রাবি প্রতিনিধি:
‘তোমাকে দেখে তো হতদরিদ্র বলে মনে হয় না। তোমার বাবা এতদিন তোমাকে বাইরে রাখতে পেরেছে, আর কিছুদিন পারবে বলে আমার মনে হয়। তুমি একটু কষ্ট করে মেসেই থাকো। আগে ৫ টা জামা কিনলে এখন ২ টা কিনবা।’ চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হয়েও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রহমতুন্নেছা হলে আবেদন করে সিট না পাওয়ায় হল প্রাধ্যক্ষের কাছে গেলে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ইসমাত আরা বেগম এসব মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন এক শিক্ষার্থী।
আজ মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাহমিদা নাসরিন কনক। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রণীত আবাসিক হলে সিট বরাদ্দের নীতিমালা অনুসারে জ্যেষ্ঠতা ও একাডেমিক ফলাফলের ভিত্তিতে তার সিট নিশ্চিতভাবে হবার কথা থাকলেও তা হয়নি বলে দাবি করেছেন ওই শিক্ষার্থী।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন,গত ১৭ সেপ্টেম্বর আবাসিকতার জন্য হলে আবেদন আহবান করা হলে বিধি মোতাবেক আবেদন করি ও সাক্ষাৎকার দেই। সম্প্রতি হলে আবাসিকতা বা সিট বরাদ্দের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। অত্যন্ত হতাশাজনক ব্যাপার এই যে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রণীত হলে সিট বরাদ্দের নীতিমালা অনুসারে জ্যেষ্ঠতা ও একাডেমিক ফলাফলের দূরহ গাণিতিক হিসাবনিকাশেই হোক, কিংবা ন্যায়-ন্যায্যতার অন্য যেকোনো মানদন্ডেই হোক, আমার সিট নিশ্চিতভাবেই হবার কথা থাকলেও, তা হয়নি। হলের সিট বন্টন পদ্ধতি ও তাঁর প্রতি হওয়া বৈষম্য তুলে ধরে তিনি বলেন, নীতিমালার অনুযায়ী জেষ্ঠ্যতায় ৩৯ মেধা বিবেচনায় ৫০ ও সহ-শিক্ষা কাজে ৩ মিলে সর্বমোট স্কোর হয় ৯২। যা প্রকাশিত ফলাফল বিবেচনা করলে যা সর্বোচ্চ স্কোর হবার কথা। হলে ৮৪ নম্বর পেয়ে অন্যান্য বিভাগের জুনিয়র শিক্ষার্থীরা আসন পেলেও তাঁকে মেরিট লিস্টে দেখানো হয়নি।
হল প্রাধ্যক্ষ অসহযোগিতামূলক আচরণ ও অপমানজনক মন্তব্য করেছে দাবি করে কনক জানান, এ বিষয়ে হলে কথা বলতে গতকাল সকাল ১০ টায় হলে গিয়ে তিন ঘন্টা অবস্থান করেও প্রাধ্যক্ষের দেখা পাননি তিনি। হলের অফিসে প্রাধ্যক্ষের যোগাযোগ নম্বর চাইলেও দেয়নি। পরে বিকেল ৫টায় তাঁর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হয়। সিট বন্টনে কম নম্বর নিয়ে জুনিয়র শিক্ষার্থীরা সিট পেলেও তিনি কেন পাননি জানতে চাইলে কোনো উত্তরের পরিবর্তে তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, ‘তুমি কি আগের প্রশাসনের প্রতিনিধিত্ব করতে এসেছো?’ এর আগে আবাসিকতার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পূর্বে আর্থিক সমস্যার কথা জানিয়ে হলে সিটের জন্য সাদা কাগজে আবেদনপত্র দিতে গেলে প্রাধ্যক্ষ ভুক্তভোগীর আবেদনপত্র ফিরিয়ে দেন এবং বলেন, ‘তোমাকে দেখে তো হতদরিদ্র মনে হয় না। তোমার বাবা এতদিন তোমাকে বাইরে রাখতে পেরেছে, আর কিছুদিন পারবে। তুমি একটু কষ্ট করে বাইরেই থাকো; আগে ৫ টা জামা কিনলে এখন ২ টা কিনবা।’
সংবাদ সম্মেলনে ওই শিক্ষার্থী আরও জানান, তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সর্বোচ্চ কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। সিট বরাদ্দের এই ত্রুটিপূর্ণ তালিকা বাতিল করে স্বচ্ছতার সাথে নতুন বরাদ্দ দিতে হবে বলে দাবি জানান। সকল ধরনের বৈষম্য ও হয়রানি দূর করে আগামী ৩ দিনের মধ্যে এগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমার সিটের ন্যায্য হিস্যা না বুঝিয়ে দিলে প্রশাসন ভবনের সামনে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রহমাতুন্নেসা হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ইসমাত আরা বেগম বলেন, ‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুসরণ করে সম্পুর্ণ স্বচ্ছতার সাথে সিটের বন্টন করেছি। ওই শিক্ষার্থী আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ দিয়েছেন এগুলো মিথ্যা ও বানোয়াট। এ গুলো সব আমাকে হয়রানির উদ্দেশে করা হচ্ছে।’
আর্থিক অবস্থা ও পোশাক নিয়ে মন্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, নাউজুবিল্লাহ, আমি কেন এসব বলবো। এখন ও যদি এসব মিথ্যা বানোয়াট কথা বলে আমি কি করবো। এবিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। এছাড়া সাক্ষাৎকারের সময় শিক্ষার্থীদের অনেককেই এ কথা গুলো বলে তাদের অবস্থা জানার চেষ্টা করা হয়েছে। হয়তো তাকেও বলেছিলাম। শিক্ষার্থীদের অপমানিত করার উদ্দেশে কিছু বলা হয়নি।
এএকে/
মন্তব্য করুন