বাকৃবি প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ছাত্র ইউনিয়ন এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যাচার করেছে উল্লেখ করে প্রতিবাদ ও ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধের একদফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ।
বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুর ১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল জব্বার মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয় কে আর মার্কেট হয়ে বিভিন্ন অনুষদের করিডোর প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরীর সামনে এসে শেষ হয়।
বিক্ষোভ পরবর্তী সেখানে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে তারা গতকালকে (মঙ্গলবার) ছাত্র ইউনিয়ন এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কার্যালয়ে হামলা, ভাংচুর এবং পরবর্তীতে তাদের সংবাদ সম্মেলন, ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধের এক দফা দাবিসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কথা বলেন।
সমাবেশে মো. রাশেদুল ইসলাম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ৫ আগস্ট আমরা যখন হল রক্ষা করতে ব্যস্ত তখন তারা সমন্বয়ক কমিটির প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত। ছাত্রফ্রেন্ট মিথ্যা দাবি করছে যে তাদের কার্যালয়ে ভাংচুর করা হয়েছে। তাদের অভিযোগ তাদের কার্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা রড, রাম দা দিয়ে ভাংচুর চালিয়েছে এবং বই লুটপাট করেছে যা সম্পূর্ণরুপে মিথ্যা।
সমাবেশে অন্য একজন বক্তা বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের বই সংরক্ষণের জন্যে মোবাইলে যোগাযোগ করেছে, তারা বলেছে তারা আসছে । আমরা কাউকে বই নিয়ে যেতে দেয়নি। বরং তারাই বই সরিয়ে মিথ্যা অভিযোগ করছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা কখনও কারো রুম দখল করেনি। অথচ তারা ছাত্র ইউনিয়নের নাম ভাঙ্গিয়ে রুম দখল করেছে। আমরা গুটি কয়েক না, আমরা সব হল থেকেই ছিলাম । গুটি কয়েক আপনারা, যারা গায়ের জোর দেখানোর চেষ্টা করছেন। মূলত যারা ইসলাম বিদ্বেষ মনোভাব নিয়ে আমাদের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, তারা আমাদের দেশের শত্রু। তাদের এই ফ্যাসিবাদ মনোভাব পূর্বের সরকারকে প্রতিনিধিত্ব করে। তারা আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের হুমকি দিয়েছে। ফলশ্রুতি ওই ঘটনা ঘটেছে। তাই এর দায়ভার তাদেরকেই নিতে হবে।আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে তাদের অভিযোগ তুলে প্রকাশ্যে ক্ষমা না চাই, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সমাবেশ শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন কাউন্সিলের আহবায়ক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. খন্দকার মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করেন। শিক্ষার্থীরা দ্রুত রাজনীতি এবং মাদকমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবি জানান। অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে সম্মতি প্রকাশ করেন।
এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়ন বাকৃবি সংসদের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনেক বিষয়ের কথা গোপন করছে। আমরা বার বার বলার পরও তারা দেয়ালটি নিতে চেয়েছিলো। আমি বলছিলাম দেয়ালটি ছাত্র ইউনিয়নের। পরে মারুফ বিল্লাহর সাথে কথা বলে আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু জুনিয়র শিক্ষার্থীদের দিয়ে দেয়ালে রং করা শুরু করেছিলো। আমরা যদি তাদের কাজে বাধা দিতাম তাহলে তারা কালকে রং করা কিংবা আজকে দেয়ালে অঙ্কন করতে পারতো না। আর সাধারণ শিক্ষার্থীদের খালি হাতে ছাত্র ইউনিয়নের কার্যালয়ে হামলা করে ভাংচুর করা সম্ভব নয়। তারা হয়তো রড বা রামদা ব্যবহার করেছে বলে ধারণা করছি।
জানা যায়, গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ইসলামিক ক্যালিগ্রাফি অঙ্কন করতে যায়। পরে তাদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাকৃবি সংসদের বিরুদ্ধে। সংগঠনটির দাবি তারা দেয়ালটি আগে থেকে বুক করে রাখছিলো। কিন্তু সাধারণ শিক্ষার্থীরা দেয়ালে মুজিববর্ষের বিভিন্ন লেখা থাকায় সেটি তুলে ক্যালিগ্রাফি অঙ্কনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এই নিয়ে ছাত্র ইউনিয়নের সদস্যদের সাথে সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে ছাত্রইউনিয়নের কার্যালয়ে হামলা করে। পরে রাত ৯ টার দিকে ছাত্র ইউনিয়নসহ সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট যৌথভাবে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। পরে সংবাদ সম্মেলনে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের কার্যালয়েও হামলার কথা জানান।
/ইএইচ
মন্তব্য করুন