রাজিব রায়হান, জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) শীত শেষ হতে না হতেই বেড়েছে তীব্র মশার উপদ্রব। মশার যন্ত্রণায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে ক্যাম্পাসের আবাসিক শিক্ষার্থীরা। তবে এর প্রতিকারে প্রশাসনের পদক্ষেপ দায়সাড়া বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ও বিভিন্ন হল সংলগ্ন এলাকার ঝোপ-জঙ্গল, ডোবা-নালাগুলো রয়েছে অপরিচ্ছন্ন। নালাগুলো প্লাস্টিক, পলিথিন ও কাগজে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। দীর্ঘদিন পরিছন্নতার অভাবে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। আর এসবই কাজ করছে মশার বংশ বিস্তারের নিয়ামক হিসেবে।
ফলে শিক্ষার্থীরা দিনের বেলা ক্যাম্পাসে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়ে দুঃসহ যন্ত্রণার মুখে পড়ছেন। আর রাতে হলে পড়াশোনা ও ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে। এতে মশার কামড়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী।
জানা যায়, আবাসিক হলগুলোর আশপাশের এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানের জলাশয়, ড্রেন ও ময়লা-আবর্জনাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় মশার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। মশকনিধনে বিভিন্ন আবাসিক হলে একাধিকবার স্প্রে করা হলেও মশা কমার পরিবর্তে মশার আক্রমণ বেড়ে যায়। এতে করে, দিনের পর দিন মশার উপদ্রব বেড়েই চলছে। ফলে, মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ মশা নিধনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদক্ষেপগুলো যথেষ্ট নয়। হলগুলোর আশেপাশের জলাশয়গুলো কচুরিপানা ও ময়লা আবর্জনা জমে মশা তৈরির কারখানায় পরিণহ হয়েছে। মশার এসব অভয়ারণ্যগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে সারা বছর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ে না।
এ বিষয়ে শহীদ সালাম বরকত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রুহুল ইসলাম বলেন, হলের ক্যান্টিন, ডাইনিং, লাইব্রেরি থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি জায়গায় মশার উপদ্রব বেড়েছে। শুধু রাতে না এখন দিনের বেলায়ও রুমের মধ্যে মশারি টানিয়ে রাখতে হচ্ছে।
শহীদ রফিক জব্বার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আনিসুর রহমান রাসেল বলেন, মশার আক্রমণে রুমে ঠিকভাবে থাকে পারছি না। কয়েল কিংবা অ্যারোসলে মশা তাড়ানো যাচ্ছে না। হল প্রশাসনের উদ্যোগে মশকনিধনে কয়েকবার অভিযান চালানো হলেও তা যথেষ্ট নয়। ঠিক আগের মতোই রয়েছে মশার উপদ্রব।
বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের আবাসিক শিক্ষার্থী পৌষী বিশ্বাস বলেন, আমরা সন্ধ্যার পর মশার কারণে রুমে পড়তে পারি না। তীব্র মশা উপদ্রব যেটা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এক প্রকার হলে অবস্থান করায় কঠিন হয়ে পড়েছে আমাদের জন্য। হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকবার পদক্ষেপ নেয়া হলেও মশার উপদ্রব একটুও কমেনি।
জাবি ছাত্র ইউনিয়ন সংসদের সভাপতি আলিফ মাহমুদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ব্যস্ত উন্নয়নের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ধ্বংস করে বিভিন্ন বিল্ডিং উদ্বোধনের কাজে। মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে নেই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। শুধু দায়সারা পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে। ফেব্রুয়ারি-মার্চে গরম আবহাওয়ার কারণে প্রচুর মশার জন্ম হয়। হলের আশপাশের এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানের ড্রেনগুলো পরিষ্কার না করা ও ময়লা-আবর্জনা স্তূপ হয়ে থাকায় মশার প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান সময়ে যে মশার উপদ্রব চলছে তার কামড়ে ভয়াবহ সব রোগের উপক্রমে পড়তে পারেন শিক্ষার্থীরা।
মশা দমনে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে ডেপুটি রেজিস্ট্রার (স্টেট) আব্দুল রহমান জানান, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব জায়গায় কয়েক দফায় স্প্রে করেছি। তারপরেও মশার উপদ্রব কমছে না। এখন বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে আমাদের।
প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি নিগার সুলতানা বলেন, এখন মশার উপদ্রব অনেক বেশি তাই আমরা চেষ্টা করছি প্রতিনিয়তই যাতে হলগুলো এবং অন্যান্য পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে স্প্রে করা হয়।
এ বিষয়ে বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন কিউলেক্স মশার উপদ্রব বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়গুলো দীর্ঘদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে মশার অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে এ ক্যাম্পাস। এ সময় নোংরা ঝোপ-জঙ্গল, ডোবা-নালাগুলো পরিষ্কার করে, ময়লা পানিতে নার্ভিসাইড ব্যবহার করে মশা নিয়ন্ত্রণ কারা যেতে পারে। এছাড়াও জলাশয়গুলো পরিষ্কারের পর গাপ্পি মাছ এবং অন্য প্রজাতির মাছ ছাড়লে মশা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
এসআই/
মন্তব্য করুন