বাকৃবি প্রতিনিধি: বন্যাদুর্গত অঞ্চলে অসুস্থ প্রাণীদের চিকিৎসায় বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীদের একটি দল। এ ক্যাম্পেইনে তৃতীয় বর্ষ থেকে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ৯ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থানীয় শিক্ষার্থীরাও এ উদ্যোগে অংশ নেন।
জানা যায়, বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) দিনব্যাপী এ ক্যাম্প পরিচালিত হয়। শিক্ষার্থীরা প্রায় ৩০০ জন খামারির পশুদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা এবং ওষুধ বিতরণ করেন। ক্যাম্পে প্রায় ১০০টি গরুকে তড়কা ও বাদলা রোগের ভ্যাকসিন এবং ৫০টি ছাগলকে পিপিআর ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীরা একটি খামার পরিদর্শন করেন এবং খামারিদের প্রাণী স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ দেন।
একজন খামারি ক্যাম্প সম্পর্কে বলেন, “বর্তমানে একটি প্রাণীর চিকিৎসার জন্য প্রায় হাজার টাকা লাগে, যা একজন সাধারণ কৃষকের পক্ষে বহন করা কঠিন। অনেক সময় ভুল ধারণার কারণে গবাদিপশু মারা যায়, এতে বিনিয়োগের সমস্ত অর্থ নষ্ট হয়। কিন্তু আজকের এই ক্যাম্পে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ পেয়ে আমরা খুবই আনন্দিত।”
এই মেডিকেল ক্যাম্পেইনটি পরিচালিত হয় মেড কোয়ালিশন, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেস, ক্যালিফোর্নিয়া ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল ফ্রেন্ডশিপ কর্পোরেশন এবং ইন্টিগ্রেটেড রুরাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইআরডিএস)-এর আর্থিক সহায়তা ও সার্বিক সহযোগিতায়।
ক্যাম্পে উপস্থিত ছিলেন শেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. এবিএম আব্দুর রউফ এবং শ্রীবরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মেহেদী হাসান। এ সময় স্থানীয় প্রতিনিধি এবং খামারিরাও উপস্থিত ছিলেন।
ডা. এবিএম আব্দুর রউফ বলেন, “আপনাদের গবাদি পশু অসুস্থ হলে সাধারণত উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে নিয়ে যেতে হয়, যেখানে কিছু ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হলেও অধিকাংশ ওষুধ কিনতে হয়। কিন্তু আজকের এই ক্যাম্পে শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা এবং ওষুধ প্রদান করছেন। দেশের অর্থনীতিতে প্রাণিসম্পদ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, আর মেধাবী জাতি গঠনে দুধ, ডিম ও মাংসের কোনো বিকল্প নেই। এই ক্যাম্পের উদ্দেশ্য হলো প্রাণিসম্পদের অকাল মৃত্যু প্রতিরোধ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা।”
শ্রীবরদী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মেহেদী হাসান বলেন, “প্রাণিসম্পদ চিকিৎসার জন্য আগে উপজেলা অফিসে যেতে হতো, কিন্তু এখন আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণরা আপনাদের ঘরে এসে বিনামূল্যে সেবা দিচ্ছেন। আমরা এই তরুণদের থেকে নতুন কিছু শিখতে পারছি।”
ক্যাম্পে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা জানান, “অসুস্থ প্রাণী ও মানুষের সেবার ব্রত নিয়ে আমরা এই পেশায় এসেছি। আজকের ক্যাম্পে অংশগ্রহণ করে মানুষের সমস্যার সমাধান করতে পেরে আমরা নিজেদের সার্থক মনে করছি এবং এর মাধ্যমে আমাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য ফেনী জেলায় একটি ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করা।”
এসএস/
মন্তব্য করুন