রাতুল সাহা, বুটেক্স :
ফারিহা। অষ্টম শ্রেণি পড়াকালীন শারীরিক শিক্ষার নাজমা নাহার ছিল ক্লাস টিচার। তিনি একটু রাগী স্বভাবের হলেও তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল অমায়িক। তাই ফারিহা তাঁকে বেশ পছন্দ করত। ফারিহা শ্রেণি প্রতিনিধি ছিল। একদিন দুপুরবেলা রেজিস্ট্রেশনের কাজে তাকে ম্যাডামের বাসায় যেতে হয়। না খেয়ে চলে যায় সে। কাজ থাকলে খাবারের চিন্তা বাদ দিয়ে দেয় সে। ম্যাডাম তাকে জিজ্ঞেস করলো সে খেয়েছে কিনা। ফারিহা কাজ শেষে বাসায় গিয়ে খেয়ে নিবে বললো। পরক্ষণেই ম্যাডাম উঠে রান্না ঘরে চলে গেলেন। দুপুরে তারা একসাথে খাবার খেয়ে কাজ শেষ করলো।
ফারিহা ইয়াসমিন বর্তমানে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়য়ে (বুটেক্স) ৪৮তম ব্যাচের অ্যাপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়াশোনা করছে। স্কুলজীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি তার কাছে এখনো বেশ স্পেশাল। কারণ সে ম্যাডামের কাছ থেকে তার মায়ের মত এমন ভালোবাসা ও যত্ন পেলো যেটা তার কাছে সব সময় স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মধ্যে সম্পর্ক কেমন হওয়া উচিৎ প্রশ্নের জবাবে ফারিহা ইয়াসমিন বলেন, শিক্ষা হলো জাতির মেরুদণ্ড। আর এই শিরদাঁড়াকে শক্ত ও মজবুত করে গড়ে তোলার দায়িত্ব একজন শিক্ষকের। এইজন্যই হয়ত বলে, একটি জাতিকে নির্ভুলভাবে গড়ার দক্ষ কারিগর হলেন সাধারণ একজন শিক্ষক মাত্র। একজন শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক হতে হবে শ্রদ্ধা-সম্মান, স্নেহ, শাসন, সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ।
প্রত্যয় গাঙ্গুলি বিজয় বুটেক্সে ৪৯তম ব্যাচের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইন্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী। সে সপ্তম শ্রেণীতে থাকাকালীন শাহীন নামে একজন শিক্ষক স্কুলে নতুন শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ছোটবেলা থেকে প্রত্যয় ভীষণ ফাঁকিবাজ ছিল। যার ফলস্বরূপ পরীক্ষার রেজাল্টও তত একটা ভালো হতো না তার। তবে শাহীন স্যার যখন তাদের ক্লাস টিচার হলেন তখন সে তার মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করতে লাগলো। স্যারের প্রতিটি কথা তাকে উজ্জীবিত করত। যেকোনো প্রশ্নের উত্তর স্যারের কাছ থেকে কোনো রকম বিরক্তির কারণ ছাড়া পাওয়া যেত।
একটা সময় পর অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার ফলাফল যখন প্রকাশিত হয় তখন আশ্চর্যজনকভাবে জীবনে প্রথমবারের মতো প্রত্যয় তার নাম সবার প্রথমে দেখলো। ফলাফল ঘোষণার সময় শাহীন স্যারকে সবচেয়ে বেশি খুশি মনে হচ্ছিল প্রত্যয়ের কাছে। তখন তার শিক্ষক একটি কথা বলেছিলেন, ‘রাতের আকাশে যে তারাটি অনেক উজ্জ্বলভাবে জ্বলে তার আয়ু কিন্তু কম, আর যেটা মিটমিট করে জ্বলে সেটা কিন্তু দীর্ঘক্ষণ ধরে জ্বলে থাকে’। স্যারের কথার তাৎপর্য আজও উপলব্ধি করে প্রত্যয়। শিক্ষকের শেখানো পন্থাগুলো এখনো কাজে লাগে তার।
প্রত্যয় গাঙ্গুলি প্রমথ চৌধুরীর একটি উক্তি দিয়ে কিছু কথা বলেন। বলেন, সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত। এই সুশিক্ষা অর্জনের জন্য একজন শিক্ষকের ভূমিকা অগ্রগণ্য। একজন শিক্ষক ছাত্রকে শিক্ষার পথ প্রদর্শন করতে পারেন, কৌতূহল জাগ্রত করাতে পারেন। তিনি কেবল উত্তরসাধক মাত্র। একজন শিক্ষকের মূল দায়িত্ব হলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞান অর্জনের স্পৃহা বাড়ানো, তাদের সাথে অত্যন্ত সহজ সাবলীলভাবে মিশে যাওয়া।
৪৬তম ব্যাচের টেক্সটাইল ফ্যাশন অ্যান্ড ডিজাইন বিভাগের মোহাম্মদ আহনাফ ফেরদৌস মনে করেন ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক সবসময় সহানুভূতি আর শ্রদ্ধাশীল এই দুইটি বিষয়ের উপর থাকা উচিত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে খুব কমই তা পরিলক্ষিত হয়। প্রায়শই দেখা যায় ছাত্রদের মানসিক ও অ্যাকাডেমিক সমস্যাগুলোর ব্যাপারে অনেক শিক্ষকই অবগত থাকেন না। ফলে পজিটিভ লার্নিং এনভায়রনমেন্ট তৈরি হওয়ার ঘাটতি থেকে যায়।
হয়ত কিছু শিক্ষার্থীর কাছে বিষয়টি তেমন বড় কোনো সমস্যা না, তবে অধিকাংশই এসব সমস্যার কারণে শিক্ষকদের সাথে খোলামেলা আলোচনা করতে দ্বিধাবোধ করে। তাই শিক্ষকদের উচিত ক্লাস লেকচার বাদেও তাদের সাথে যাবতীয় অ্যাকাডেমিক লাইফ নিয়ে আলোচনা করা এবং যেকোনো সমস্যায় নির্দ্বিধায় শিক্ষকদের শরণাপন্ন হতে আশ্বস্ত করা।
ইএইচ/
মন্তব্য করুন