মানসম্মত শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিকতা ও দায়িত্বশীলতার গুণাবলি অর্জন করা উচিত। জুলাই-আগস্টের বিপ্লব আমাদের দেশে যে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে, তার ধারাবাহিকতায় শিক্ষার্থীরা যেন সহপাঠী, শিক্ষক, পরিবার ও সমাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও আন্তরিক থেকে দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণ করে। এছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এসএমই ব্যবসা, অনলাইন ব্যবসা, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং মৎস্য খামারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। গ্লোবালাইজেশনের যুগে শুধু পাঠ্যপুস্তকে সীমাবদ্ধ না থেকে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা গ্রহণ করে শিক্ষার্থীরা গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে। আবার ড. ইউনুসের যে মতবাদ, দারিদ্রতা, অশিক্ষিতের হার ও বেকারত্বের হার শূন্যের কোঠায় আনার বিষয়গুলো নিয়ে তারা যেন গুরুত্বসহকারে কাজ করে শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার এই উদাত্ত আহ্বান থাকবে।

মো. আজমির হোসেন
চেয়ারম্যান, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ

যুগোপযোগী ও কার্যকর শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা

শিক্ষা সংস্কারের ক্ষেত্রে আমার মতে, একটি যুগোপযোগী ও কার্যকর শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যা শিক্ষার্থীদের বাস্তবজীবনের দক্ষতা অর্জনে সহায়ক হবে। পাঠ্যক্রমে গবেষণার সুযোগ, প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার এবং নৈতিক শিক্ষার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি শিক্ষকদের পেশাগত উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও উৎসাহ প্রদান এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সমতাভিত্তিক পরিবেশ নিশ্চিত করাও অপরিহার্য। এছাড়া, শিক্ষা সংস্কারের মাধ্যমে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে হবে যেখানে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ ঘটাতে পারে। বাস্তবমুখী শিক্ষা কার্যক্রম চালুর পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে দক্ষতাভিত্তিক প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা জরুরি। এতে শিক্ষার্থীরা শুধু একাডেমিক জ্ঞান নয় বরং কর্মক্ষেত্রের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারবে। এছাড়া, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ের মধ্যে সুস্থ যোগাযোগ ও মতবিনিময়ের পরিবেশ গড়ে তোলার মাধ্যমে শিক্ষার মান আরও উন্নত করা সম্ভব।

ওমর ফারুক
বিভাগীয় সমন্বয়কারী, পুরকৌশল বিভাগ

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক

বিশ্ববিদ্যালয় যে কোন মানুষের শিক্ষা এবং মুক্তচিন্তা চর্চার একটি আদর্শ ক্ষেত্র। একজন ছাত্র স্কুল-কলেজের সিড়ি পার করে সাবালক হিসেবে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পা দেয় তখন থেকেই তার জীবনে পরিবর্তনের হাওয়া বইতে শুরু করে। এমতাবস্থায় তার মানসিক, চারিত্রিক ও মনস্তাত্বিক পরিবর্তন হতে শুরু করে। আর এই পরিবর্তনের অন্যতম প্রভাবক থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকমন্ডলী। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্যি অন্যসব উন্নত দেশের মত আমাদের দেশে এই সম্পর্কটা নাজুক অবস্থায় বিরাজমান। বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। অধিকাংশ সময়ই দেখা যায় সেখানে একজন শিক্ষার্থী তার শিক্ষকদের সাথে কথা বলতেও ভয় পায়। ক্লাসে বা ল্যাবে কিছু না বুঝলে প্রশ্ন করতে ভয় পায়, যেটি দুঃখজনক। আবার অধিকাংশ শিক্ষকরা নিজেদের আলাদা এক উচ্চশ্রেণির সম্প্রদায় হিসেবে প্রকাশ করতে যেন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। যার কারণে অনেক শিক্ষার্থী তার শিক্ষকের সাথে কথা বলতেও ভয় পায়, যেটি হওয়া মোটেও উচিত নয়।

এছাড়া প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশি বেশি ওয়ার্কসপ, সেমিনার হওয়া উচিত। এতে করে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের মেধাগত উন্নয়ন করা সম্ভব। শিক্ষার্থীদের মাধ্যমেই দেশ এগিয়ে যাবে তাই তাদেরকে যথাযথ মূল্যায়ন করে তৈরি করতে হবে। এছাড়া শিক্ষকরাও যেমন শিক্ষার্থীদের আপন করে নিবে তেমনি শিক্ষার্থীদেরও উচিত শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান দেয়া।

যদিও আমাদের শিক্ষার্থীদের মন থেকে শিক্ষকদের প্রতি থাকা অজানা শঙ্কা দুর করতে আমাদের শিক্ষকদেরই এগিয়ে আসতে হবে তাদের অভিভাবক হিসেবে। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক যেন একটি মধুর, নির্ভয় ও ভাগাভাগি করার মত হয় সেই প্রত্যাশাই থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে।

তাহজিব উল ইসলাম
চেয়ারম্যান, সিএসই বিভাগ

সমতাভিত্তিক শিক্ষার প্রসার ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন

শিক্ষকদের দায়িত্ব শুধুমাত্র শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে আবদ্ধ নয়; বরং শিক্ষার্থীদের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে সাহায্য করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার প্রসারে আমাদের এমন একটি রাষ্ট্রকাঠামো বিনির্মাণ করতে হবে, যেখানে প্রাথমিক পর্যায় থেকেই শহর ও গ্রামের মধ্যে বিদ্যমান দূরুত্ব দূর করা যাবে। সকল শ্রেণি ও গোষ্ঠীর মধ্যে সমতার ভিত্তিতে উন্নত শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা হবে সর্বজনীন। সমগ্র দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে, আমাদের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উন্নত ও কর্মমুখর শিক্ষার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করার বিকল্প নেই। এছাড়াও জাতীয় পর্যায়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ সকল শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমরা সত্যিকারভাবে একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র বিনির্মানে এগিয়ে যেতে পারব।

মো: আনিসুর রহমান, 
সহকারী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ; ডিরেক্টর, সেন্টার ফর এক্সিলেন্স এন্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

এসআই/

spot_img
spot_img

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- বিজ্ঞাপন -spot_img

সর্বশেষ প্রকাশিত

spot_img