রাবি প্রতিনিধি:
কলকাতায় নারী চিকিৎসক মৌমিতাকে ধর্ষণ ও খুনের প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসা ভারতীয় শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে গণসংহতি ও মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এসময় রাজশাহী নগরীর ধর্ম-বর্ণ ও সকল শ্রেণী পেশার মানুষ এতে অংশ নেন।
শুক্রবার (১৬ আগস্ট) রাতে সাড়ে ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে মোমবাতি হাতে এ কর্মসূচি করেন তারা। এসময় মৌমিতার জন্য এক মিনিট নিরবতা পালন করে শিক্ষার্থীরা।
আইন বিভাগের ১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী সানজিদা রহমান বলেন, এখন আমাদের পড়ার টেবিলে থাকার কথা কিন্তু আমার বোন মৌমিতার বিচারের দাবিতে এখানে দাঁড়িয়েছি। যেখানে মৌমিতার নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তার পক্ষে অবস্থান কর্মসূচি না করে বরং সেখানে তারা নিশ্চুপ ভুমিকা পালন করেছে। কিন্তু মৌমিতার অনেক বাংলাদেশী বোন তার ধর্ষনের সাথে জড়িতদের বিচারের দাবি চেয়ে অবস্থান কর্মসূচি ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করছে। আমরা চাই ভারত প্রশাসন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি দিক। এছাড়াও বাংলাদেশে তনুসহ যেসব ধর্ষনকান্ড ঘটেছিল সেগুলোকে আবারও তদন্তের আওতায় এনে দোষীদের খুঁজে বের করা হোক।
রাজশাহী ভদ্রা এলাকার পারভিন নামের এক নারী বলেন, রাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এ আয়োজনের কথা শুনে আমি ঘরে বসে থাকতে পারিনি। মৌমিতার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা আর কোন নারীর সাথে না ঘটুক। তাকে কত পাশবিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে সেটি আমরা সকলেই ইতোমধ্যে জেনেছি। বাংলাদেশকে নতুনভাবে স্বাধীন করেছে ছাত্র সমাজ সেই স্বাধীন বাংলাদেশে কোন ধর্ষকের ঠাই হতে পারে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ আবেদীন আকাশ বলেন, এদেশের ছাত্র সমাজ এখন স্বাধীন। অন্যায় দেখলেই তারা প্রতিবাদ করতে রুখে দাঁড়াবে। ভারতে মৌমিতার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে আমরা এখানে অবস্থান নিয়েছি। ভারতে ভাইবোনরা আমাদের চলমান আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল এখন আমরা তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই। এছাড়াও মৌমিতার ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনার জন্য বাংলার ছাত্র সমাজ ভারতীয় শিক্ষার্থীদের পাশে আছে এবং থাকবে।
রাবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মেহেদী সজীব বলেন,
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী কর্তৃক যে ধর্ষনকান্ড ঘটেছিল তা আমরা এখনো ভুলে যায়নি। সেই ছাত্র সংগঠনকে আমরা বাংলার জমিন থেকে বিতাড়িত করতে পেরেছি। ছাত্র সমাজের হাতে মুক্ত হওয়া এই বাংলার মাটিতে আর কোন ধর্ষন আমরা দেখতে চাইনা। তনুসহ আরও যারা আছেন তাদের ধর্ষকরা এখনো বাংলার মাটিতে মুক্তভাবে বিচরণ করছে। আমরা তাদেরকে আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা পোষণ করে আন্দোলনে অংশ নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন খান। তিনি বলেন, আমি নিরবতা পালনকালে ভাবছিলাম যে ডাক্তার সমাজের উপকার করে থাকে, সেই ডাক্তার মৌমিতা যখন কাজ শেষে ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় যায় তখন তাকে ধর্ষন করা হয়। বাসা হচ্ছে সবথেকে নিরাপদ জায়গা সেখানেও মৌমিতা রক্ষা পায়নি। বাংলাদেশে শহীদ হওয়া শিক্ষার্থীদের রক্তের দাগ না শুকাতেই পার্শবর্তী দেশ ভারতে আমার মেয়ের উপরে এমন ধর্ষনের ঘটনা ঘটেছে। মৌমিতার ধর্ষকদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।
এসময় গণসংহতি ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলনে প্রায় দুই হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও উপস্থিত ছিলেন।
/ইএইচ
মন্তব্য করুন