এডুকেশন টাইমস ডেস্ক: ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন। সিনওয়ার ২০১৭ সাল থেকে গাজায় পলিটিক্যাল প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতে, গত ৭ অক্টোবরের হামলার মাস্টারমাইন্ড তথা মূল পরিকল্পনাকারী তিনিই ছিলেন।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) লেবাননের এলবিসিআই নিউজ ওয়েবসাইট সূত্রের বরাত দিয়ে তাস নিউজ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
তবে ইয়াহিয়া সিনওয়ার হামলায় নিহত হয়েছেন বলে ইসরায়েল যে দাবি করেছে, তা নিয়ে এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করেনি হামাস। এদিকে সূত্রের বরাত দিয়ে লেবাননের এলবিসিআই নিউজ ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, হামাসের নতুন প্রধান হচ্ছেন খালেদ মাশাল।
সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, খালেদ মাশাল হামাসের ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি এখন ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে আলোচনায় জড়িত মূল দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করবেন।
সূত্রগুলো বলছে, ইয়াহিয়া সিনওয়ারের নিহতের বিষয়টি ইতোমধ্যে হামাসের নেতৃত্ব তুরস্ক, কাতার ও মিসরের কর্মকর্তাদের জানিয়েছে। সেই সঙ্গে জোর দিয়ে বলা হয়েছে, সিনওয়ারের মৃত্যুর পর বন্দিবিনিময় এবং যুদ্ধ শেষ করার বিষয়ে আলোচনা ক্রমে কঠিন হয়ে উঠবে।
কে এই খালেদ মাশাল
খালেদ মাশালের জন্ম ১৯৫৬ সালের ২৮ মে। ১৯৯০ দশকের শেষের দিক থেকে হামাসের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন খালেদ মাশাল। কিন্তু তিনি অনেকটাই নিরাপদে নির্বাসনে থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। কারণ গাজায় হামাসের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গুপ্তহত্যা করে চলেছে ইসরায়েল।
২০০৪ সালের মার্চে বিমান হামলায় হুইল চেয়ার নিয়ে চলাফেরা করা ইয়াসিন নিহতের পর এক মাসের মধ্যে তার স্থলাভিষিক্ত হওয়া আবদেল-আজিজ আল-রান্তিসিকেও হত্যা করা হয়।
হামাসের অন্যান্য নেতার মতো খালেদ মাশাল ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য ইসরায়েলের সঙ্গে আরও বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা হবে কি না, সেই জটিলতায় পড়েছেন। হামাসের ১৯৮৮ সালের সনদে ইসরায়েলকে ধ্বংসের আহ্বান জানানো হয়েছে।
খালেদ মাশাল ইসরায়েলের সঙ্গে একটি স্থায়ী শান্তি চুক্তির ধারণা প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু তিনি বলেছেন, ১৯৯০ ও ২০০০ দশকে ইসরায়েলে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানো হামাস একটি অস্থায়ী সমাধান হিসেবে পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা এবং পূর্ব জেরুজালেম নিয়ে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন করতে পারে। যা হবে দীর্ঘ যুদ্ধবিরতির অংশ।
৭ অক্টোবর হামাস দ্বারা পরিচালিত আক্রমণে ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হন এবং ২৫০ জনকে গাজায় জিম্মি করা হয়। এর পরপরই ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। সেই অভিযানে এখন পর্যন্ত ৩৯ হাজারের বেশি প্রাণহানি ঘটেছে। গাজার অধিকাংশ এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে খালেদ মাশাল বলেছিলেন, ৭ অক্টোবর হামাসের হামলা ফিলিস্তিনিদের অধিকারের দাবিকে বিশ্ব এজেন্ডার কেন্দ্রে ফিরিয়ে এনেছে।
তিনি আরব ও মুসলমানদের ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগদানের আহ্বান জানান। হামাস নেতা বলেছিলেন, যুদ্ধ শেষে গাজা শাসন করা থেকে হামাসকে বাদ দিতে চায় এমন ইসরায়েলি ও মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবেন ফিলিস্তিনিরা। ফিলিস্তিনের বাসিন্দারাই সিদ্ধান্ত নেবেন কে গাজা পরিচালনা করবেন।
খালেদ মাশাল জীবনের বেশির ভাগ কেটেছে ফিলিস্তিনের বাইরে। পশ্চিম তীরের রামাল্লার কাছে সিলওয়াদে তার জন্ম। ছোটকালেই পরিবারের সঙ্গে কুয়েত পাড়ি জমান তিনি।
১৫ বছর বয়সে তিনি মুসলিম ব্রাদারহুডে যোগ দেন। এটি মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে পুরনো ইসলামি গোষ্ঠী। ১৯৮০-এর দশকে হামাস প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই গোষ্ঠীটি।
বিদেশে হামাসের হয়ে কাজ শুরুর আগে মাশাল স্কুলশিক্ষক ছিলেন। জর্ডানে তিনি আন্তর্জাতিক তহবিল সংগ্রহের দায়িত্বে ছিলেন।
গুপ্তহত্যার চেষ্টার পরে জর্ডান হামাসের কার্যালয় বন্ধ করে দেয় এবং খালেদ মাশালকে কাতারে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। ২০০১ সালে তিনি সিরিয়া পাড়ি জমান।
২০০৪ সাল থেকে দামেস্কে নির্বাসিত অবস্থায় থেকে হামাস পরিচালনা শুরু করেন মাশাল। ২০১২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি সেখানেই অবস্থান করেন। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধে দমন-পীড়ন শুরু হলে তিনি দামেস্ক ত্যাগ করেন। একসময় ইরানের সঙ্গে মাশালের সম্পর্ক উত্তেজনাপূর্ণ ছিল। বিশেষ করে ২০১১ সালে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বিরুদ্ধে সুন্নি মুসলমান নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহে সমর্থনের কারণে।
সিরিয়া থেকে তার চলে যাওয়ায় শুরুতে হামাসের মধ্যে তার অবস্থান দুর্বল করে দেয়। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে মাশাল প্রথমবার গাজা সফর করেন। ওই সময় হামাসের ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান ভাষণ দেন তিনি। ১১ বছর বয়সে পশ্চিম তীর ছাড়ার পর আর কখনো সেখানে যাননি তিনি।
তিনি বিদেশে থাকাকালীন হামাস ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী ও পশ্চিমা-সমর্থিত ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিরোধে জড়ায় ও গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয়।
ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে সমঝোতা প্রসারের প্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করে খালেদ মাশাল এবং গাজাভিত্তিক হামাস নেতৃত্বের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।
মাশাল তখন ঘোষণা করেন, তিনি এমন উত্তেজনার কারণে নেতার পদ থেকে সরে যেতে চান। ২০১৭ সালে গাজার ডেপুটি হানিয়াহকে নেতা নির্বাচিত করা হয়। ২০২১ সালে মাশাল ফিলিস্তিনি প্রবাসী হামাস কার্যালয়ের প্রধান নির্বাচিত হন।
এসএস/
মন্তব্য করুন