এডুকেশন টাইমস
১ অক্টোবর ২০২৪, ৯:৫৮ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

ভর্তি নিয়েও রেজিস্ট্রেশন হলো না একাদশ শ্রেণির ১০০ শিক্ষার্থীর

রাবি প্রতিনিধি:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শেখ রাসেল মডেল স্কুলের অনুমোদন রয়েছে মাধ্যমিক পর্যন্ত। তবে প্রথমবারের মতো একাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, বোর্ড অব গভর্নর এবং সিন্ডিকেটের অনুমোদন প্রয়োজন হলেও তা নেয়া হয়নি। শুধু শিক্ষা বোর্ডের অনুমোদন নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে ১০০ শিক্ষার্থী। যদিও কলেজ সেকশনে কোনো শিক্ষক নেই। নির্ধারিত ভর্তি ফি ও বেতন দিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও তিন মাসে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ তারিখ হলেও রেজিস্ট্রেশন হয়নি কোনো শিক্ষার্থীর। এখন চরম অনিশ্চয়তায় একাদশ শ্রেণীর প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক বলছেন, কলেজ সেকশনে কোনো শিক্ষক নেই। তিন মাস ধরে ক্লাস-পরীক্ষাও বন্ধ। সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এখনো রেজিস্ট্রেশন হয়নি। ভর্তির জন্য তারা ৫০০০ ও এক মাসের বেতন ২০০০ টাকা দিয়ে স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু ভর্তির পর থেকে তিন মাস অতিবাহিত হলেও তাদের কোনো ক্লাস নেওয়া হয়নি। যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে ভর্তি হওয়ার পরও স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, বাইরের কলেজে ট্রান্সফার করা হবে। আমাদের ভবিষ্যৎ কী হবে?

তবে স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, এবারই প্রথম বোর্ডের প্রক্রিয়া মেনে অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে ভর্তির সুযোগ পায় ১০০ শিক্ষার্থী। রেজিস্ট্রেশন নিয়ে জটিলতা রয়েছে। তবে সেটা নিরসনে আমরা সব রকমের চেষ্টা করছি।

বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুল সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শাখা খুলতে হলে প্রথমে ম্যানেজিং কমিটি, এরপর শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, বোর্ড অব গভর্নর এবং সবশেষে সিন্ডিকেটের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। কিন্তু শেখ রাসেল মডেল স্কুল ম্যানেজিং কমিটি তা না মেনে শুধু বোর্ডের অনুমতি নিয়ে একাদশ শ্রেণীতে ১০০ শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছে। ফলে এক ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে। এছাড়া কলেজ সেকশনে তাদের কোনো শিক্ষকও নেই।

এমন বাস্তবতায় ট্রান্সফার নিয়ে অন্য কলেজে ভর্তির নির্দেশ দিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে তাতে আপত্তি শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। তারা বলছেন, ট্রান্সফার যদি করিয়ে থাকে, আগে থেকে কোনো নির্দেশনা বা সমস্যাগুলো বলা হয়নি কেন। এছাড়া এখন রাজশাহীতে কোনো কলেজেই সিট ফাঁকা নেই। তাহলে আমাদের কোথায় দেবে।

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে স্কুলের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, সদ্য পদত্যাগ করা অধ্যক্ষের কারণেই কলেজ শাখার শিক্ষার্থীদের এমন অবস্থা হয়েছে। স্কুলের নামেই সমস্যা রয়েছে। শেখ রাসেল মডেল স্কুল নামের অংশে কলেজ সংযুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু কাগজপত্রে এখনো স্কুল নামই বিদ্যমান। এ কারণে কলেজের রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে কোনো কাজ করাও সম্ভব নয়।’

একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন বলেন, ‘তিন মাস ধরে অপেক্ষা করছি, ক্লাস হয় না। এখন কর্তৃপক্ষ বলছে, এখানে নাকি রেজিস্ট্রেশন হবে না, কলেজ থাকবে না। এখন আমাদের কী হবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী জানান, ‘দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করে একদম হতাশ আমরা। আমাদের তো যাওয়ার পথ নেই। স্কুল কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়তাও দিচ্ছে না যে অন্য কলেজে দিবে।’

এক অভিভাবক বলছেন, ‘এ অবস্থায় আমরা বাচ্চাদের দিকে আর তাকাতে পারছি না। এর জন্য তাদের একটা সুষ্ঠু ও সঠিক ব্যবস্থা চাই আমরা।’

সরজমিনে দেখা গেছে, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর প্রধান ফটকে শেখ রাসেলের নাম ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভাংচুর করা হয়েছে শেখ রাসেলের ম্যুরাল। স্কুল উদ্বোধনের স্মৃতিফলকও মুছে ফেলা হয়েছে।

তবে সবকিছুই ঠিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. আকতার বানু। তিনি বলেন, ‘সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে। নাম নিয়েও একটা সমস্যা রয়েছে। আমরা বোর্ডে আবেদন করেছি অনুমোদনের জন্য। তবে উচ্চ মাধ্যমিক শাখা খোলার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে প্রচলিত বিধিবিধান মানার কথা ছিল, সেটি মানা হয়নি। এ কারণে শেখ রাসেল মডেল স্কুলে কলেজ সেকশনের যে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করার কথা সেখানে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। তবে সেটা নিরসনের জন্য আমরা কাজ করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিষয়টি শিক্ষাবোর্ডকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন জটিলতার কথাও জানানো হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে একাদশ শ্রেণিতে একটি শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। কলেজটি হাওয়ার ওপরে হয়েছে। ভর্তির তিন মাস পরও একটা ক্লাস হয়নি। তারা বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ভর্তি নিয়েছে। অথচ তাদের ল্যাব নেই।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে প্রতিনিয়তই আলোচনা করছি, সমাধানেরও চেষ্টা করা হচ্ছে।’

ভর্তির সিদ্ধান্তে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের যে অনুমোদন নেই তা জানত না রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন দেয়া উচিত বলে মনে করছে বোর্ড।

এ বিষয়ে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক এনামুল হক বলেন, ‘এজন্য শিক্ষা বোর্ড নয়, বরং প্রতিষ্ঠানই দায়ী। স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে, তবে রেজিস্ট্রেশন করবে না কেন। খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে আপাতত রেজিস্ট্রেশনের কাজটা চালিয়ে যেতে হবে। না হয় পরের বছর আমরা বন্ধ করে দেব। এখন এতগুলো শিক্ষার্থীকে আমরা স্থানান্তর করব কীভাবে।’

ছবি: ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর স্কুলের প্রধান ফটকে থাকা শেখ রাসেলের নামের অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে।

 

এএকে /

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্র পুরান ঢাকা

ববি শিক্ষার্থী রবিনের ‘ষোল আনা’

ওসির কথায় উজ্জীবিত হয়ে থানায় পিস্তল নিয়ে এলো চার শিশু

কুরআন দিয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের বরণ বেরোবি দাওয়াহ সোসাইটির 

যবিপ্রবিতে বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে রিসার্চ সেলের সেমিনার

২৩ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১৭২ কোটি ৬৩ লাখ ডলার

নিয়োগ দিচ্ছে আকিজ বেকারস, থাকছে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা

বিভিন্ন কলেজ শিক্ষার্থীদের যৌথ আক্রমণ, সোহরাওয়ার্দী কলেজে ব্যাপক ভাঙচুর, পরীক্ষা স্থগিত

ইবিতে হাতেনাতে আটক দুই চোর, পুলিশে সোপর্দ

পুরো সোহরাওয়ার্দী কলেজ এখন ধ্বংসস্তূপ: অধ্যক্ষ কাকলি

১০

ইবির বঙ্গবন্ধু হলের পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করলেন উপাচার্য 

১১

অভিজ্ঞতা ছাড়াই ১৮,০০০ বেতনে চাকরি জেন্টল পার্কে, যোগ্যতা এইচএসসি পাশ

১২

খুলনা জেলা স্টেডিয়ামে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার প্রতিবাদে খুবি শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন

১৩

আমাকে স্যার বলার দরকার নেই, আমি আপনাদের ভাই: নাহিদ ইসলাম

১৪

২ দিনের আল্টিমেটাম শেষে জাবিতে রেজিস্ট্রার ভবনে তালা

১৫

ইবিতে জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার ৯৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন

১৬

পবিপ্রবিতে র‍্যাগিংয়ের শিকার হয়ে ৩ শিক্ষার্থী অসুস্থ, অভিযুক্ত ৭ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার

১৭

যেভাবে দ্রুত ১৮ হাজার কর্মকর্তা নিয়োগ দিবে সরকার

১৮

কুবি রোভার স্কাউটস গ্রুপের তাঁবুবাস ও দীক্ষা সম্পন্ন

১৯

বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ব্রিটিশ রাজা চার্লস

২০