এডুকেশন টাইমস
৩০ জুলাই ২০২৪, ৭:৫৯ অপরাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

ঢাকায় আহত ৬ হাজারের বেশি, আসামি দুই লাখের বেশি

ছবি: মাহমুদ জামান অভি

ডয়েচে ভেলে বাংলা: কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে রাজধানীতে সংঘর্ষ ও সংঘাতে ৬ হাজার ৭০৩ জন আহত হয়েছে বলে জানাচ্ছে দৈনিক প্রথম আলো৷ আহতরা ৩১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বলেও প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে৷ প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, এসব রোগী ১৬ থেকে ২২ জুলাইয়ের মধ্যে হাসপাতালে গেছেন৷

ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার প্রথম আলো জানায়, তাদের প্রতিনিধিরা ২৩ থেকে ২৭ জুলাই রাজধানীর মোট ৩৮টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন৷ এর মধ্যে সরকারি হাসপাতাল ৯টি, বাকি ২৯টি বেসরকারি হাসপাতাল৷

বেশি মানুষ হাসপাতালে গেছেন ছররা গুলি, রাবার বুলেট বা বুলেটবিদ্ধ হয়ে৷ এছাড়া ইটপাটকেল ও লাঠি বা রডের আঘাতে আহত হয়ে কিছু মানুষ হাসপাতালে গিয়েছিলেন৷ আবার কেউ কেউ গেছেন কাঁদানে গ্যাসের কারণে অসুস্থ হয়ে৷

সংঘর্ষে আহত সবচেয়ে বেশি মানুষ চিকিৎসা নিয়েছেন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান বা পঙ্গু হাসপাতালে৷ ২৩ জুলাই হাসপাতাল থেকে সংগৃহীত তথ্যে দেখা যায়, এই হাসপাতালে ১৭ থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত ১ হাজার ২৬৯ জন চিকিৎসা নেন৷ এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ ছিলেন ২৩১ জন৷ হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয় ৫৩৭ জনকে৷ অর্থাৎ এই হাসপাতালে আসা ৪২ শতাংশ রোগীকে ভর্তি রেখে চিকিৎসার দরকার ছিল৷

২৩ জুলাই বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে জানান, ওই প্রতিষ্ঠানে মোট ১ হাজার ৭১ জন চিকিৎসা নিয়েছেন৷

১৫০ মৃত্যুর বিশ্লেষণ

কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী বিক্ষোভ-সংঘর্ষে বেশি মৃত্যু হয়েছে শিক্ষার্থী ও শ্রমজীবী মানুষের৷ নিহত ব্যক্তিদের ৭৫ শতাংশ শিশু, কিশোর ও তরুণ৷ হাসপাতাল, স্বজন ও মরদেহ নিয়ে আসা ব্যক্তিদের সূত্রে সংঘর্ষ-সংঘাতে এখন পর্যন্ত ২১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে৷ এর মধ্যে বয়স, পেশা ও আঘাতের ধরন এবং কোন এলাকায় আহত অথবা নিহত হয়েছিলেন, তার বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে ১৫০ জনের৷ এর মধ্যে ১১৩ জন শিশু, কিশোর ও তরুণ৷

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নিহতদের বেশির ভাগের শরীরে প্রাণঘাতী গুলির ক্ষতচিহ্ন ছিল৷ ছররা গুলি বা প্যালেট, রাবার বুলেটের ক্ষতচিহ্ন৷ অন্যান্য আঘাত কম৷ অনেক ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত হয়েছে, তবে প্রতিবেদন তৈরি হয়নি৷ অনেক ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত ছাড়া লাশ স্বজনেরা নিয়ে গেছেন৷

বিশ্লেষণে দেখা যায়, নিহতদের মধ্যে ১৯ জন শিশু ও কিশোর৷ এর মধ্যে চার বছর বয়সি শিশুও রয়েছে৷ ১৮ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে ৯৪ জন৷ ৩০ থেকে ৩৯ বছর বয়সি ২১ জন৷ ৪০ বা এর বেশি বয়স ১৬ জনের৷

১৫০ জনের মধ্যে দোকান, হোটেল, বিক্রয়কেন্দ্র ইত্যাদির কর্মী ২৫ জন, দোকানদার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও হকার ১৬ জন, দিনমজুর ও সমজাতীয় পেশায় রয়েছেন ১১ জন, গাড়ি, ট্রাক, রিকশা-ভ্যানচালক ও সহকারী ১৩ জন এবং পোশাক কারখানার শ্রমিক ও কর্মী ৫ জন৷ চাকরিজীবী ও অন্যান্য পেশায় রয়েছেন ২৭ জন৷ এর মধ্যে একজন চিকিৎসক৷

বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, শ্রমজীবী মানুষেরা দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও অন্যান্য আর্থসামাজিক কারণে বিক্ষোভে নেমেছিলেন৷ বাংলাদেশে প্রায় দেড় বছর ধরে মূল্যস্ফীতি চড়া, ১০ শতাংশের কাছাকাছি৷ নিহতের মধ্যে তিনজন পুলিশ সদস্য ও একজন আনসার সদস্যও রয়েছেন৷ সাংবাদিক মারা গেছেন চারজন৷

ঢাকায় আসামি লাখের বেশি

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় দায়ের করা হয়েছে প্রায় ২০০ মামলা৷ এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ২ লাখ ১৩ হাজারেরও বেশি মানুষকে; যাদের অধিকাংশই অজ্ঞাত৷

প্রায় সব মামলাই পুলিশের দায়ের করা৷ নথি থেকে জানা যায়, অন্তত ১৬টি মামলার আসামি ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার মানুষ৷ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৫০টি থানায় গতকাল পর্যন্ত ২২৯টি মামলা হয়েছে৷ গত ১৭ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ১৭৮টি মামলা সংক্রান্ত নথি হাতে পেয়েছে ডেইলি স্টার৷ এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ২ লাখ ১৩ হাজার ৮৩৪ জন৷ এর মধ্যে নামীয় আসামি মাত্র ১ হাজার ৩১০ জন। বাকি ৫১টি মামলায় কতজন আসামি তা জানা যায়নি৷

মামলায় অজ্ঞাত আসামি মানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যাকে খুশি তাকে গ্রেপ্তারের সুযোগ থেকে যাওয়া৷ পুলিশ ৬০টি মামলায় কোনো আসামির নাম বা নম্বর উল্লেখ করেনি এবং অন্তত দুটি মামলায় অজ্ঞাতনামা ১০ হাজার জনকে আসামি করেছে৷ এই দুই মামলার একটি হয় গত ১৮ জুলাই মেরুল বাড্ডায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সহিংসতার ঘটনায়৷ অপরটি গত ২১ জুলাই আজিমপুরে নাশকতার ঘটনায় লালবাগ থানায় মামলা করা হয়৷ আসামিরা অজ্ঞাতনামা বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মী৷

গত ১৯ জুলাই মিরপুর-১০ মেট্রো স্টেশনে ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ৯ হাজার জনকে আসামি করে মামলা করেছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ৷ এছাড়া একটি মামলার আসামি আট হাজার, দুটি মামলায় সাত হাজার, ছয় হাজার আসামির বিরুদ্ধে সাতটি ও পাঁচ হাজার আসামির বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করা হয়েছে৷ আসামিদের বেশিরভাগের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে জমায়েত, দাঙ্গা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা এবং সম্পদের ক্ষতি করার অভিযোগ আনা হয়েছে৷

১৭ জুলাই থেকে ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে গতকাল অন্তত ১৫৮টি মামলায় গতকাল ৯৮ জনসহ ২ হাজার ৫০৬ জনকে আদালতে হাজির করে পুলিশ৷

এসআই/

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডিএমআরসি তে জিম্মি শতাধিক শিক্ষার্থী,গুরুতর আহত ৫০

লাখ টাকার লোভ দেখিয়ে শাহবাগে জনসমাগম করার নেপথ্যে কারা?

প্রথম আলো-ডেইলি স্টার ‘পুড়িয়ে’ নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সামনে বিক্ষোভ

জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য সংস্থায় চাকরি, কর্মস্থল কক্সবাজার

গণ বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত 

ঢাকায় সমাবেশে নিতে কোটি টাকা সুদমুক্ত ঋণের প্রলোভন

ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলে বাধা নেই: হাইকোর্ট

শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ বন্ধ ঘোষণা

বর্ণাট্য আয়োজনে আয়োজনে ইবির ৪৬ তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন

মোল্লা কলেজের ৩ শিক্ষার্থী নিহত, দাবি কলেজ কর্তৃপক্ষের

১০

জবিতে চূড়ান্ত ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, জানা গেলো খরচসমূহ

১১

জবি এআইএস ডিবেট প্রিমিয়ার লীগ ২০২৪ এর ফাইনাল অনুষ্ঠিত

১২

জাবিতে শিক্ষার্থী মৃত্যুর মামলায় অভিযুক্ত রিকশাচালকসহ ৩ জনকে পুলিশে সোপর্দ

১৩

শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘিরে হামলা-পাল্টা হামলা; নেপথ্যে কী ছাত্রদল?

১৪

বুটেক্সের হলে ছাত্রলীগ, প্রতিবাদ করায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা

১৫

সোমবার ঢাকা কলেজের সব ক্লাস বন্ধ

১৬

মেঘনা গ্রুপে আকর্ষণীয় বেতনে চাকরির সুযোগ

১৭

বুটেক্স শিক্ষার্থীদের উপর ঢাকা পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের হামলা, আহত অর্ধ শতাধিক

১৮

পলিটেকনিক-বুটেক্স শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, আহত ২৮ জন ঢামেকে

১৯

বুটেক্স ও ঢাকা পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ

২০